শেষ হলো চার দিনব্যাপী ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। এবারের বইমেলার শেষ দিন – গত ২৬ মে সোমবার রাতে নিউইয়র্কের কুইন্সে জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে সাহিত্যপ্রেমী, বিশেষ করে বইপ্রেমী, লেখক ও প্রকাশকের মিলনমেলা ঘটেছিল।
নিউইয়র্ক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে গত ২৩ মে শুক্রবার শুরু হওয়া এই উৎসবে ২৫টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে এবং তিন হাজারের বেশি নতুন ও পুরাতন বই প্রদর্শিত হয়।
বই মেলায় লেখক আড্ডা, কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ নানা কর্মসূচি ছিল। এ আয়োজনে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখকরা উপস্থিত ছিলেন এবং পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
২৩ মে শুক্রবার অপরাহ্নে এবারের বইমেলা উদ্বোধন করেন ঢাকা থেকে আগত এ সময়ের বিপুল জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন বন্ধু ফিলিস টেইলর। তার প্রয়াত স্বামী রিচার্ড টেইলর ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরোধ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে গোপনে অস্ত্র পাঠানোর বিরুদ্ধে এ প্রতিরোধ আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
উদ্বাোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ফিলিপ টেইলর বলেন, আমি যখন এই মঞ্চে আলো দেখি আমি দেখতে পাই সেই আলোকিত মানুষদের যাঁরা ৭১ সালে একটি জাতির জন্যে কাজ করেছিলেন। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যাঁরা আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনারা জানেন আমার স্বামী রিচার্ড টেইলর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ বøক করার জন্যে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। এবং এই নিয়ে তিনি একটি ‘বøকেড’ নাম দিয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন। আজ তিনি নেই কিন্তু এটা পরিস্কার যে তিনি আমাদের সঙ্গে আজ এই এখানেই আছেন। তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করছি।’
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, ভাষাতাত্তি¡ক ও অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহানসহ আরো অনেকে।
রেহমান সোবহান বলেন, এটি খুব আনন্দের জন্যে যে এখানে আজ আমি উপস্থিত হয়েছি যেখানে ফিলিস টেইলর উপস্থিত আছেন। তাঁকে এবং তাঁর স্বামী রিচার্ডকে অন্তঃস্থল থেকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আন্তরিকভাবে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা ৩৪তম আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করছেন। এটি আমাদের ভঙ্গুর এবং ক্ষীয়মান সংস্কৃতিকে মজবুত করতে সাহায্য করবে।’
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক বলেন ‘বইমেলা জিনিসটা আমার কাছে অন্যরকমের। আমার খুব প্রিয় জিনিস। আমি কোথাও যাই না। কিন্তু বইমেলার কথা শুনে আমি ছুটে আসি। আমার মার কথা খুব মনে হচ্ছে। তিনি বীরাঙ্গনাদের জন্যে অনেক কাজ করেছেন। ১৯৭৩ সালে আমরা মার সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলাম। আমার এক অসাধারণ সময় কেটেছে। আমার বাবা তখন ঢাকায় উচ্চ সরকারি চাকুরে কাজ করতেন।
ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম তার আবেগী কণ্ঠে অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে ‘মুক্তধারার এই আন্তর্জাতিক বইমেলায় আমি এসে খুব আনন্দিত। এখানে আগেও এসেছি। দেখতে পাই কি সুন্দর শাড়ি আর পাঞ্জাবী পরছে। এসব দেখে আমারও খুব লোভ হয়। আজ অনেক ঘটনাই আমার জমা আছে। তার মধ্যে থেকে একটা ঘটনা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। রাত্রি বেলা হারিকেন দিয়ে আমরা অপারেশন করতাম। একদিন হলো যে দেখি হারিকেনে তেল নাই। ডাক্তার জাফারউল্লা বললেন- ডা. সিতারা আপনাকে তেল আনতে উদয়পুর যেতে হবে। ৪০ কিলোমিটার দূরে। সে এক অসাধরণ অভিজ্ঞতা।’
একইভাবে ড. রওনক জাহান তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন ‘দু বছর পর বইমেলায় আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এক সময় প্রচুর আসতাম। এখন আবার আসলাম। বিশ্বজিত যে ৩৪ বছর ধরে এমন একটি অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে এবং এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হচ্ছেন তাদের সবার প্রতি আমার অভিনন্দন। শুধুমাত্রই ভলেয়ন্টার হয়ে এই বইমেলাকে যেভাবে নিজেদের অর্থায়নে এই বইমেলা এগিয়ে যাচ্ছে সেটি অসাধারণ। সবাইকে অনুরোধ করব বই কিনুন। আর বাংলাদেশের বাইরে বাংলা বইয়ের অনুবাদ করে ইংরেজিতেও অনুবাদ করতে হবে। আমি প্রকাশকদের অনুরোধ করব বাংলাদেশে এবং উত্তর আমেরিকা দু এলাকায় মিলে আমরা যেন এই কাজটি করতে পারি। আশা করি প্রকাশকরা এই বিষয়টি ভেবে দেখবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বইমেলার আহবায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রোকেয়া হায়দার, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহা, ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কো-চেয়ারপারসন ড. নজরুল ইসলাম ও সউদ চৌধুরী, উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া ও সিনিয়র সদস্য ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, সাংবাদিক ও বিতার্কিক বিরূপাক্ষ পাল, আবু সাঈদ খান, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, প্রকাশক মনিরুল হক, লেখক ও প্রকাশক, হুমায়ূন কবীর ঢালী, প্রকাশক আলমগীর সিকদার লোটন, প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, প্রকাশক জসিম উদ্দিন, প্রকাশক সজল আহমেদ, কবি দীপঙ্কর দাশ, প্রকাশক মাহবুবুল হাসান ফয়সল, প্রকাশক, লেখক ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক আহমেদ, লেখক ও সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী, টরন্টো থেকে আগত লেখক ও সাংবাদিক জসিম মল্লিক, লেখক ও সাংবাদিক অভীক সারোয়ার রহমান, টরন্টো থেকে আগত লেখক ও সাংবাদিক নজরুল মিন্টো, লেখক আব্দুল্লাহ জাহিদ, কবি জাফর আহমদ রাশেদ, কবি মঈনউদ্দিন মুনশী, গীতিকবি ও লেখক জীবন চৌধুরী, শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা, কথাসাহিত্যিক পারমিতা হিম, ইউএনডিপি নাজনীন আহমেদ, কথাসাহিত্যিক ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ফেরদৌস সাজেদীন, কো-চেয়ারপারসন,সউদ চৌধুরী ও গোলাম ফারুক ভূঁইয়া এবং সিনিয়র সদস্য ডা. ফাতেমা আহমেদ, অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, লেখক ও সাংবাদিক বিরূপাক্ষ পাল, ঢাকার দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, লেখক ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত,১ ৯৯২ সালে ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ও ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’–এর যৌথ উদ্যোগে এ বইমেলার সূচনা হয়। পরে মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও এর পর থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এককভাবে দায়িত্ব নিয়ে বইমেলাটি সফলভাবে পরিচালনা করছে। এই সংগঠনের সঙ্গে শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক ও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা যুক্ত রয়েছেন।
আয়োজকদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী এ বছর ৩০টিরও বেশি স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা বইমেলায় অংশ নিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক লেখক ও প্রকাশক নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারো দর্শনার্থীদের জন্য আছে নানা বইয়ের সমারোহ, সাহিত্যচর্চার পরিবেশ ও উৎসবের আমেজ।
রবিবার ২৫ মে মেলার তৃতীয় দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল একাধিক পুরস্কার ঘোষণার খবর। এ বছর নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। তিনি একজন ভারতীয় বাঙালি। তিনি একাধারে ভাষাতাত্তিক, পন্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। এ পুরস্কারের অর্থ মূল্য তিন হাজার ডলার। গতবছর এই পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষ বাংলাদেশী-আমেরিকান মালিকানাধীন আমেরিকার শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জিএফবি গ্রুপ এ পুরস্কার প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট গোলাম ফারুক ভূইয়া মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা।
এবার নিউইয়র্ক মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও নিউ ইয়র্ক বইমেলার সাবেক আহবায়ক ড. আবদুন নূর।
ছুটির দিন ২৪ মে শনিবার ও ২৫ মে রোববার বইমেলায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না। মেলার সবুজ প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছিল বাংলা ভাষাভাষীদের মিলন মেলায়।
এবারের মেলায় নতুন বইয়ের অনুষ্ঠান ছাড়াও বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের গান শ্রোতাদের গভীর রাত পর্যন্ত মুগ্ধ করে রাখে।
গত ২৫ মে রোববার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রিন্ট সংস্করণে বইমেলা নিয়ে ‘এ ফেস্টিভাল অব ওয়ার্ডস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় শত শত মানুষের সমাবেশকে পত্রিকাটি আনন্দ-উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২৪ মে শনিবার দ্বিতীয় দিনেও ছিল মেলায় উপচে পড়া ভীড়। আর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানগুলো ছিল নজর কাড়ার মতো।
অনুষ্ঠান শুরু হয় নিরুপমা রায়ের পরিচালনায় শিশু কিশোরদের অনুষ্ঠানমালা দিয়ে। অভিবাসী আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠা এই বাঙালি আমেরিকান প্রজন্মদের পরিবেশনা দেখে সত্যি প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এর পরপরই শুরু হয় মঈনউদ্দিন মুনশীর সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতার জমজমাট আসর। অনুষ্ঠিত হয় আদনান সৈয়দের সঞ্চালনায় নতুন বই নিয়ে আলোচনা।
শুধুমাত্র অভিবাসী লেখকদের ২০২৫ সালে প্রকাশিত নতুন বইয়ের পরিচিতি নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হতে দেখে আমি সত্যি অভিভূত! এখানে না এলে আমার এই অভিজ্ঞতাটি হতো না। তাঁদের এই শ্রম তখনই স্বার্থক হবে যদি আমরা তাঁদের বই পড়ি এবং এর যথাযথ মূল্যায়ন করি।’ ’দেশ বিদেশের তথ্য মাধ্যম কেন গুরুত্বপূর্ণ?’ এই নিয়ে খুব জরুরী এবং তথ্যবহুল একট্ অনুষ্ঠান হয়েছে। উপস্থাপনায় ছিলেন অধ্যাপক শামীম রেজা।
নিউইয়র্ক মুক্তধারা আয়োজিত বইমেলা অনুষ্ঠানের বরাবরের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ। ২৪ মে শনিবার অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ক্যাপ্টেন(অব:) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. আবিদুর রহমান এবং ফেরদৌস নাজমী। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
আমেরেকায় বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মদের হাত দিয়ে তৈরি অপ্সরা বণিকের পরিবেশনায় সঙ্গীতসূধা উপস্থিত দর্শকদের প্রাণ ছুঁয়ে দেয়। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর নানা দেশে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে এর প্রতিবাদেই ছিল এই পরিবেশনা। ছিল লেখক পাঠক মুখোমুখি অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন দুই প্রজন্মের দুই নন্দিত লেখক, প্রাবন্ধিক, গদ্য লেখক ড. আবদুন নূর এবং কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুস্তাফিজ শফি।
এবার বইমেলাকে সাজানো হয়েছিল বহির্বিশ্বে বাংলাকে গুরুত্ব দিয়ে। ‘বিশ্ব বলয়ে বাংলা’ এই অনুষ্ঠানটি সেদিক থেকে ছিল অনেক ইতবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আলোচানয় অংশ নেন আবু সাঈদ খান, অধ্যাপক ড. শামীম রেজা এবং মঈনউদ্দিন মুনশী। উপস্থাপনা করেন অভীক সারোয়ার রহমান।
২৪ মে শনিবারের আরেকটি দর্শক নন্দিত অনুষ্ঠান ছিল সাংবাদিক রোকেয়া হায়দারের সঞ্চালনায় পক্ষ বিপক্ষ বিতর্ক ‘প্রবাস জীবন অসম্পূর্ণ’। অসাধারণ প্রাণবন্ত এই অনুষ্ঠানটি ছিল উপভোগ্য। কারণ এই প্রবাস জীবন একদিকে মধুর আবার বেদনারও। এই প্রবাস অনেক কিছু যেমন দেয় আবার অনেক কিছু কেড়েও কিন্তু নেয়। সঞ্চালক রোকয়া হায়দারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা, উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের অকাট্য যুক্তি এবং উপস্থিত দর্শকদের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ততা সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় দিন বইমেলার অন্যতম প্রাণ।
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবীর গানের অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে মুক্তধারা আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার অনুষ্ঠান দ্বিতীয় দিনের পর্দা নামে।
২৫ মে রবিবার তৃতীয় দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। প্রবাসী জীবনের সকল দুঃখ ও বিভেদ ভুলে বাঙালি, নন-বাঙালি সমবেত হয়েছিল জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে। তৃতীয় দিনের উৎসবের আনন্দ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে। বাঙালির সৌরভ ও গৌরব মহিমান্বিত হয়ে উঠে।
মেলার তৃতীয় দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল আয়োজক কর্তৃক একাধিক পুরস্কার ঘোষণা। মুক্তধারা-জেএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫, মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা ২০২৫ এবং চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার ২০২৫- এই তিনটি পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় আগত বাঙালির মুখচ্ছবি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
২৬ মে সোমবার চতুর্থ দিন: বইমেলার চতুর্থ দিনটি ছিল শিশু, কিশোর ও যুবদের জন্য এক আনন্দঘন ও রঙিন দিন। ‘শিশু-কিশোর-যুব উৎসব’ শিরোনামে দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক পর্বে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শতাধিক অংশগ্রহণকারী তাদের প্রতিভার ঝলক দেখায়। দিনের শুরুতেই রং-তুলিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীল ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এরপর একে একে মঞ্চে স্থান পায় নৃত্য, গান ও আবৃত্তির নানা পরিবেশনা।
সৃজনশীল লেখালেখি পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক বদরুজ্জামান আলমগীর এবং জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা। এই পর্বে চারুলতা সৈয়দ, ভাষা সাহা, পূর্ণা দে, পূর্ণতম সাহা পূর্ণা এবং লিয়ানা মানহা অংশগ্রহণ করেন, যারা তাদের কল্পনার জগৎকে শব্দে শব্দে গাঁথেন।
কবিতা পাঠ পর্বে শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে উঠে আসে স্বপ্ন, প্রকৃতি, দেশপ্রেম ও ভালোবাসার নানা রঙ। অংশগ্রহণ করেন চারুলতা সৈয়দ, ভাষা সাহা এবং পূর্ণতম সাহা পূর্ণা।
নৃত্যানুষ্ঠান ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ পরিবেশন করে কুইন্স গ্রæপ। এরপর একে একে পরিবেশিত হয়: ‘রবিঠাকুরের গানের সাথে নৃত্য’। নৃত্যাঞ্জলি’র শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘নূপুরের তালে তালে’। পরিবেশনায় আড্ডা। ‘নূপুরের ঝংকার’ পরিবেশনায় ছিল মায়া ও তার দল‘। কথক নৃত্য’ পরিবেশন করেন এলিস হাওলাদার।
একক নৃত্য রবিঠাকুরের গানে ভাষা সাহার অপূর্ব উপস্থাপনা। দূর্গা ও পূর্ণার যুগল নৃত্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। কবিতা ও গান পর্বে অংশ নেয় সুতপা ও তার দল, শিশু-কিশোর ও তদূর্ধ্ব সংগঠন।
গানের পরিবেশনায় ছিল বিশেষ কিছু মুহূর্ত, বেহালায় প্রজ্ঞাত্তম সাহা প্রজ্ঞার সুরের জাদু, সমবেত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন রাশা মিউজিক একাডেমির শিল্পীরা। ‘রুমঝুম রুমঝুম’ পরিবেশন করেন অপ্সরা ও তার দল।
‘গানের ভেলায় বেলা অবেলায়’ স্মৃতিময় গানে ভেসে ওঠে বিকেল। গিটারের সাথে গান অর্জুন দত্তের মেলোডি দর্শকদের হৃদয়ে দোলা দেয়। ফোক গান পরিবেশন করেন অহনা হাওলাদার।
‘পাঠকের মুখোমুখি’ পর্বে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন, যাঁর সঙ্গে শিশু-কিশোর পাঠকদের সরাসরি মতবিনিময় আয়োজনটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
উৎসবের সমাপ্তি ঘটে ‘অনুরোধের আসরে গান’ দিয়ে। এতে অংশগ্রহণ করেন শোভিত রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণা তিথি, যারা দর্শকদের অনুরোধে একের পর এক গান পরিবেশন করেন।
এ এক চিরস্মরণীয় দিন ছিল বইমেলার ইতিহাসে, যেখানে ছোটদের কণ্ঠে, চোখে আর নাচের তালে তালে ছড়িয়ে পড়েছিল সৃজনের জয়গান।
বইমেলার শেষ দিনের শিশু-কিশোর-যুব উৎসবের বিভিন্ন পর্বে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছে: পুজিতা দাশ, দিমিএা দর্পন এথিনা, ধীরাজ সাহা ও দানিয়াল দর্পন সামি! সার্বিক ব্যাবস্থাপনা: নিরুপমা সাহা, সহযোগিতায়: সুপ্রিয়া চৌধুরী!
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ও ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’-এর যৌথ উদ্যোগে এ বইমেলার সূচনা হয়। পরে মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও এরপর থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এককভাবে দায়িত্ব নিয়ে বইমেলাটি সফলভাবে পরিচালনা করছে। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক ও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।
নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ পেলেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। পবিত্র সরকার একজন ভারতীয় বাঙালি, ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।উক্ত পুরস্কারের অর্থ মূল্য তিন হাজার ডলার।গতবছর(২০২৪)এ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।উল্লেখ্য, একটি আসরে উপস্থিত থেকে পবিত্র সরকার নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা উদ্বোধন করেছিলেন।
২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণকে প্রদাণের মাধ্যমে পুরস্কারটি মুক্তধারা ফাউন্ডেশন প্রবর্তন করে। এরপর শামসুজ্জামান খান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, দিলারা হাশেম, সেলিনা হোসেন ও সমরেশ মজুমদার এ পুরস্কারে ভূষিত হন।২০২২ সালে ড. গোলাম মুরশিদ এবং ২০২৩ সালে পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী।আমেরিকার নিউজার্সিভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জিএফবি পুরস্কারের অনুদান প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট গোলাম ফারুক ভূইয়া মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বিভিন্ন বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ রচনার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। শিশুসাহিত্যিক, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবেও সুপরিচিত। তিনি গদ্য রচনার জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত বিদ্যাসাগর পুরস্কার, জাতীয় সংহতির জন্য ইন্দিরা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন লাভ করেন। এছাড়াও ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সান, গোল্ড অ্যান্ড সিলভার রেজ’ শিরোপায় সম্মানিত হন।
অধ্যপক ড. পবিত্র সরকারের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার সাভারের ধামরাই নিকট বলিহারপুর গ্রামে। স্বাধীনতা লাভ ও দেশভাগের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ছিন্নমূল হয়ে কলকাতায় আসেন। উচ্চ শিক্ষা কলকাতা শহরেই। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ও সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ভাষাবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শেষের দুবছর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
দেশে ফিরে পুনরায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পদোন্নতির পর তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে টানা সাত বৎসর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন তথা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি হন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপক সরকার বাংলা ও ইংরেজিতে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন।তঁঅর কয়েকটি গ্রন্থের নাম-ভাষা নিয়ে ভাবছেন তো (২০০২), লোকভাষা লোকসংস্কৃতি (২০০৪), বাংলা ব্যাকরণ প্রসঙ্গ (২০০৬), গদ্যরীতি পদ্যরীতি (২০০৬), নাট্যমঞ্চ নাট্যরূপ (২০০৮) প্রভৃতি।
আমেরিকায় বসবাসরত কথাসাহিত্যিক ড. আবদুন নূর নিউইয়র্ক মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা ২০২৫ পেলেন! এই কথাসাহিত্যিক ১৯৫৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কালে সংবাদপত্রে লিখেছেন প্রচুর গল্প এবং উপন্যাস। ঢাকা বেতারে এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে নানা কথিকা এবং নাটক। মঞ্চস্থ হয়েছে বাংলা একাডেমি মঞ্চে, কার্জন হলে এবং ঢাকা বেতারের উন্মুক্ত মঞ্চে। কিছু কিছু ইউটিউবে এখনো পাওয়া যায়। ‘চার দেয়াল’, ‘শিকর’, ‘মধ্যসমুদ্রে জাহাজ’ এখনো প্রদর্শিত হয়।
ড. আবদুন নূর পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন। তার মধ্যে ‘প্যাগাসাস’ ধরে এনেছে ইংরেজ শাসকদের আমলে দুই শতাব্দির ভারত তথা বাংলা হতে চুক্তিবদ্ধ দাস রপ্তানী প্রথা এবং পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জে তাদের দ্বন্দমুখর জীবন যাপন। ‘শূন্য বৃত্ত’-এ বিধৃত হল আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালির আত্ম পরিচয়ের সংগ্রাম। ‘বিচলিত সময়’ তুলে ধরেছে সতেরো শতাব্দির শত শত বাঙালি লেখক এবং কবিদের বাংলা ভাষা রক্ষার প্রয়াস এবং সংগ্রাম। এক হাজার পৃষ্ঠার বিশাল উপন্যাস ‘ঢাকা শহর ঘিরে’। সময়কাল ১৬৬৮ সালের সুবাহ বাংলার মুঘল রাজধানী ঢাকা। বাঙালি আত্মপরিচয় অন্বেষণে রত রয়েছে গত ছয়শো বছর ধরে এবং সে প্রয়াস রত থাকবে আগামী শত শত বছর ধরে।
ড. আবদুন নূর পেশায় শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন নীতি প্রনয়ন এবং প্রয়োগ পরিকল্পক। আমেরিকায় ম্যারিল্যান্ড রাজ্যের বেথেসদা শহরে বসবাস করছেন। জন্ম ১৯৩৯ সালে ঢাকা শহরে। শিক্ষা প্রশাসনে পিএইচডি করেছেন ২৮ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বিশ্বব্যাংকে ১৯৭০ সালে নিয়োজিত হয়েছেন এবং চল্লিশ বছর ধরে জড়িত থেকেছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রথম শিক্ষা নীতি (১৯৭৪) রচনা এবং পরিকল্পনায় সক্রিয় সহায়ক ছিলেন। উন্নয়নশীল দেশ সমূহে দারিদ্র বিমোচন পরিকল্পনায় সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংকের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামার সম্পাদনায় নয়টি উন্নয়ন খাতে সম্মিলিত বিনিয়োগের নীতি প্রনয়ন করেন ১৯৭৬ সালে। পেশাগত কারণে বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের ৩৫টি উন্নয়নশীল দেশে ভ্রমন করেছেন এবং দেশ সমূহের শিক্ষানীতি প্রনয়নে এবং পরিকল্পনা প্রয়োগে সহায়তা করেছেন। এইসব দেশ সমূহের মধ্যে রয়েছে ইরান, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইথিয়পিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, মরিশাস, গায়ানা, গুয়াতেমালা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রমুখ। মুক্ত বাংলাদেশ সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭৩ সালে একবছর বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ননীতি প্রনয়ন করেন। সেই বছরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কয়েকবার মুখোমুখি দেখা হয়। কয়েকটি একান্ত বৈঠকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি এবং উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারনা এবং স্বপ্ন তুলে ধরেন এবং উপদেশ দান করেন। ড. আবদুন নূর বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত নীতি প্রতিফলনের প্রচেস্টা করেছেন। এটি তাঁর জীবনের পরম পাওয়া।