১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকিতে ‘বরং স্বস্তিতে’ রাশিয়া

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আগামী ৫০ দিনের মধ্যে চুক্তি করতে রাজি না হলে রাশিয়ার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।একই সঙ্গে ইউক্রেনে আরও অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের নতুন এই শুল্ক আরোপের হুমকি কার্যকর হলে রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতায় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কোতে শেয়ারের দর গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছিল রাশিয়া। সে তুলনায় এটি তাদের কাছে তুলনামূলক স্বস্তিদায়কই মনে হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার আগে সোমবারের রাশিয়ান ট্যাবলয়েড ‘মস্কোভস্কি কমসোমোলস’ সতর্ক করে বলেছিল, রাশিয়া ও আমেরিকা ইউক্রেন নিয়ে নতুন করে সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে। পত্রিকাটি আরও লিখেছিল, ‘ট্রাম্পের সোমবারের চমক আমাদের দেশের জন্য সুখকর হবে না।’

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি নিঃসন্দেহে রাশিয়ার জন্য ‘সুখকর’ নয়, তবে রাশিয়া স্বস্তিতে আছে। এর একটি বড় কারণ হলো, রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্কগুলো এখন থেকে ৫০ দিন পর কার্যকর হবে। এটি মস্কোকে পাল্টা প্রস্তাব তৈরি করতে এবং নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া আরও বিলম্বিত করার জন্য যথেষ্ট সময় দেবে।

তবুও ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা রাশিয়ার প্রতি আরও কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিই নির্দেশ করে। এ ছাড়া এটি ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে অনীহার প্রতি তার হতাশাকেও প্রতিফলিত করে।

এর আগে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করাকে তার পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।কয়েক মাস ধরে, মস্কো ‘হ্যাঁ, কিন্তু…’ এমন প্রতিক্রিয়া দিয়েই কাটিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে গেল মার্চে রাশিয়ারও ইতিবাচক সাড়া ছিল, যখন তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ব্যাপক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিল।তবে তখন তারা কিয়েভের সঙ্গে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করা এবং সেই সঙ্গে ইউক্রেনে সামরিক সমাবেশও বন্ধ করার কথা বলেছিল।

মস্কো জোর দিয়ে বলেছে, তারা শান্তি চায়। কিন্তু যুদ্ধের মূল কারণগুলো প্রথমে সমাধান করতে হবে। ক্রেমলিন এগুলোকে ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একেবারে ভিন্নভাবে দেখে। এই যুদ্ধ কিয়েভ, ন্যাটো, ‘সমষ্টিগত পশ্চিমা’ থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বহিরাগত হুমকির ফলাফল।

যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন, ন্যাটো বা পশ্চিমারা রাশিয়া আক্রমণ করেনি। মস্কোই ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু করেছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল। বেশ কিছুদিন ধরে, ‘হ্যাঁ, কিন্তু…’ পদ্ধতির ফলে মস্কো যুদ্ধের বিচার অব্যাহত রেখে অতিরিক্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

বিবিসি বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে এবং ইউক্রেনের বিষয়ে শান্তি চুক্তির জন্য আলোচনা করতে আগ্রহী ট্রাম্প প্রশাসন। তারা রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনে এটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

ক্রেমলিনের সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ‘হ্যাঁ, কিন্তু’… কৌশলের মাধ্যমে রাশিয়া সময় নষ্ট করছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করেছিলেন, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চুক্তিতে রাজি করানোর উপায় খুঁজে পাবেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোনো তাড়াহুড়ো করেননি।

ক্রেমলিন বিশ্বাস করে যে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তারা জোর দিয়ে বলছে, তারা শান্তি চায়, তবে তা নিজেদের শর্তে।যে শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা থেকে স্পষ্ট যে, এটি ঘটবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘খুশি নন’। আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়াও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রতি মোহ হারাচ্ছে। গতকাল সোমবার মস্কোভস্কি কমসোমোলস লিখেছে, ‘(ট্রাম্পের) স্পষ্টতই নিজেকে বড় ভাবার বিভ্রম আছে এবং তিনি দাম্ভিক।’

সোমবার দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ন্যাটো দেশগুলোর মাধ্যমে ইউক্রেনে ‘সর্বোচ্চ মূল্যের অস্ত্র’ পাঠাবে আমেরিকা। একই সঙ্গে ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

ওয়াশিংটনে ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে ইউক্রেন যা করতে চায় তা করতে পারে।’ – বিবিসি