২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইরানে ইসরায়েল যেভাবে ধরা খেল

ইরানে টানা ১১ দিন বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল কী অর্জন করল? যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেওয়ার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইসরায়েলি লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই দাবি যে সমস্যাজনক, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

এই স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এক. ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়া। দুই. ইরানে শাসনব্যবস্থার বদল। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি গুঁড়িয়ে দেওয়া গেল? উত্তরটা হবে, না। এটা মনে হচ্ছে যে ফর্দো পারমাণবিক স্থপানায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর আগেই সেখান থেকে ফিউশনযোগ্য বা বিভাজ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়েছিল। ইউরেনিয়ামের এ মজুতই ইরানের হাতে থাকা পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যটি ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির যদি কোনো ক্ষতি করে থাকে, সেটা আসলে কী? এ প্রশ্নের উত্তর এখনো পরিষ্কার নয়। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে সক্ষম হয় ইসরায়েল। কিন্তু এর বাইরে এ আক্রমণ অভিযানে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেয়েছে খুব সামান্য।

ইরান যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করা কঠিন। ইসরায়েল কি ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ ঘটাতে পেরেছে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, উল্টো ফলটাই বেশি হয়েছে। ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় নেতৃত্বে থাকা সামরিক নেতাদের হত্যা করে ইসরায়েল চেয়েছিল দেশটির শাসক দলের বিরুদ্ধে গণ–অভ্যুত্থান উসকে দিতে। এ কৌশল এসেছে ইসরায়েলিদের সেই দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে তারা মনে করে, শত্রুরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার সেরা উপায় হলো জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করা।

কিন্তু এ কৌশল কখনোই কাজ করেনি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম হতে পারে লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার প্রভাব। তবে হিজবুল্লাহর দুর্বল হওয়ার পেছনে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্য সব ক্ষেত্রে নেতৃত্বকে নিকেশ করে দেওয়ার ইসরায়েলি এ কৌশল বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের ক্ষেত্রেও ইসরায়েলি এ কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে সরকারের প্রতি ইরানি জনগণের সংহতি জোরালো হয়েছে। ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করে। আইআরজিসি সম্ভবত ইরানি রাজনীতির ক্ষমতাধর শক্তি। একই সঙ্গে ইরানি জনগণ সবচেয়ে ঘৃণা করে, এমন একটি সংস্থা আইআরজিসি।

তা সত্ত্বেও অনেক ইরানি, যাঁরা ইসলামিক রিপাবলিক ও বিশেষ করে আইআরজিসির কট্টর বিরোধী, তাঁরাও ইসরায়েলের হামলার পর সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন। ইরানিরা ইসরায়েলের এ হামলাকে সরকারের ওপর হামলা নয়, গোটা ইরানের ওপর শত্রুর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন।

ইরানি ‘শাসকদের প্রতীকগুলোতে’ ইসরায়েলি বোমা হামলা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। এভিন কারাগারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজনৈতিক বন্দীদের দমন-পীড়নের জন্য এ কারাগারের কুখ্যাতি আছে। ইসরায়েল কারাগারটিতে হামলা চালিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামে সহায়তা দিতে চেয়েছিল। অথচ বাস্তবে এ হামলার ফলে বন্দীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। কেননা কর্তৃপক্ষ অনেক বন্দীকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

তেহরানে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লকে’ (এই ডিজিটাল ঘড়ি ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য ইরানি প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে মনে করা হয়) বোমা হামলাটি ছিল নিতান্তই হাস্যকর। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকেন্দ্র আইআরআইবিতে ইসরায়েলের বোমা হামলাও ছিল একেবারে উদ্ভট। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরানি শাসকদের প্রোপাগান্ডা প্রচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছে। এ বোমা হামলার পর অনেক ইসরায়েলি বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানকে ন্যায্যতা দেবে।

ইসরায়েল যদি এর ঘোষিত যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না-ই করতে পারে, তাহলে অন্তত বিশ্বজনমতকে কি তার পক্ষে টানতে পেরেছে? এটা সত্য যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এ হামলার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকটি গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

ইরানি ‘শাসকদের প্রতীকগুলোতে’ ইসরায়েলি বোমা হামলা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। এভিন কারাগারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজনৈতিক বন্দীদের দমন-পীড়নের জন্য এ কারাগারের কুখ্যাতি আছে। ইসরায়েল কারাগারটিতে হামলা চালিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামে সহায়তা দিতে চেয়েছিল। অথচ বাস্তবে এ হামলার ফলে বন্দীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। কেননা কর্তৃপক্ষ অনেক বন্দীকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

তেহরানে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লকে’ (এই ডিজিটাল ঘড়ি ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য ইরানি প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে মনে করা হয়) বোমা হামলাটি ছিল নিতান্তই হাস্যকর। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকেন্দ্র আইআরআইবিতে ইসরায়েলের বোমা হামলাও ছিল একেবারে উদ্ভট। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরানি শাসকদের প্রোপাগান্ডা প্রচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছে। এ বোমা হামলার পর অনেক ইসরায়েলি বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানকে ন্যায্যতা দেবে।

ইসরায়েল যদি এর ঘোষিত যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না-ই করতে পারে, তাহলে অন্তত বিশ্বজনমতকে কি তার পক্ষে টানতে পেরেছে? এটা সত্য যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এ হামলার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকটি গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

ইরানি ‘শাসকদের প্রতীকগুলোতে’ ইসরায়েলি বোমা হামলা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। এভিন কারাগারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজনৈতিক বন্দীদের দমন-পীড়নের জন্য এ কারাগারের কুখ্যাতি আছে। ইসরায়েল কারাগারটিতে হামলা চালিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামে সহায়তা দিতে চেয়েছিল। অথচ বাস্তবে এ হামলার ফলে বন্দীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। কেননা কর্তৃপক্ষ অনেক বন্দীকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

তেহরানে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লকে’ (এই ডিজিটাল ঘড়ি ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য ইরানি প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে মনে করা হয়) বোমা হামলাটি ছিল নিতান্তই হাস্যকর। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকেন্দ্র আইআরআইবিতে ইসরায়েলের বোমা হামলাও ছিল একেবারে উদ্ভট। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরানি শাসকদের প্রোপাগান্ডা প্রচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছে। এ বোমা হামলার পর অনেক ইসরায়েলি বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানকে ন্যায্যতা দেবে।

ইসরায়েল যদি এর ঘোষিত যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না-ই করতে পারে, তাহলে অন্তত বিশ্বজনমতকে কি তার পক্ষে টানতে পেরেছে? এটা সত্য যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এ হামলার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকটি গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

ইরান যুদ্ধের ক্ষত ও বোমা হামলার মধ্য দিয়ে নতুন ইরানের জন্ম হয়। শত শত মানুষের প্রাণহানি এবং নির্বিচার বোমা হামলায় ইরানের ক্ষয়ক্ষতি ছিল বাস্তব। কিন্তু শক্তিশালী ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও ইরান মাথা নত করেনি।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলিদের বাড়িঘরে আঘাত হেনেছে। কিন্তু তাতে ইরানের ভাবমূর্তিতে একটুও আঁচড় লাগেনি। কেননা বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ইরানকে ইসরায়েলের আক্রমণের ভুক্তভোগী হিসেবে দেখেছে। ইরানের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগগুলো তাই তীব্রভাবে বাধাগ্রস্ত হয়নি।

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক হামলার কথা আগে থেকেই সতর্ক করে ইরান খুব সফলভাবে উত্তেজনা প্রশমন করতে পেরেছে। ইরান যথেষ্ট শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতি তারা যেন ভঙ্গ না করে। ইরান এমন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো, যে শক্তি হিসেবে তারা দাঁড়াতে চেয়েছে। ইরান দৃঢ়ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ইরান জানিয়ে দিয়েছে। – অরি গোল্ডবার্গ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশেষ করে ইরান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ । আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে দৈনিক প্রথম আলোর জন্য অনুবাদ মনোজ দে