১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আর্ন্তজাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানালো ক্রেমলিনের মুখপাত্র

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানালো ক্রেমলিনের মুখপাত্র

রুশ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তনগুলো দেখছি, তা আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি’ বা জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, মার্কিন প্রশাসনের এই নীতি বহু ক্ষেত্রে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। খবর বিবিসি’র।

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ৩৩ পৃষ্ঠার এই নথিতে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। বরং সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইউরোপ বর্তমানে ‘সভ্যতা বিলুপ্তির’ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। নথিতে বিদেশি প্রভাব মোকাবিলা, গণ-অভিবাসন রোধ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কথিত ‘সেন্সরশিপ’—অর্থাৎ বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ—প্রত্যাখ্যানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, নথিতে ব্যবহৃত ভাষা ক্রেমলিনের বক্তব্যের সঙ্গে অস্বস্তিকর মিল সৃষ্টি করেছে।

রুশ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তনগুলো দেখছি, তা আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছি।’ তবে তিনি আরও জানান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে মস্কো নথিটি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করবে।

নতুন মার্কিন কৌশলে রাশিয়ার প্রতি তুলনামূলকভাবে নমনীয় সুর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছিল, তা এখন শিথিল হয়ে পড়তে পারে।

নথিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ইইউ বাধা দিচ্ছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, ইউরোপীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা—অর্থাৎ সুসম্পর্ক—পুনর্গঠন করা প্রয়োজন।

মার্কিন প্রতিবেদনে ‘পশ্চিমা পরিচয়’ পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২০ বছর বা তারও কম সময়ে ইউরোপকে আগের মতো চিনতে না-ও পারা যেতে পারে। ‘সভ্যতা মুছে যাওয়ার’ আশঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকটের চেয়েও বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপথের বিরোধিতা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতা আদৌ কি নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে টিকে থাকার মতো শক্তিশালী?

ইইউর বর্তমান নীতির সমালোচনা করা হলেও, ‘দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর’ প্রশংসা করা হয়েছে নথিতে। এতে বলা হয়েছে, আমেরিকা চায় তাদের মিত্ররা ইউরোপে এই ‘চেতনা’ ফিরিয়ে আনুক।

ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই এ নথি প্রকাশ করা হয়েছে। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোটকে গুরুত্ব দিলেও, নথির ভাষা ও লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল শুক্রবার বলেন, ‘ন্যাটোর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র থাকবে। তবে বাকস্বাধীনতা বা আমাদের মুক্ত সমাজ কীভাবে চলবে, তা এই নিরাপত্তা কৌশলের আলোচ্য হতে পারে না—অন্তত জার্মানির ক্ষেত্রে তো নয়ই।’

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ‘আমেরিকান বন্ধুদের’ উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘ইউরোপ আপনাদের কোনো সমস্যা নয়, বরং সবচেয়ে কাছের মিত্র।’ তিনি দুই পক্ষের ‘সাধারণ শত্রুর’ কথা মনে করিয়ে দিয়ে আরও বলেন, ‘যৌথ নিরাপত্তার জন্য এটাই একমাত্র যুক্তিযুক্ত কৌশল, যদি না পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়ে থাকে।’

সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট মন্তব্য করেছেন, নথিটি ‘চরম ডানপন্থার চেয়েও বেশি কট্টর’। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন জার্মানির ‘এএফডি’ দলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে, যে দলকে জার্মান গোয়েন্দারা চরম ডানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এতে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী নৌযানের ওপর কঠোর নজরদারির কথা বলা হয়েছে এবং ভেনিজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা সতর্ক করে বলেছেন, এই নথির ফলে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভেঙে পড়তে পারে। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জেসন ক্রো একে ‘বিশ্বে আমেরিকার অবস্থানের জন্য বিপর্যয়কর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নিউইয়র্কের প্রতিনিধি গ্রেগরি মিক্স বলেন, ‘এর মাধ্যমে দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধভিত্তিক নেতৃত্বকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।’