ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র নিয়ে আসা সৌদি আরবের একটি জাহাজ আটকে দিয়েছেন ইতালির জেনোয়া বন্দরের কর্মীরা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বাহরি ইয়ানবু নামের সৌদি জাহাজটি জেনোয়া বন্দরে পৌঁছায়। জাহাজটি জেনোয়া থেকে অস্ত্র বোঝাই করে আবুধাবিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বন্দরের ৪০ কর্মী জানতে পারেন, জাহাজটিতে এরই মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল, যেগুলো ইসরায়েলে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তৎক্ষণাৎ তারা জাহাজে প্রবেশ করে অস্ত্র খুঁজে পান। জানা যায়, জাহাজটি ইতালির জেনোয়াতে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড থেকে ছেড়েছিল।
জেনোয়ার অটোনোমাস কালেক্টিভ অব পোর্ট ওয়ার্কার্স অ্যান্ড ইউনিয়নের প্রতিনিধি জোসে নিভোই বলেন, “আমরা যুদ্ধের জন্য কাজ করি না।” তিনি জানান, সৌদির জাহাজে অস্ত্র চোরাচালান ধরা পড়ার পর জেনোয়া বন্দরের কর্তৃপক্ষ অস্ত্র পরিবহন বন্ধে একটি স্থায়ী পর্যবেক্ষক দল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি জাহাজ কোম্পানি বাহরি পরিচালিত জাহাজ বাহরি ইয়ানবু সম্প্রতি মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর থেকে জেনোয়ায় পৌঁছায়। ইতালীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারক লিওনার্দোর সামরিক সরঞ্জাম বোঝাই করার কথা ছিল জাহাজটিতে। অস্ত্রগুলোর মধ্যে ট্যাঙ্ক ছাড়াও বিভিন্ন ভারী অস্ত্র ছিল। নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে ডকইয়ার্ডের ৪০ জন কর্মী ওই জাহাজে ওঠেন। এ সময় ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে বহন করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নজরে পড়ে তাদের।
বাহরির পক্ষ থেকে অবশ্য ইসরায়েলে অস্ত্র পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের স্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সোমবার (১১ আগস্ট) নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দিয়ে জাহাজ কোম্পানিটি দাবি করে, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
বাহরি স্পষ্টভাবে বলেছে যে তারা কখনও ইসরায়েলে কোনও পণ্য বা চালান পরিবহন করেনি এবং কোনোভাবেই এই ধরনের কোনও অভিযানে জড়িত ছিল না। তাদের সমস্ত কার্যক্রমে কঠোর তদারকি চলে। এমনকি এ ধরনের যে কোনও দাবির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছে জাহাজ কোম্পানিটি।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠিত নীতির পাশাপাশি সামুদ্রিক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী সমস্ত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধানের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধতারও উপর জোর দিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগেও, ২০১৯ সালে জেনোয়া বন্দরের কর্মীরা একইভাবে অস্ত্রবাহী একটি জাহাজ আটকে দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে আসছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্দরের কর্মীরা ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র পরিবহন প্রতিহত করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর আগেও, গত ৪ জুন ফ্রান্সের ফোস-মার্সেই বন্দর কর্মীরা ইসরায়েলের জন্য আনা অস্ত্র উপকরণ জাহাজে লোড করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ওই জাহাজটি অস্ত্র না নিয়েই ফিরে যায়।