২৬শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমেরিকা-বিরোধী’ পোস্ট দিলে মিলবে না যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, নাগরিকত্ব

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা কাজের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এখন থেকে ‘আমেরিকা নিয়ে মনোভাব’ খতিয়ে দেখা হবে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেদনকারীদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার বিষয়টিও রয়েছে। কোনও আবেদনকারীর কর্মকাণ্ডে যদি ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ চিহিত করা হয়, তবে তাকে আর ভিসা দেবে না মার্কিন সরকার। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এমনটাই ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করবেন, তাদের ক্ষেত্রেও অতীতে ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ এর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে যাচাইবাছাই করা হবে বলেও জানিয়েছে ইউএসসিআইএস।

গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার (ইউএসসিআইএস) মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাজেসার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নতুন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের ‘আমেরিকা-বিরোধী কর্মকাণ্ড বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশ’ বা তাদের ‘ইহুদিবিরোধী কর্মকাণ্ডের কোনো প্রমাণ’ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত জুন থেকেই যেকোনো ভিসা বা অভিবাসন আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই করে দেখছে। এখন এর আওতা বাড়িয়ে কোনো ধরনের ‘আমেরিকাবিরোধী’ কর্মকাণ্ড বা মনোভাবের সঙ্গে আবেদনকারীর যোগসাজশ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

অভিবাসন নীতির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দমনমূলক পদক্ষেপের সর্বশেষ সংযোজন এটি। নতুন এসব নিয়মের অনেকগুলোই অভিবাসী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে মার্কিন সরকারের নতুন এই ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অনলাইন ফোরামগুলোতে বিতর্ক শুরু হয়েছে, ঠিক কোন বিষয়টি ‘আমেরিকাবিরোধী’ হিসেবে গণ্য হবে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অস্পষ্ট শব্দচয়ন এবং সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় বাস্তবে হুমকি থাকুক বা না থাকুক, অভিবাসন কর্মকর্তারা অভিবাসনের বিষয়ে এখন আরও কঠোর হওয়ার ক্ষমতা পাবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

জুনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীরা ‘মার্কিন নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির প্রতি বৈরি’ কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল।

ইউএসসিআইসের মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্রাজেসার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা তাদের দেয়া উচিত হবে না যারা এই দেশকে অপছন্দ করে এবং মার্কিনবিরোধী মতবাদের প্রচার করে। তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব চিহ্নিত করার নীতি ও পদ্ধতি কার্যকরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যতখানি সম্ভব কঠোর যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কাজ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’

নীতিমালার নতুন এ সংস্করণে ‘আমেরিকা-বিরোধিতার’ কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, যারা ‘ইহুদিবিরোধী সন্ত্রাসবাদ, ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী সংগঠন ও ইহুদিবিদ্বেষমূলক মতবাদের সমর্থক’ তারা এই তালিকায় থাকবে।

‘আমেরিকা-বিরোধী’ মনোভাবের ক্ষেত্রে ইউএসসিআইএস ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের (আইএনএ) একটি ধারার দিকে ইঙ্গিত করেছে।

আইনের ওই ধারায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক আইনি কাঠামোতে কিছু লোককে নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, যারা ‘বৈশ্বিক কমিউনিজমের’ প্রচারক, যারা ‘সব বৈধ সরকারের’ বিরুদ্ধে লেখালেখি বা প্রচার চালায় এবং জোর-জবরদস্তি বা সহিংসতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে উচ্ছেদে আগ্রহী। সূত্র: রয়টার্স