২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ

সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই, ঢাকায় ফিরে তারেক রহমান

সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই, ঢাকায় ফিরে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমেরিকার মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং-এর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ বক্তব্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, “আই হ্যাভ এ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অফ মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।” এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সহযোগিতা লাগবে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের ম্যান্ডেট ও সহযোগিতা চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি সেই প্ল্যান বা কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ আছেন প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন ইনশাআল্লাহ আমরা ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।’

ঢাকার পূর্বাচলে আয়োজিত এক বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পাহাড় কিংবা সমতল—ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এমন এক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর লাল-সবুজ রঙে সাজানো একটি বাসে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পূর্বাচলে গণসংবর্ধনাস্থলে পৌঁছান তারেক রহমানকে বহনকারী গাড়িবহর। বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চে উঠে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন তিনি। বেলা ৩টা ৫৭ মিনিটে ‘প্রিয় বাংলাদেশ’ সম্বোধনের মাধ্যমে তার বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় মঞ্চে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

তারেক রহমান তার বক্তব্যে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে বলেন, ‘৭১-এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালেও ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, গৃহবধূসহ সর্বস্তরের মানুষ একইভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ কথা বলার ও গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার চায়।’ তিনি আরও স্মরণ করেন ৭৫-এর ৭ই নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে দেশ রক্ষা এবং ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যা একজন মা স্বপ্ন দেখেন—একটি নিরাপদ বাংলাদেশ। সেখানে নারী, পুরুষ বা শিশু যেই হোক না কেন, নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে যেন নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারে।’

তিনি দেশের জনসংখ্যার বৈচিত্র্য তুলে ধরে বলেন, ‘দেশে ৪ কোটির বেশি তরুণ, ৫ কোটির মতো শিশু, ৪০ লক্ষ প্রতিবন্ধী এবং কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এই লক্ষ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার রাজনৈতিক কর্মী ও নিরীহ মানুষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের সাহসী সদস্য ওসমান হাদি শহীদ হয়েছেন। তার মতো শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে হবে। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আধিপত্যবাদী শক্তির গুপ্তচরেরা এখনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে যাতে শক্ত গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশকে গড়ে তোলা যায়।’

তারেক রহমান মার্কিন নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ বক্তব্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, “আই হ্যাভ এ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অফ মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।” এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সহযোগিতা লাগবে।’

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে, তারা নবী করিম (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তারেক রহমান তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত হন। তিনি বলেন, ‘সন্তান হিসেবে আমার মন মায়ের হাসপাতালের বিছানার পাশে পড়ে আছে। কিন্তু তিনি যাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে ফেলে আমি যেতে পারি না। সেজন্য হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি।’ তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।

সবশেষে তিনি যেকোনো উস্কানির মুখে ধৈর্য ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। ধর্ম, দল বা শ্রেণী নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ যেন নিরাপদ থাকে, এটাই হোক আমাদের চাওয়া।’ ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ও ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বহনকারী উড়োজাহাজটি গত ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরলেন তিনি।

বিমানবন্দরে পরিবারসহ তারেক রহমানকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ সময় ফুলের মালা দিয়ে জুবাইদা রহমানের মা তারেক রহমানকে বরণ করে নেন।

তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন: ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’