৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত স্থগিত করছে যুক্তরাষ্ট্র

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত স্থগিত করছে যুক্তরাষ্ট্র

গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের আশ্রয় আবেদনের নিষ্পত্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। একজন শীর্ষস্থানীয় অভিবাসন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (ইউএসসিআইএস)’ বিভাগের পরিচালক জোসেফ এডলো শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, যতক্ষণ না প্রত্যেক বিদেশি নাগরিককে (যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থী) সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাচাই–বাছাই করা যায়, ততক্ষণ আশ্রয় সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে।

ঘোষণাটি এমন সময় এল, যখন ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও জোরাল করা হয়েছে। দুই সেনার একজন মারা যাওয়ায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি। আর ওই ঘটনার তদন্তকারীরা এখনো হামলার উদ্দেশ্য খুঁজছেন।

ন্যাশনাল গার্ডের ২০ বছর বয়সী স্পেশালিস্ট সারাহ বেকস্ট্রম ও ২৪ বছর বয়সী স্টাফ সার্জেন্ট অ্যান্ড্রু উলফ গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে হোয়াইট হাউসের কাছে গুলিতে গুরুতর আহত হন। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতে জানান, বেকস্ট্রম মারা গেছেন।

ইতিমধ্যে, অ্যাটর্নি জিনিন পিরোর কার্যালয় জানায়, অভিযুক্ত ২৯ বছর বয়সী আফগান নাগরিক রহমানউল্লাহ লাকানওয়ালের বিরুদ্ধে এখন প্রথম-ডিগ্রি হত্যার একটি ও অস্ত্রসহ হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। লাকানওয়াল আফগান যুদ্ধে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হয়ে কাজ করেছিলেন।

বেকস্ট্রম ও উলফ ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ছিলেন। ট্রাম্পের ‘অপরাধ দমন’ মিশনের অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরা। ট্রাম্প আরও কয়েকটি শহরে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়ে গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করার অভিযান জোরদার করতে চাইলেও আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

গার্ড সদস্য হত্যার ঘটনায় আরও কঠোর অবস্থান নিতে পারেন ট্রাম্প : ট্রাম্প ওই গুলিবর্ষণের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর পূর্বসুরি জো বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করা আফগান নাগরিকদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে ‘সমস্যা তৈরি করেছে’।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি ‘দরিদ্র দেশগুলো থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ’ করতে চান এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চান।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জিনিন পিরো বলেন, প্রথম-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগ ছাড়াও গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে। পিরো বলেন, নিহত বেকস্ট্রমের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানাচ্ছেন। তিনি দেশসেবার জন্য স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং ওয়াশিংটনের রাস্তায় হামলার শিকার হয়ে মারা গেলেন।

এই অ্যাটর্নি আরও বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীর উদ্দেশ্য জানতে কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ করছেন। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে (যেখানে লাকানওয়াল থাকতেন) এবং দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করা হচ্ছে।

এদিকে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসি জানান, উলফ এখনো ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায়’ আছেন। আর বেকস্ট্রমের মৃত্যুতে তিনি অঙ্গরাজ্যের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

লাকানওয়ালের সাবেক বাড়িওয়ালা ক্রিস্টিনা উইডম্যান বলেন, লাকানওয়াল ওয়াশিংটনের বেলিংহামে স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে থাকতেন। জায়গাটি সিয়াটলের প্রায় ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) উত্তরে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, লাকানওয়াল ২০২১ সালে ‘অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। জো বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের পুনর্বাসনে এই কর্মসূচি চালু করেছিল। লাকানওয়াল আশ্রয়ের জন্য বাইডেনের সময় আবেদন করলেও তাঁর আশ্রয় মঞ্জুর হয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময়।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আনা প্রায় ৭৬ হাজার আফগান শরণার্থীর বাছাই প্রক্রিয়া আবারও তদন্ত করা উচিত। তাঁদের বড় অংশই আগে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দোভাষী ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত ব্যক্তি।

এ কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্পসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে এ ক্ষেত্রে যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়ায় ফাঁকফোকর ছিল। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যাচাই প্রক্রিয়া যথেষ্ট কঠোর ছিল এবং ওই কর্মসূচি তালেবানের সম্ভাব্য প্রতিশোধ গ্রহণের ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের জন্য এক বড় সহায়তা।