মসজিদের নেতাদের কাছ থেকে দীর্ঘ ও উষ্ণ পরিচিতিমূলক বক্তব্য শোনার পর নিউইয়র্ক নগরের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো চেয়ার থেকে উঠলেন। তারপর তিনি ছোট্ট এক নোটকার্ডের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থেকে ঐতিহ্যবাহী আরবি ভাষায় শুভেচ্ছা জানানোর চেষ্টা করলেন। কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার পর ধীরে ধীরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ কুমোর সালামে উপস্থিত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ খানিকটা বিস্মিত হলেও উপস্থিত সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
এমন ভুল খুব অবাক হওয়ার নয়। কুমো নিউইয়র্কের মেয়র পদে প্রার্থিতার প্রচার শুরুর পর নিয়মিত গির্জা, সিনাগগ ও শিখ মন্দিরে গিয়েছেন। তবে এবার প্রথম গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নগরের ব্রঙ্কসের ফুতা ইসলামিক সেন্টারে প্রচারে গেলেন। মসজিদে এটিই ছিল তাঁর প্রথম নির্বাচনী প্রচার।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করা কুমো মেয়ের পদে দলীয় প্রাইমারিতে এক বিতর্কে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন, শেষ কবে কোনো মসজিদে গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছিলেন তিনি। সেই প্রশ্নে তিনি হিমশিম খেয়েছিলেন এবং সদুত্তর দিতে না পেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
শুক্রবারের (১২ সেপ্টেম্বর) বক্তব্যে কুমো নিউইয়র্ককে নতুন আসা অভিবাসীদের জন্য সুযোগের বাতিঘর হিসেবে উল্লেখ করেন, যা মসজিদের অনেক পশ্চিম আফ্রিকান অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে হয়। তিনি বলেন, তাঁর দাদার প্রায় ১০০ বছর আগে ইতালি থেকে আসার যাত্রা ও এসব মানুষের যাত্রা একই রকম। নির্বাচিত হলে তিনি নিশ্চিত করবেন, মুসলিমরা নিউইয়র্কে এসে যে সাফল্যের স্বপ্ন দেখেছেন, তা যেন বাস্তবে পান।
পরোক্ষভাবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানিকে লক্ষ্য করে কুমো বলেন, তিনি বছরে ৫০ হাজার ডলারের কম আয় করা পরিবারগুলোর জন্য বাস ও সাবওয়ে বিনা মূল্যে করবেন এবং বাসাভাড়ার খরচ কমাতে কাজ করবেন।
‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’ বা সাশ্রয়ী আবাসনের ইস্যুতে জোর দিয়ে জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাই ভোটে জয়ী হয়েছেন। কুমো বলেন, মানুষ এখন সাশ্রয়ী আবাসনের কথা বলছে। এটা আসলে পুরোনো সমস্যার নতুন শব্দ। আসল সমস্যা হলো মধ্যবিত্ত, কর্মজীবী পরিবার ও গরিবেরা তীব্র অর্থনৈতিক চাপে আছে।
গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ডজনখানেক মুসল্লির সামনে কুমোর এই উপস্থিতি দেখিয়েছে, ডেমোক্র্যাটদের প্রাইমারিতে জোহরানের কাছে হারের পর থেকে তিনি প্রচারে আরও সরাসরি কৌশল নিয়েছেন। জোহরান নিজে মুসলিম এবং এই মসজিদে তিনি একাধিকবার এসেছেন।
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কুমো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও বেশ পিছিয়ে আছেন। গতকাল শুক্রবার অ্যাডামসও কাছের একটি মসজিদে প্রচার চালিয়েছেন, যেখানে মূলত পশ্চিম আফ্রিকান অভিবাসীরা নামাজ পড়েন।
ফুতা ইসলামিক সেন্টারের নেতা মামাদু দিয়ালো মেয়র প্রার্থী কুমোর বক্তব্যের পর বলেন, প্রার্থীদের মসজিদে আসা মোটেই অবাক করার মতো বিষয় নয়। মুসলিম নিউইয়র্কাররা তাদের কথা শোনাতে চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কুমো নির্বাচিত হলে তিনি আবার এসে তাঁদের আবাসন ব্যয় ও অপরাধ নিয়ে উদ্বেগের জবাব দেবেন। ৩৯ বছর বয়সী দিয়ালো বলেন, তিনি এখনো নিশ্চিত নন কাকে সমর্থন করবেন। তবে অনেক মুসল্লির কাছে কুমোর গভর্নর থাকার সময়ের স্মৃতি ভালো।
গিনি থেকে আসা ৬০ বছর বয়সী নিরাপত্তাকর্মী বুবাকার সওলামুগম বলেন, কুমো গভর্নর হিসেবে ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার করায় তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি ভালো কাজ করেছেন।
তবে উপস্থিত অন্যরা, যেমন ২৩ বছর বয়সী ওসমানে দিয়ালো স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি প্রাইমারিতে জোহরানকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের এত কাছে এসে কুমোর এই আগমন নিছক মতলববাজি। ওসমানে বলেন, কুমোর সময় শেষ। নতুন চিন্তাভাবনা করেন, এমন রাজনীতিক দরকার।
চলতি বছরের জুনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারির আগে কুমো দাবি করেছিলেন, তিনি ১০০ জনের বেশি ধর্মীয় নেতার সমর্থন পেয়েছেন—যাঁদের তালিকায় ব্রুকলিনের দুই ইমামও ছিলেন। তবে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই দুই ইমাম বলেন, তাঁরা কখনোই কুমোকে সমর্থন করেননি এবং ভুলবশত তালিকায় তাঁদের নাম ঢোকানো হয়েছিল।
ব্রুকলিনের আল-মদিনা মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ সিদ্দিকি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, কুমোর নির্বাচনী প্রচার দল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে; কিন্তু করেনি। এরপর দেখি আমাদের নাম তালিকায় যোগ করেছে। এতে হতাশার চেয়ে অসাবধানতাই বেশি মনে হচ্ছে। গুরুত্বের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত আমরা কাউকে সমর্থন দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’