নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি মনে করেন, এ শহরের পেনশন তহবিল ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে। গত সপ্তাহে সিবিএস নিউইয়র্কের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকার দেন মামদানি। সেখানে সাংবাদিক মারসিয়া ক্রেমারের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মারসিয়া ক্রেমার মামদানিকে জিজ্ঞাসা করেন, মেয়র হলে তিনি কি শহরের পেনশন তহবিলের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে বলবেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠান বা ইসরায়েলি বন্ড থেকে বিনিয়োগ সরাতে? নিউইয়র্ক সিটি ঐতিহাসিকভাবে এ দুই ক্ষেত্রেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে আসছে। মামদানি জবাবে বলেন, ‘আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গের কাজে আমাদের কোনো তহবিলের জড়িত থাকা উচিত নয়।’
মামদানি আরও বলেন, বর্তমান সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ইসরায়েলি বন্ড নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। ‘আমি মনে করি, ইসরায়েলি বন্ড নিয়ে বর্তমান কম্পট্রোলারের যে অবস্থান, সেটাই সঠিক পথ’, বলেন তিনি। তবে ক্রেমার প্রশ্ন ঘুরিয়ে আবার জানতে চান, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ সরানো নিয়ে তাঁর অবস্থান কী। ‘আর বাকি কোম্পানিগুলো কী হবে, যেগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করছে? বিডিএস?’—প্রশ্ন করেন ক্রেমার। মামদানি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, এ শহরের সম্পৃক্ততা কোথায় সবচেয়ে স্পষ্ট, সেটা আগে বোঝা জরুরি।
‘সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, আমরা কোথায় সরাসরি জড়িত, সেটা চিহ্নিত করা। শহরের পেনশন তহবিলে ইসরায়েলি বন্ড কেনা আসলে আমাদের মূল্যবোধের স্পষ্ট প্রকাশ। আর আমরা জানি, আমাদের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে রয়েছে,’ বলেন মামদানি। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ‘নিউইয়র্ক স্টেট কমন রিটায়ারমেন্ট ফান্ড’–এ প্রায় ৩৫২ মিলিয়ন ডলারের ইসরায়েলি বন্ড ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান বা ফান্ড ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করে, সেসবের অন্যতম এটি। মামদানি ক্রেমারকে আরও বলেন, তিনি তাঁর প্রচারাভিযান চলাকালে বারবারই বলেছেন, বর্তমান প্রশাসন যেসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে, সেসব ক্ষেত্রে আইন মেনে চলায় ফিরতে হবে।
পেনশন তহবিলের মোট সম্পদ ও ইসরায়েলি বন্ডের অবস্থান : নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিল পাঁচটি আলাদা তহবিল নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্ক এমপ্লয়িজ রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম, নিউইয়র্ক সিটি ফায়ার পেনশন ফান্ড, নিউইয়র্ক পুলিশ পেনশন ফান্ড, নিউইয়র্ক সিটি টিচার্স রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম ও নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব এডুকেশন রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম। এই পেনশন তহবিলগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮৯ বিলিয়ন (২৮ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। এগুলো তত্ত্বাবধান করেন সিটির কম্পট্রোলার। প্রায় ৫০ বছর ধরে নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিল ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করে আসছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে বর্তমান কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার নীতি পরিবর্তন করেন।
২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ল্যান্ডার সিদ্ধান্ত নেন, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের পুরোনো বন্ডের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আর নতুন কোনো ইসরায়েলি বন্ড কেনা হবে না। কারণ হিসেবে তিনি শহরের নীতি অনুযায়ী বিদেশি সরকারের ঋণ এড়িয়ে চলার কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোর তুলনায় ইসরায়েলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়াও উচিত নয়। গত জুলাইয়ে ল্যান্ডারের এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর বিতর্ক শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস (বিডিএস)’ আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। তবে ল্যান্ডার দাবি করেন, তাঁর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ছিল না। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিলের প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন (৩১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ইসরায়েলি কোম্পানি ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ রয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে নিউইয়র্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি আবারও আলোচনায় আসেন। তিনি ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্রুকলিনে ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে এক টাউন হল সভায় যোগ দেন। এতে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্যান্ডার্সের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রুকলিন কলেজে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি স্যান্ডার্সের ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ ভ্রমণের অংশ ছিল। উল্লেখ্য, ফাইটিং অলিগার্কি ভ্রমণ বলতে বোঝানো হচ্ছে বার্নির দেশজুড়ে আয়োজন করা সভা–সমাবেশকে। এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে বড় করপোরেট গোষ্ঠী ও ধনকুবেরদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনতে আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। সন্ধ্যার ওই পুরো অনুষ্ঠান ছিল করপোরেট এবং ‘অলিগার্কিক’ স্বার্থ থেকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের বিষয়কে ঘিরে।
যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মামদানি তুলনামূলকভাবে মধ্যমপন্থী অবস্থান নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তবে স্যান্ডার্সের সঙ্গে সভার শুরুতেই তিনি তাঁর শিকড়মুখী অবস্থানে ফিরে আসেন। ফিলিস্তিনপন্থী মত প্রকাশ করায় চারজন অধ্যাপককে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষের বরখাস্তের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন মামদানি।