১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ

নেতাকর্মীরা প্লট-চাঁদা নেবে না, দুর্নীতি করবে না -সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ জামায়াত আমির

নেতাকর্মীরা প্লট-চাঁদা নেবে না, দুর্নীতি করবে না -সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যেতে পারলে মালিক নয় জনগণের সেবক হয়ে কাজ করবে, এমপি মন্ত্রী হলেও সরকারি প্লট নেবে না। ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বে না, চাঁদা নেবে না, দুর্নীতি করবে না-এমন ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “জামায়াত ইসলাম যদি দেশের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে। আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, লক্ষ জনতাকে সাথে নিয়ে আগামীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যদি সরকার গঠন করে। আমাদের কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকার থেকে কোনো প্লট গ্রহণ করবে না। ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চলবে না। নিজ হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ পেলে কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে কাজের প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো একটি লড়াই করার অঙ্গীকার করে এই লড়াইয়ে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে। ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব।”

“আমি বলি আরেকটা লড়াই হবে, ইনশাআল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করার জন্য। তারুণ্য ও যৌবনে শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করব,” বলেন তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, “জামায়াত ইসলামী যদি জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সরকার গঠন করে তাহলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করতে পারায় মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করে জামায়াতের আমির বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের পর অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সমাবেশ আয়োজন করার সুযোগ দিয়েছেন। দুদিন আগেও অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরেছে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন কি হবে? শান্তিতে বসে দুকথা শোনার সুযোগ কি হবে, বৃষ্টি নেই, তীব্র রোদও নেই। আজকের দিনটা অনেকটা এয়ারকন্ডিশন করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার গোলামদের প্রতি এই যে মেহেরবানী এজন্য আরেকবার খোদার দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।”

বিগত সাড়ে পনের বছরে হারিয়ে ফেলা দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, “সাড়ে পনের বছরে অন্ধকার কঠিন সময়ে যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে নির্যাতিত হয়ে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন, যারা লড়াই করে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আমরা তাদের সবার কাছে গভীরভাবে ঋণী। আল্লাহর দরবারে তওফিক চাই, বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে ততদিন যেন তাদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করার তওফিক দেন।”

দলের তিন নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “গভীর পরিতাপের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি, আজকের এই বিশাল সমাবেশ আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের তিনজন ভাই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। খুলনার দাকোপ উপজেলা জামায়াতের আমির ও পাবনার বয়োজ্যেষ্ঠ একজন মুরব্বি আসার পথে মারা গেছেন। আল্লাহ তাদেরকে তার কাছে তুলে নিয়েছেন। আমাদের আরেকজন নেতা শাহ আলম অনুষ্ঠানে এসে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা তাদের মাগফিরাত কামনা করছি। জামায়াত ইসলামী তাদের অবদান আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।”

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, হেফাজতের নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রাব্বানী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে আবরার ফাহাদের পিতা, আবু সাইদের ভাই, জুলাই যোদ্ধারা বক্তব্য দেন।

উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, মোয়াজ্জম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, উত্তরের প্রচার সেক্রেটারি আতাউর রহমানসহ জেলা ও মহানগরী ও উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।

জামায়াতের এই জাতীয় সমাবেশ লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে পরিণত হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীর ঢল নামে। দেশের প্রত্যেক এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা গাড়ির বহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতারাও নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে শোডাউন করেন। দুপুরের মধ্যেই নেতাকর্মীতে ভরে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একপর্যায়ে জায়গা না পেয়ে নেতাকর্মীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেয় পল্টন, মৎসভবন, শাহবাগ, কাটাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায়।

সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপুর্ণভাবে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ সমাপ্ত হয়।