২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কমিউনিটি

নিউইয়র্কে প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলায় নবী-জিনাত সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ডঃ সেজান মাহমুদ

নিউইয়র্কে প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলায় নবী-জিনাত সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ডঃ সেজান মাহমুদ

একটি জাতির জন্মপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নানাভাবে স্মরণের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় উত্তর আমেরিকার বৃহৎ পরিসরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা শেষ হয়েছে। ২৪ ও ২৫ মে নিউ ইয়র্কের উডহ্যাভেনে এলাকার জয়া হলে আয়োজন করা হয়েছিল ১ম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্র্তৃক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে অভিবাদন জ্ঞাপনের পর সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে ২৪ মে শনিবার দুপুর ১২টার সামান্য পরে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত খ্যাতিমান লেখিকা তসলিমা নাসরিন, এবারের বইমেলার আহ্বায়ক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড: নুরুন নবী, অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধার নিয়ে ১ম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করেছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ।এবারের আয়োজক ছিল ‘একাত্তরের প্রহরী’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদি-জঙ্গিদের প্রাণনাশের হুমকিতে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেন, ৩১ বছর যাবত নির্বাসিত জীবন-যাপন করছি। আমি নিজের দেশে যেতে পারি না। যে পশ্চিম বঙ্গে বাস করছিলাম সেখানেও নিরাপত্তাহীনতা, সেখানেও এখন আমার স্বাধীনতা নেই। এখানে আমি এসেছি শুধু দেখতে যে, কী ঘটছে এখানে। এই সিটিতেই আরেকটি বইমেলা হচ্ছে, শুনেছি ওখানে সবাই জয় বাংলার পক্ষে নয়, তাই ঐ বইমেলা (মুক্তধারা আয়োজিত মেলার প্রতি ইঙ্গিত করে) অনেক বড় এবং পুরনো জানা সত্বেও আমি ওখানে যাবার ব্যাপারে কোন আগ্রহ প্রকাশ করিনি। আমি এখানে এসেছি কারণ, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ।

তিনি আরোবলেন, আমি বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ এবং স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। আমি এখানে এসেছি এবং আপনাদের আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে এইভাবে সম্মান জানানোর জন্যে। কারণ আমি জানি ঐ বইমেলায় এমন অনেক মানুষ থাকবে যারা নারী বিদ্বেষী, যারা আমাকে ওখানে একেবারেই সম্মান জানাবে না, তা আমি জানি। সুতরাং আপনারা যে আন্তরিকতা দেখালেন তা আমি চিরকাল মনে রাখবো। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনির মধ্যে তসলিমা উচ্চারণ করেন, আপনারাই আমার দেশ। এখানে এসে এই যে ভালবাসা আমি পাচ্ছি সেই ভালবাসাই আমাদের দেশ।

গোপন সাহা, সাবিনা শারমিন এবং তাহরিনা পারভিন প্রীতির সাবলিল উপস্থাপনায় উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন আল আমিন বাবু এবং জাতীয় সঙ্গীতে নেতৃত্ব দেন নিলোফার জাহান।

সময়ের প্রয়োজনে ‘আমরা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল’ স্লোগানে আয়োজিত এই বইমেলার জন্যে গঠিত কমিটির কর্মকর্তাগণের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক, মানবাধিকার সংগঠক-লেখক-অধ্যাপক ড. পার্থ ব্যানার্জি, ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ, কম্যুনিটি লিডার রানা হাসান মাহমুদ, অধ্যাপক এ বি এম নাসের, সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গির, সাংস্কৃতিক সংগঠক লুৎফুন্নাহার লতা, মিথুন আহমেদ, ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী প্রমুখ। সমসাময়িক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে চমৎকার একটি মুক্ত আলোচনার সঞ্চালনা করেছেন মিনহাজ আহমেদ সাম্মু।

১ম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিদ্যাপ্রকাশ, নালন্দা, ঘুংঘুর,শব্দগুচ্ছ, অক্ষর, জয় বাংলা পাঠাগার, বিপা, অনুপমা বুকস, রাইটার্স ক্লাব, জয় বাংলা বুকস, আমরা শিশুদের সঙ্গী, গুরুচণ্ডালী,একাত্তরের প্রহরী সহ ছিল ১৬ টি বুক স্টল, যেখানে দেশ ও প্রবাসের খ্যাতিমান লেখকদের প্রকাশিত নতুন বইয়ের পাশাপাশি ইতিহাসভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থ। স্টলগুলোর দায়িত্বে ছিলেন লেখিকা স্মৃতি ভদ্র।

মেলার সকল আয়োজনকে ছাপিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত সুসংগঠিত করতে বিশেষ ভ’মিকা পালনকারি ‘স্বাধীনতায় ডাক টিকিট’র ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শনের সাথে বিরাঙ্গনাদের ওপর নির্মিত ‘জননী-৭১’র প্রদর্শন।

আয়োজকদের বক্তব্য অনুযায়ী মাত্র ১০ দিনের প্রস্তুতিতে অনুষ্ঠিত এ বইমেলায় এসেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, ওহাইয়ো, ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডা, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানী সহ বিভিন্ন স্টেট ও দেশের কবি-লেখক-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরাও।

শনিবার ২৪ মে মেলার ১ম দিনে জনপ্রিয় শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নির জাগরণী সঙ্গীতের মাধ্যমে গভীর রাতে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটার আগে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পর্বে ছিলেন আবীর আলমগীর, কান্তা আলমগীর, সেলিমা আশরাফ, নিলোফার জাহান, পারভিন সুলতানা, শুক্লা রায়, জারিন মাইশা, কামেলা সোফি আলম, আমিনা ইসলাম, রুদ্রনীল দাস রুপাই, পিঙ্কি চৌধুরী, পাপড়ি বড়ুয়া, দিনার মনি, আনিশা হোসেন, দানিয়া সৈয়দ দিয়া, এলমা রুদমিলা, লিমন চৌধুরী, ফারহানা তুলি, তন্ময় মজুমদার, জিএইচ আরজু, মুমু আনসারী প্রমুখ।

বইমেলার দ্বিতীয় দিন ২৫ মে রবিবার অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় বিকেল ছয়টায়। প্রামাণ্য চিত্র ‘জাতির যাদুঘর’ চরদর্ঢন করেন শামিম আল আমিন । এরপরেই ছিল শিশু কিশোর পরিবেশিত আবৃত্তি অনুষ্ঠান ‘শৈশবের হাতছানি’।

সঙ্গীত ও আবৃত্তিতে অংশ নেন বিদিশা দেওয়ানজী, মিথুন আহমেদ, তাহরিনা পারভিন । নবীন মেলায় ছিলেন তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা। সঙ্গীতে ফাবিহা নিসা এবং জাহিন হোসেন ।

এর পরেই ‘অভিবাসে দায়িত্বশীল সাহিত্য ও নতুনপ্রজন্মের সম্পৃক্তি’- শীর্ষক সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, বিশিষ্ট মুক্তচিন্তক ও লেখক আসলাম আহমাদ খান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট গল্পকার ও কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি। তিনি তাঁর লেখায় অনুবাদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন। বলেন, আমাদের প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মূল চেতনা পৌঁছে দিতে হলে তা ইংরেজীতে অনুবাদ করতে হবে। এই বিষয়ে তিনি বিভিন্ন রেফারেন্স দিয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য প্রয়াসের বিষয়টি তুলে ধরেন। এই সেমিনারে অংশ নেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক বদিউজ্জামান খসরু ও সমাজচিন্তক-রাজনীতিক রাফায়েত চৌধুরী।

স্বরচিত কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছড়াকার মনজুর কাদের। এর পরের পর্বে সঙ্গীত ও আবৃত্তিতে অংশ নেন- শেলি চন্দ , লিপি রোজারিও এবং শাহরিয়ার সালাম । প্রামান‍্যচিত্র ‘অবিনশ্বর ৭১’ সকলের মন কাড়ে সেই একাত্তরের চেতনায়। সঙ্গীত ও আবৃত্তিতে ছিলেন সুতপা মণ্ডল, তাহমিনা শহিদ, শারমিন আক্তার, বিলকিস রহমান দোলা। উত্তর আমেরিকার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রাজীব ভট্টাচার্য যখন মঞ্চে আসেন তখন হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ শুরু করে বেশ কয়েকটি গান তিনি গেয়ে শোনান দরদী কন্ঠে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে যুগ্ম আহ্বায়ক বইমেলা কমিটির অন্যতম সংগঠক মিনহাজ আহমেদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট কিংবা তারও আগে মধ্য জুলাই থেকে যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই সময়েই কিছু শব্দ তৈরি হয়েছে যার একটি হচ্ছে ‘লাল বদর’, যা এসেছে একাত্তরের আল বদরের অনুপ্রেরণা থেকে। এখন আমি একটি নতুন শব্দ যুক্ত করেছি—‘মাল বদর’। আপনারা কেউ এসব হবেন না এবং কাউকে প্রশ্রয় দেবেন না।

মেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কণ্ঠশিল্পী ও লেখক তাজুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা এই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে এমন প্রয়োজন হয়নি, কারণ ‘বাংলা বইমেলা’ বললেই চলতো। কিন্তু এখন বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত করা প্রয়োজন হয়েছে—কেন, তা আপনারা সবাই জানেন। এখন থেকে এই বইমেলা চালু থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও অপর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশকে নব্য হায়েনার কবল থেকে মুক্ত করতে না পারব, ততদিন এই বইমেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হবে। সামনের বছর আরও বৃহৎ পরিসরে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রস্তুতি আমরা শিগগিরই শুরু করবো।

বেলাল বেগের উপস্থিতি ছিল পুরো আয়োজনজুড়ে সরব। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে তার বক্তৃতা, গান, কবিতা ও কথকতায় নতুন প্রজন্ম ও প্রবাসীরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাবনা মুছে দিতে লাল বদরদের হিংস্র আচরণের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

২৫ মে রবিবার রাত তখন বারোটায় মেলার সদস্য সচিব স্বীকৃতি বড়ুয়ার আহ্বানে, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইমাম মঞ্চে গিয়ে ঘোষণা করেন সমাপ্তি। জানান এই বইমেলা আগামী বছর থেকে হবে আরও অনেক বৃহৎ পরিসরে। যে মেলা বিশ্বের বাঙালী সমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তা ক্রমশ ব্যাপৃতি লাভ করবে বিভিন্ন দেশে।

‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা ও নবী-জিনাত সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক ড: সেজান মাহমুদ

এবারেরর ১ম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা-২০২৫ তে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা ও নবী-জিনাত সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক ড:সেজান মাহমুদ। গত ২৪ মে, শনিবার এক মনোজ্ঞ আয়োজনের মধ্যদিয়ে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন, এবারের আহ্বায়ক ডঃ নুরুন নবী । নগদ অর্থসম্মানী লেখকের হাতে তুলে দেন, নবী ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্ণধার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও সমাজচিন্তক ড: জিনাত নবী। লেখককে ফুল দিয়ে বরণ করেন খ্যাতিমান শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন কবি ফকির ইলিয়াস।

অনুষ্ঠানে নবী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড: নুরুন নবী বলেন, অর্থসম্মানী এক হাজার ডলার ও একটি ক্রেস্ট দিয়ে এবারের পুরস্কারটি প্রবর্তিত হলো। আগামী বছরেই এর অর্থসম্মানী বাড়ানো হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট লেখক এই আজীবন সম্মাননা পাবেন। যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন,আদর্শ,কর্মযজ্ঞ,চেতনা, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের একাত্তর- এর আলোকে আজীবন লেখালেখি করেছেন।

পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ড: সেজান মাহমুদ বলেন, আমি একটি আদর্শ নিয়েই কৈশোর থেকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম। আমার মাতৃমাটির প্রতি আমি দায়বদ্ধ। এই পুরস্কার যারা প্রবর্তন করেছেন, নবী ফাউন্ডেশনের দুই ব্যক্তিত্ব আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন। বিচারকমণ্ডলী আমাকে নির্বাচন করায় আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।

আমি একথাটিই নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি আজীবন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কে ধারণ করেই জীবন পরিচালিত করতে চাই। এই সম্মাননা আমি সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেই সানন্দে গ্রহণ করছি।

সালেহ মোঃ মাহমুদুর রহমান যিনি লেখালেখি করেন সেজান মাহমুদ নামে, একজন বহু প্রতিভার লেখক। একাধারে কথাশিল্পী, কবি, গীতিকার, ছড়াকার, সুরকার, চলচ্চিত্রকার। অন্যদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য ও গ্লোবাল হেলথ বিশেষজ্ঞ। ঢাকা থেকে এম, বি, বি, এস পাশ করার পর আমেরিকার বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ডোক্রাইনোলজিতে ফেলোশিপ, জনস্বাস্থ্যে এম, পি, এইচ, এবং বার্মিংহাম থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপরে পি, এইচ, ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে কুইনিপীয়াক ইউনিভার্সিটির ফ্রাঙ্ক এইচ নেটার এমডি স্কুল অব মেডিসিনে ডিন ফর ইকুইটি, ইনক্লুশন এন্ড ডাইভার্সিটি এবং প্রফেসর অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস হিসাবে কর্মরত।

মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের গৌরবজনক ভূমিকার অকথিত সত্যি ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা বাংলাদেশের প্রথম ডকু-উপন্যাস ‘আপারেশন জ্যাকপট’ সৃশনশীলতা ছাড়িয়ে একটি দালিলিক গ্রন্থের সম্মান পেয়েছে। তাঁর নিরিক্ষাধর্মী উপন্যাস ’অগ্নিবালক’ (২০০৯) প্রকাশিত হলে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে “ফায়ার বর্ন” নামে প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের অস্টিন ম্যাকলি প্রকাশনী থেকে। তাঁর লেখা বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেনীর জাতীয় পাঠ্য বইতে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের পাশাপাশি (১৯৯৬)। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের গীতিকার হিসেবে লিখেছেন ‘নেলসন মেন্ডেলা’-সহ অনেক জনপ্রিয় গান। ডোমদের জীবন নিয়ে তাঁর তথ্যচিত্র “লাশকাটা ঘর’ পেয়েছে ‘রিচমন্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এওয়ার্ড’ (২০১৪)। তাঁর উপন্যাস ‘মনের ঘুড়ি লাটাই’ অবলম্বনে পুর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসাবে প্রকাশ করেছেন শতাধিক গবেষণাপত্র, নিবন্ধ, প্রবন্ধ।

প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ অগ্নিবালক (উপন্যাস), ফায়ার বর্ন(উপন্যাস ) , হারাম ও অন্যান্য গল্প (গল্পগ্রন্থ), অপারেশন জ্যাকপট, নির্বাচিত সায়েন্স ফিকশন, সায়েন্স ফিকশন সমগ্র-১, হার্ভার্ডের স্মৃতি ও অন্য এক আমেরিকা (স্মৃতিকথা), পথ হারানোর পথ (কলাম সমগ্র-১); মুক্তিযুদ্ধের কিশোর রচনা সমগ্র-১, বিজ্ঞান নির্ভর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র-১, প্রোজেক্ট ভূতং আধুনিকং (গল্পগ্রন্থ), হাবিজাবি (ছড়া), তুষার মানব, দ্বীপ পাহাড়ে আতঙ্ক, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ অভিযাত্রী, কিশোর রহস্য গল্প, পালটে শুধু লেবাস, ও ছড়ায় ছড়ায় সায়েন্স ফিকশন।

এর আগে তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রদত্ত পুরস্কার, আওয়ার প্রাইড এওয়ার্ড, আইফা লিটারেরি এন্ড সায়েন্স এওয়ার্ড এবং একাধিক আন্তর্জাতিক প্রফেশনাল পুরস্কার। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী চিকিৎসক ও অভিনয় শিল্পী তৃষ্ণা মাহমুদ, দুই পুত্র তিশিয়ান মাহমুদ ও রেনোয়া মাহমুদ কে নিয়ে বর্তমানে বাস করছেন আমেরিকার কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যে।