নিউইয়র্ক     শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে রীতি ভেঙে জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তরুণ-তরুণীরা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ০৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ০৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পাকিস্তানে রীতি ভেঙে জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তরুণ-তরুণীরা

পাকিস্তানের বেশ কিছু তরুণ-তরুণী বিয়ের জন্য সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী বেছে নিতে সম্প্রতি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে জড়ো হয়েছিলেন। মুসলিম পাত্রপাত্রী খোঁজার যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অ্যাপের উদ্যোগে এই সম্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল। পাকিস্তানে সাধারণত মা–বাবার পছন্দেই সন্তানদের বিয়ে করতে হয়। ২৪ কোটি মানুষের দেশটিতে সাধারণত ডেটিং অ্যাপকে ভালো চোখে দেখা হয় না।

রক্ষণশীল দেশটির সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে চলাফেরা, মেলামেশাকে নিরুৎসাহিত করা হয়।বিয়ের উপযোগী পাত্রপাত্রীদের সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী বেছে নিতে সম্প্রতি লাহোরে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল মুজ। আগে অ্যাপটির নাম ছিল মুজম্যাচ। তারা নিজেদের মুসলিম রীতিনীতিতে পরিচালিত অ্যাপ হিসেবে উল্লেখ করে। অ্যাপটি শুধু মুসলিমরাই ব্যবহার করতে পারেন। এখানে পাত্রপাত্রী চাইলে নিজেদের ছবি ঝাপসা (ব্লার) করে রাখতে পারেন। পাত্রপাত্রীর সামনাসামনি দেখা হওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্গে অভিভাবকেরা যেতে পারেন।

পাকিস্তানে পাত্রপাত্রী বাছাইয়ের প্রচলিত রীতিকে চ্যালেঞ্জ করে দেশটিতে আরও কিছু ছোটখাটো অনুষ্ঠান হচ্ছে। মুজ অ্যাপটি নিয়ে অতীতে পাকিস্তানে অনলাইনে সমালোচনা হতে দেখা গেছে। তা সত্ত্বেও অ্যাপটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তেমনই একজন ৩১ বছর বয়সী পাকিস্তানি নারী আইমেন। তিনি তাঁর পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। আইমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাঁর ভাইয়ের পরামর্শেই তিনি অ্যাপটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আইমেন বলেন, ‘আমি দুই সপ্তাহ অ্যাপটি ব্যবহার করেছি। তখন আমি এই অনুষ্ঠানের (জমায়েত) একটি বিজ্ঞাপন দেখি। ভাবতে থাকি, অনুষ্ঠানে গিয়ে কেন আগতদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করব না?’

আইমেন বলেন, অভিভাবক হিসেবে সঙ্গে তাঁর মায়ের থাকার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সঙ্গে থাকতে পারেননি।

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে মুজ অ্যাপ যাত্রা শুরু করে। একটা ভালোসংখ্যক মুসলিম এই অ্যাপ ব্যবহার করে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী মরক্কোর। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান। দেশটির ১৫ লাখের বেশি মানুষ অ্যাপটি ব্যবহার করে।

পাকিস্তানের ২৭ বছর বয়সী তরুণ মোয়াজ বলেন, তিনি এক বছর ধরে মুজ অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। তাঁর আশা, এই অ্যাপের মাধ্যমে তিনি তাঁর জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবেন।

মোয়াজ আরও বলেন, তিনি তাঁর পছন্দসই পাত্রী পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যাঁদের পছন্দ করছেন, তাঁদের আবার চাওয়া ভিন্ন। সম্ভাব্য পাত্রীরা চাচ্ছেন, শুরু থেকেই তিনি যেন তাঁর মা-বাবাকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন। তবে মোয়াজ শুরুতেই সেটা করতে চান না। বিয়ের লক্ষ্যে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া-জানাশোনাটা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

অ্যানি’স ম্যাচমেকিং পার্টি নামে গত সপ্তাহে লাহোরে আরেকটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। বাছাইপ্রক্রিয়া শেষে ২০ জন তরুণ পাত্রপাত্রীকে সামনাসামনি দেখা করা জন্য সেখানে ডাকা হয়েছিল।

এ ধরনের আয়োজন করায় ৩০ বছর বয়সী আয়োজক নূর-উল-আইন চৌধুরীকে অনলাইনে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তাঁর দাবি, বিয়ের উদ্দেশ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের সাক্ষাতের জন্য একটি নিরাপদ পরিসর দেওয়া, যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়াই ছিল এই আয়োজনের লক্ষ্য।

নূর-উল-আইন চৌধুরী আরও বলেন, পাকিস্তানে দুটি বিকল্প আছে। একটি হলো, একপেশে পারিবারিক বিয়ে। অন্যটি হলো ডেটিং অ্যাপের ব্যবহার, যেটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তা ছাড়া এখানে কোনো নিশ্চয়তাও নেই।

সম্ভাব্য পাত্রপাত্রীদের সামনাসামনি দেখা করানোর আয়োজন চলাকালে সবার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন নূর-উল-আইন চৌধুরী।

মুজ অ্যাপ আয়োজিত সম্মিলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের একজন ২২ বছর বয়সী পাকিস্তানি আবদুল্লাহ আহমেদ। তাঁর ভাষ্য, তিনি সম্ভবত তাঁর পছন্দের পাত্রীর খোঁজ পেয়ে গেছেন।

শেয়ার করুন