গত মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ মন্তব্য করেন। কাশ্মীর সংকট সমাধানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো পদক্ষেপ নিলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গত মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) প্রতিটি পদক্ষেপ এমনভাবে নেন, যেন তা দেশগুলোর মধ্যে কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসা বিরোধ মেটাতে বা যুদ্ধের ইতি টানতে সহায়ক হয়। সুতরাং এমন একটি বিষয়ে (কাশ্মীর) তিনি যদি হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহ দেখান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’
‘তিনি (ট্রাম্প) শুধু আগ্রহীই নন; বরং এমন কিছু ব্যক্তিকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন, যাঁদের একসঙ্গে বসার কথা কেউ কল্পনাও করেনি। এটা তিনিই একমাত্র পেরেছেন। তাই আমি তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে দুনিয়া তাঁর স্বভাব সম্পর্কে জানে। এ (কাশ্মীর) বিষয়ে তিনি কী করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে আপনি চাইলে হোয়াইট হাউসে ফোন করে জানতে পারেন। আমার ধারণা, সেখানে এ নিয়ে বলার মতো অনেক কিছু আছে।’
বর্তমান সময়কে আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে ব্রুস বলেন, ‘যদি আমরা ওই সংঘাতের (কাশ্মীর) ক্ষেত্রে একটি সমাধানের দিকে যেতে পারি, তাহলে সৃষ্টিকর্তার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী (মার্কো) রুবিও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকেও (জেডি ভ্যান্স) ধন্যবাদ দিতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রতিদিনই কিছু নতুন ঘটনা ঘটছে। আশা করি, এ বিষয়ও প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সমাধান হয়ে যেতে পারে।’
দ্য ডন–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সামরিক উত্তেজনার পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেন। শান্তি স্থাপনে দুই দেশের নেতারা যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, ট্রাম্প সেটার প্রশংসা করেছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের দুজনের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী, যেন কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়।’
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফর প্রসঙ্গে ব্রুস জানান, প্রতিনিধিদলটি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালিসন হুকার। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এবং চলমান যুদ্ধবিরতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়গুলো উঠে আসে।
ব্রুস বলেন, ‘আমরা জানি যে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যান্ডাউ গত সপ্তাহে ভারতের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তিনি সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মহলে নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি একটি ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান। তারা ইসলামাবাদ-নয়াদিল্লির মধ্যকার উত্তেজনা কমাতে এবং কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। পাশাপাশি ভারতীয় লবির প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাকে কোনো কৃতিত্ব দেয় না। কিন্তু অন্য কেউ এটা থামাতে পারত না।’ ট্রাম্প এখানে ভারতের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যস্থতার জন্য ভারত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তান মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে।