নিউইয়র্ক     সোমবার, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট দেউলিয়াত্বের (ব্যাঙ্কক্রাপসি) আবেদন ১৪ বছরের সর্বোচ্চ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট দেউলিয়াত্বের (ব্যাঙ্কক্রাপসি) আবেদন ১৪ বছরের সর্বোচ্চ

মার্কিন করপোরেট খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেউলিয়াত্বের আবেদন বাড়ছে, যা ২০২৪ সালে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। কারণ হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির কিছু দুর্বলতাকে সামনে আনছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উচ্চ সুদহার ও দুর্বল ভোক্তা চাহিদা অনেক প্রতিষ্ঠানকে সংকটজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ওই ধরনের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংস্থানে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়াত্বের আবেদন জানাতে বাধ্য হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করেছে এফটি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৬৮৬টি কোম্পানি দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে ২০১০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ ওই বছর ৮২৮টি করপোরেট কোম্পানি আর্থিক সুরক্ষা চেয়ে দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছিল।

সঅ্যান্ডপির তথ্য অনুসারে, দেউলিয়াত্বের আবেদনের সময় অন্তত ৩০টি কোম্পানির দায়ের পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার। দেউলিয়াত্ব এড়ানোর জন্য আদালতের বাইরে নেয়া পদক্ষেপের হার গত বছর বেড়েছে। ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংসের তথ্য অনুসারে, আদালতের বাইরে নেয়া পদক্ষেপ ছিল দেউলিয়াত্ব আবেদনের তুলনায় প্রায় দুই গুণ। এসব কারণে ২০১৬ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছে গত বছর। পার্টি সাপ্লাই রিটেইলার পার্টি সিটির পতন ছিল ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট ব্যর্থতার একটি আলোচিত ঘটনা। দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়াত্বের আবেদন করে, এর আগে অক্টোবর ২০২৩-এ চ্যাপ্টার ইলেভেন কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

ওই সময় পার্টি সিটি জানায়, মূল্যস্ফীতির চাপ ও ভোক্তা ব্যয় কমার প্রভাবসহ অন্যান্য কারণে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবেশে টিকে থাকতে প্রতিষ্ঠানটি লড়াই করে আসছে। সামনে তারা ৭০০টি দোকান বন্ধ করে দেবে। কভিড মহামারীর পর ভোক্তারা সরকারি প্রণোদনা পেয়েছিল। সে প্রণোদনা কমে যাওয়ার পর ভোক্তা চাহিদা কমেছে। এতে বিশেষ করে ওই সব প্রতিষ্ঠানে বিক্রি কমেছে, যাদের পণ্য ভোক্তার প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর বাকি সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। ২০২৪ সালে দেউলিয়াত্বের আবেদন করা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো ফুডওয়্যার প্রস্তুতকারক টাপারওয়্যার, রেস্তোরাঁ চেইন রেড লবস্টার, স্পিরিট এয়ারলাইনস ও প্রসাধনী খুচরা বিক্রেতা অ্যাভন প্রডাক্টস।

এ বিষয়ে বিশ্লেষক সংস্থা ইওয়াইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ডাকো বলেন, ‘পণ্য ও সেবার ক্রমাগত উচ্চ খরচ ভোক্তাদের চাহিদাকে প্রভাবিত করছে। এ বোঝা নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য অনেক ভারী। এমনকি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেও আগের তুলনায় বেশি সতর্কতা লক্ষ করবেন।’ তবে গত বছরের শেষ থেকে কোম্পানি ও ভোক্তাদের ওপর চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কারণ রেকর্ড সময় ধরে সর্বোচ্চ স্তরে আটকে থাকার পর ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাতে শুরু করেছে। যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে মাত্র অর্ধশতাংশীয় পয়েন্টে সুদহার কমানোর পরিকল্পনা করছেন।

একাডেমি সিকিউরিটিজের ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান পিটার টচির জানান, মার্কিন অর্থনীতিতে এ পরিস্থিতি শিথিল করার মতো কিছু উপাদান রয়েছে। এর অন্যতম হলো ঝুঁকিপূর্ণ করপোরেট ঋণ ও সরকারি ঋণের সুদহারের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম পার্থক্য। দেউলিয়াত্বের আবেদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই যা ঘটছে ভালো কিছু নয়। তবে এর ফলস্বরূপ বৃহত্তর অর্থনীতি বা ব্যাংকিং সিস্টেমে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সেটা আমাকে উদ্বিগ্ন আর করে না।’

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে সম্মিলিতভাবে ৭৭৭টি কোম্পানি দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছিল। ওই সময় ঋণের খরচের ওপর ফেডের সুদহার কমানোর পদক্ষেপের প্রভাব পড়ে। দেউলিয়াত্বের আবেদন ২০২৩ সালে ৬৩৬-এ উঠে আসে এবং পরের বছর আরো বেড়েছে। তবে ২০২৪ সালের শেষের দিকে আবেদনের হার কমতে শুরু করেছিল। এসঅ্যান্ডপির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের দেউলিয়া ঘোষণাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি কোম্পানির দায় ছিল ১০০ কোটি ডলারের বেশি।

সাধারণত দেউলিয়াত্ব এড়ানোর জন্য আদালতের বাইরে নেয়া পদক্ষেপের হার আবেদনের হারের সমান হয়। এ ধরনের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে প্রায় ‘দায় ব্যবস্থাপনা অনুশীলন’ বলা হয়। আর্থিক দুর্বলতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ প্রবণতা আরো সাধারণ হয়ে উঠেছে, যা মার্কিন করপোরেট ঋণ খেলাপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তৈরি করছে। ফিচ রেটিংয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর জোশুয়া ক্লার্কের মতে, এ প্রবণতা ২০২৪ সালে অব্যাহত ছিল। ঋণ পুনর্গঠনের এ পদক্ষেপ সাধারণত দেউলিয়াত্বের আবেদনের আগে শেষ অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনগত সমস্যা সমাধান করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়ে পড়ে।

জোশুয়া ক্লার্কের মতে, সাধারণত ভাবা হয় ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে মুনাফা বাড়বে অথবা সুদহার কমবে কিংবা এ উভয়ের সংমিশ্রণ ঘটবে, যা দেউলিয়াত্ব এড়ানোর জন্য প্রয়োজন। আবার এ ধরনের দায় মোকাবেলা কর্মসূচি ঋণদাতাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এ প্রক্রিয়া বিদ্যমান দায়ের সঙ্গে আরো ঋণ যুক্ত করে।

শেয়ার করুন