নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অশান্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, বিএসএফের গুলিতে নিহত এক ভারতীয়

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
অশান্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, বিএসএফের গুলিতে নিহত এক ভারতীয়

কোচবিহার সীমান্তে এক ২২ বছরের যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে। বিএসএফ-এর দাবি, ওই ব্যক্তি চোরাচালানে যুক্ত ছিলেন। ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একাধিক জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে এক যুবককে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠেছে। মৃত য়ুবকের নাম জাহানুর হক।

বিএসএফ-এর দাবি, ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ বিএসএফ-এর জওয়ান দেখেন, একটি দল ভারতের দিক থেকে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঢোকার চেষ্টা করছে। জওয়ান বাধা দিলে তাকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ধরে ওই দলটি। তখন বাধ্য হয়ে গুলি চালান ওই জওয়ান। তাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়, বাকিরা পালিয়ে যায়। বিএসএফ বলছে, ওই যুবক চোরাচালানকারী ছিল। বিএসএফ-এর ওই জওয়ানও আহত হয়েছেন বলে বিএসএফ দাবি করেছে।

এদিকে মৃত জাহানুরের পরিবার বিএসএফ-এর দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। কোচবিহারের দিনহাটা এক নম্বর ব্লকে জাহানুরের বাড়ি। ডয়চে ভেলেকে তার মা রিনা বিবি জানিয়েছেন, ”জাহানুর পরিযায়ী শ্রমিক। ১০-১২ দিন আগে তিনি বেঙ্গালুরু থেকে দেশের বাড়ি ফিরেছিলেন। কয়েকদিন থাকার কথা ছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটলো।”

বিএসএফ দাবি করেছে, একটি আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহানুর। সীমান্তের দুই পারেই তার দল ছিল। কিন্তু জাহানুরের মায়ের দাবি, এমন কোনো দলের সঙ্গে তার ছেলের যোগাযোগ ছিল না। কারণ, তিনি সেখানে থাকতেনই না। মায়ের বক্তব্য, কাঁটাতারের অন্যপারে তাদের তিন বিঘা জমি আছে। তার স্বামী এবং জাহানুর দু’জনের নামেই বিএসএফ কার্ড বানিয়ে দিয়েছিল, সেই কার্ড নিয়ে তারা অন্যপারে গিয়ে চাষ করতেন। এদিনও তিনি ভেবেছিলেন, ছেলে ক্ষেতে গেছেন। পরে তার মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছায়। মায়ের অভিযোগ, তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে বিএসএফ।

কোচবিহারে তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহও বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ”ঈদ পালন করতে ওই যুবক দেশে ফিরেছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর অত্যাচার মাত্রাছাড়া পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

সীমান্ত হত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে মাসুম সংগঠন। তার কর্ণধার বিশিষ্ট সমাজকর্মী কিরীটি রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”আরো একটা সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটলো। বিএসএফ আবার সেই একই ন্যারেটিভ তৈরি করলো। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে এর ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে।”

দক্ষিণবঙ্গেও অশান্তি : দক্ষিণবঙ্গেও এদিন অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। নদিয়ায় ১৯৪ ব্যাটেলিয়নের ফাঁড়ির কাছে রীতিমতো লড়াই হয় বলে বিএসএফ জানিয়েছে। বিএসএফ-এর দাবি রাত ২টো ১৫ নাগাদ প্রহরারত জওয়ানরা দেখেন সীমান্ত পার করার চেষ্টা করছে একটি দল। বাংলাদেশের দিক থেকে তারা ভারতে ঢুকছিলেন বলে অভিযোগ। সে সময় বিএসএফ-এর জওয়ান পিএজি গুলি চালায় বলে জানিয়েছে বিএসএফ। তাতে ওই দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দলটি বিএসএফ-এর জওয়ানকে ঘিরে ফেলে বলে অভিযোগ। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই জওয়ান হাসপাতালে ভর্তি বলে জানিয়েছে বিএসএফ। তবে ওই জওয়ানকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে অন্য জওয়ানরা চলে এলে দলটি পালিয়ে যায় বলে বিএসএফ জানিয়েছে। ওই পোস্টের কাছেই আরেক জায়গাতেও এদিন বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন