নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্য এক ইরানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতের নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে যে গত ৫ নভেম্বরমঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ইরানের অ্যাজেন্টরা বর্তমানে ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আর সেজন্য তারা সরকারের সমালোচকদের এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যান্য ষড়যন্ত্র বাদ দিতেও রাজি ছিলেন।
অভিযুক্ত এই অ্যাজেন্ট হলেন ৫১ বছর বয়সী ফারহাদ শাকেরি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাথে তার একাধিক সংলাপে সন্দেহভাজনদের ভাড়া করা নিয়ে আলাপের সময়ে একটি নথিতে বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
নথিপত্রগুলোতে এমন আভাস পাওয়া যায় যে শাকারি যুক্তরাষ্ট্রে আটক একজন বন্দির জেলের মেয়াদ কমাতে এফবিআইয়ের সাথে কথা বলতে রাজি হন। তবে শাকারি দাবি করেছেন, ওই সব সংলাপের সময়ে তিনি তেহরানে ছিলেন।
শাকারি এফবিআইকে বলেন যে ইসলামিক রিভ্যুলিউশানারি গার্ড কোরের এক কর্মকর্তা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষ অবধি তার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনিই নিউ ইয়র্কের একজন ইরানি ভিন্ন মতাবলম্বী ও সাংবাদিকের পরিবর্তে ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করতে বলেন।
শাকেরি বলেন, তাকে সাত দিনের মধ্যে পরিকল্পনা দেয়ার কথা বলা হয়। এই ব্যক্তিটি বলেন, ট্রাম্পকে টার্গেট করাটা ব্যয়বহুল ব্যাপার হবে। তখন ইসলামিক রিভ্যুলিউশানারি গার্ড কোরের ওই কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই অনেক অর্থ ব্যয় করেছি … অর্থ কোন ব্যাপার নয়।’
তিনি এফবিআইকে বলেন, সাত দিন সময়ের মধ্যে যদি পরিকল্পনাটি গঠন করা না হয় তা হলে ইসলামিক রিভ্যুলিউশানারি গার্ড কোরের ওই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেন। তাদের যুক্তি ছিল যে ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজিত হলে তাকে হত্যা করা সহজ হবে।
আদালতের ওই নথিতে অবশ্য এ কথা বলা হয়নি যে এফবিআইয়ের সাথে শাকেরির এই আলাপচারিতা আইআরজিসি কিংবা ইরানের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত। জাতিসঙ্ঘে ইরানি মিশনকে এ ব্যাপারে মন্তব্য করার অনুরাধ জানানো হলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
২০২০ সালে বাগদাদে যে ড্রোন আক্রমণে আইআরজিসির কুদস বাহিনীর নেতা কাসেম সোলেইমানি নিহত হন, তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রাক্তন ও ভবিষ্যত প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়।
আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আসিফ মার্চেন্ট নামের এক পাকিস্তানি নাগরিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনে যে তিনি কয়েক মাস আগে ইরানের পক্ষে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি ট্রাম্প এবং অন্যদের হত্যার জন্য লোকের সন্ধান করছিল। সূত্র : ভিওএ
ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্রের দাবি সরাসরি নাকচ করল ইরান
রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরান আমেরিকার মাটিতে হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় যে অভিযোগ করেছে তা জোরালো ভাষায় নাকচ করেছে তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি আজ (শনিবার) এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন আদালতের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং প্রমাণহীন।
তিনি বলেন, ইরানবিরোধী চক্র এই সন্ধিক্ষণে এ ধরনের দাবির পুনরাবৃত্তির মধ্যদিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ চক্রান্ত করছে যার লক্ষ্য হলো আমেরিকা ও ইরানের মধ্যকার সমস্যাগুলোকে আরো জটিল করা।
বাকায়ি জোর দিয়ে বলেন, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তেহরান বৈধ এবং আইনগত সমস্ত উপায় অবলম্বন করবে।
গতকাল ৮ নভেম্বর মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় অভিযোগ তুলেছে, গত মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই ইরান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।
নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র একজন কর্মকর্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার জন্য একটি চুক্তি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত আগস্ট মাসে ইরান জানিয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে আটক পাকিস্তানি নাগরিকের সাথে ইরানের কোনো রকমের যোগাযোগ নেই। সূত্র : প্রেস টিভি