বিশ্বের নানা প্রান্তে সাতটি যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করলেও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ ট্রাম্প যাতে নোবেল পুরস্কার পান, তার জন্য সক্রিয় হয়েছিল হোয়াইট হাউস। ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন যে, তিনি ওই পুরস্কারের দাবিদার। শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটের সময় সমস্ত জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে নোবেল কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো। কেন ট্রাম্প এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হলেন না, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে কমিটির প্রধান ইয়োর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস জানান, আলফ্রেড নোবেলের কাজ এবং আদর্শের কথা মাথায় রেখেই পুরস্কার দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্পের নাম না-করে ইয়োর্গেন বলেন, “এই কমিটির (নোবেল কমিটি) সদস্যেরা এই ঘরে যখন বসেন, তখন কেবল পুরস্কারজয়ীদের ছবিই আশপাশে থাকে না, থাকে সাহস এবং সততাও। তাই আমরা আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র (উইল) এবং কাজ অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।” ট্রাম্পের নাম না-করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাজ নোবেলের আদর্শবিরোধী— প্রকারান্তরে এমন ব্যাখ্যাই তিনি দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র (উইল) অনুসারে নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপকের নাম ঘোষণা করে থাকে নরওয়ের নোবেল কমিটি। পাঁচ জনের একটি কমিটি গত সোমবারই (৬ অক্টোবর) বেছে নিয়েছেন এ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারবিজয়ীর নাম। ট্রাম্প যে শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন না, শুক্রবার সকালেই এমন ইঙ্গিত মিলেছিল। অসলোর ‘পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান নীনা গ্রেগের জানান, যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়েছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন বন্ধু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংঘাতে জড়িয়েছেন। নোবেলের ইচ্ছাপত্রে যে আদর্শের কথা বলা হয়েছে, এই কাজ সেগুলির সঙ্গে খাপ খায় না বলে জানান নীনা।
সাত যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব বেশ কয়েক মাস ধরেই দাবি করে আসছেন ট্রাম্প। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতও। তার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে গাজ়ায় শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ। আসলে নোবেল পুরস্কারের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন তার ঠিক ১১ দিন আগে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর যুদ্ধ থামানোর যাবতীয় ‘কৃতিত্ব’ এ ক্ষেত্রে বিচার্য না-হওয়ারই কথা ছিল।
নরওয়ের সরকার এর আগে বহু বার জানিয়েছে যে, নোবেলবিজয়ীর নাম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনও হাত নেই। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সে দেশের নোবেল কমিটিই। কিন্তু পুরস্কার না-পেয়ে ট্রাম্প নরওয়ের উপর শাস্তির খাঁড়া নামাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সে দেশের অনেকেই। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছে নরওয়ের। চলতি সপ্তাহেই ওয়াশিংটনে গিয়ে আমেরিকার কয়েক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন নরওয়ের বাণিজ্যমন্ত্রী সিসিলি মিরসেথ। এই পরিস্থিতিতে নোবেল না-পেয়ে ট্রাম্প বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে দিতে পারেন বলে মনে করছে নরওয়ে। তা ছাড়া কড়া শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।