১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক: ভারতীয় কোন কোন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রফতানি পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৭ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ না করায় ভারতের বিরুদ্ধে এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রফতানি খাতের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। বিশেষ করে সামুদ্রিক খাদ্য, বস্ত্র ও পোশাক, রত্ন ও গয়না, এবং অটো পার্টস খাত এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।

নিম্ন শুল্ক সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় রফতানিকারকরা এখন বড় প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন। অনেক শিল্পপতি এই পরিস্থিতিকে ‘ডুমসডে’ বা প্রলয় সমতুল্য বলে অভিহিত করেছেন এবং অনেকেই উৎপাদন কার্যক্রম অন্য দেশে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।

স্বস্তিকা ইনভেস্টমার্ট-এর রিসার্চ প্রধান সন্তোষ মীনা বলেন, ‘শুল্ক বৃদ্ধির খবরটি প্রত্যাশিত ছিল, তবে এর প্রভাব বিশাল। ২৭ আগস্ট থেকে ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে। এখনো আলোচনার জন্য ২০ দিন সময় আছে এবং ২৪ আগস্ট একটি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ভারত সফরে আসবে।‘

বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, চামড়া শিল্পের মতো শ্রমনির্ভর খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানির প্রায় ৪০% মার্কিন বাজারে যায়, যার বড় অংশ চিংড়ি। ভারতের সি-ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন কুমার বলেন, ‘এই খাতে কৃষকদের ওপরও বড় প্রভাব পড়বে।‘ পশ্চিম উপকূলের এক রফতানিকারক জানান, প্রায় ১৫% পণ্য স্টকে থেকে যায়, যেগুলোর বিক্রি এখন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নতুন মৌসুম শুরু হলেও অনেক কৃষক উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারেন।

তিরুপ্পুর, নয়ডা ও সুরাটের অনেক টেক্সটাইল রফতানিকারক এরইমধ্যে মার্কিন বাজারের জন্য উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। তিরুপ্পুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এ শক্‌তিভেল বলেন, ‘এই শুল্ক বৃদ্ধি আগামী ৩০-৪০ দিন আমাদের রফতানিতে বড় প্রভাব ফেলবে।‘

ভারতের টেক্সটাইল শিল্প সংস্থা সিআইটিআই-এর সাবেক সভাপতি সঞ্জয় জৈন বলেন, ‘নতুন অর্ডার আসবে না, পুরনো অর্ডারও ক্ষতি মেনেই পাঠাতে হবে।‘ আর বর্তমান চেয়ারম্যান রাকেশ মেহরা বলেন, ‘আমাদের মার্কেট শেয়ার কমে যাবে। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ এরইমধ্যে মার্কিন বাজারে বড় প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে।‘

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের রত্ন ও গয়না রফতানি ছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে। এই খাতের নেতারা এখন দুবাই ও মেক্সিকোর মতো দেশে উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের কথা ভাবছেন। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কিরণ ভনসালি বলেন, ‘৫০% শুল্ক আমাদের টিকে থাকা কঠিন করে তুলেছে।‘

তিনি বলেন, ‘আমরা দুবাই এবং মেক্সিকোর মাধ্যমে রফতানি চালিয়ে যেতে পারি। সবকিছুই বৈধ উপায়ে।‘ টাইটান কোম্পানিও মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদন সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।

ভারতের ৬১ হাজার কোটি টাকার অটো পার্টস রফতানির মধ্যে ৩২% যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এখন এই পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক বসবে। বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এবার প্রায় অর্ধেক রফতানি এই শুল্কের আওতায় পড়বে।

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে শ্রমনির্ভর খাতে কর্মসংস্থান হ্রাসের আশঙ্কা বাড়ছে। এইচডিএফসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সাক্ষী গুপ্তা বলেন, ‘চাকরি, বিনিয়োগ এবং উৎপাদন খাতে দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে পারে। এরইমধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে শ্রমবাজার দুর্বল ছিল।‘ জুনে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৬%।

ব্যাংক অব বরোদার প্রধান অর্থনীতিবিদ মদন সাবনাভিস বলেন, ‘ভারতের জন্য এটি বড় ধাক্কা। এখনই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।‘ তিনি বলেন, রফতানি কমে যাওয়া এবং তেল আমদানির বিল বেড়ে যাওয়ার ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং জিডিপিতে প্রভাব পড়তে পারে।খবর ইন্ডিয়া টুডে।