১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

‘জিমি কিমেল শো’ বাতিলের পর ‘ট্রাম্প-বিরোধী’ টিভি নেটওয়ার্কেরও লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

‘জিমি কিমেল শো’ বাতিলের পর ‘ট্রাম্প-বিরোধী’ টিভি নেটওয়ার্কেরও লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে, যখন ‘জিমি কিমেল লাইভ!’ অনুষ্ঠানে কার্ক হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে কিমেল ইঙ্গিত দেন, সন্দেহভাজন হত্যাকারী ট্রাম্পের সমর্থক বা ‘ম্যাগা রিপাবলিকান’। যদিও পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী।

যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জনপ্রিয় টক শো উপস্থাপক জিমি কিমেল তার অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন। এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন এবিসি টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিলে, তড়িঘড়ি করে ‘জিমি কিমেল শো’ বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিমেলের অনুষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প আরও কয়েকটি টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে, রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিমি কিমেলের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি নেটওয়ার্কের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘জিমি কিমেল লাইভ!’-এর একটি পর্বে কিমেল সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে ট্রাম্পের সমর্থক বা ‘ম্যাগা রিপাবলিকান’ বলে ইঙ্গিত করেন। যদিও উটাহ্‌ প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী।

কিমেলের এই মন্তব্যের পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) এবিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। চাপের মুখে গত বুধবার এবিসি কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কিমেলের অনুষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে। যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুনেছি, টিভি নেটওয়ার্কগুলো আমার ৯৭ শতাংশ বিরোধী। তারা শুধু আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবরই প্রচার করে। অথচ আমি গত নির্বাচনে সহজেই জয়ী হয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে শুধু কুৎসা রটনা করছে। আমার মনে হয়, তাদের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া উচিত।’ জিমি কিমেলের অনুষ্ঠান বন্ধের এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা এবং লেখক-নির্মাতারা। ওবামা এটিকে ‘ক্যান্সেল কালচার’ এ’র এক নতুন ও বিপজ্জনক রূপ বলে আখ্যা দিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘বর্তমান প্রশাসন গণমাধ্যম সংস্থাগুলোকে ভয় দেখিয়ে তাদের অপছন্দের ভাষ্যকারদের মুখ চেপে রাখতে চায়।’

অভিনেতা বেন স্টিলার, জ্যঁ স্মার্টসহ অনেকেই কিমেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সিবিএস চ্যানেলের উপস্থাপক স্টিফেন কোলবার্ট এটিকে ‘নির্লজ্জ সেন্সরশিপ’ বলে অভিহিত করেছেন। হলিউডের লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের প্রভাবশালী দুটি সংগঠনও একে বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান।

তবে ভিন্নমতও রয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি ‘ক্যান্সেল কালচার’ নয়, বরং নিজের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। ফক্স নিউজের উপস্থাপক গ্রেগ গাটফেল্ড এবং ব্রিটিশ উপস্থাপক পিয়ার্স মরগানের মতো সমালোচকদের মতে, কিমেল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার করেছেন এবং এর পরিণতি তাকে ভোগ করতে হচ্ছে। এদিকে, আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে অনুযায়ী রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে কোনো গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা আইনগতভাবে কঠিন।

এই ঘটনায় ‘জিমি কিমেল লাইভ!’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানটির একজন সাবেক লেখক জানিয়েছেন, পর্দার আড়ালে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চললেও কর্মীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

গত ১০ সেপ্টেম্বর উটাহ্‌ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন রক্ষণশীল অ্যাক্টিভিস্ট চার্লি কার্ক। এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।