২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মার্কিন অর্থনীতিকে চাপে রেখেই শুল্ক কার্যকর করছেন ট্রাম্প

মার্কিন অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে রেখেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক ডজন দেশের ওপর উচ্চ আমদানি কর আরোপ শুরু করেছেন। ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দৃশ্যমান ক্ষতিসাধন করেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই ৬০টিরও বেশি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। যেখানে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানির ওপর ২০ শতাংশ আরোপ করা হয়। ট্রাম্প আশা করেন ইইউ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

ট্রাম্পের একের পর এক নতুন শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত করেছে। ফলে মার্কিন ব্যবসা এবং দেশটির জনগণের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। কারণ ট্রাম্প বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। শুল্ক আরোপ পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় নিতে গিয়ে বারবার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।

গত বুধবার ট্রাম্প রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যার ফলে ভারতের মোট আমদানি কর ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। ভারতীয় রপ্তানিকারকদের একটি শীর্ষস্থানীয় দল জানিয়েছে, এই শুল্ক বহির্গামী চালানের প্রায় ৫৫ শতাংশ প্রভাবিত করবে এবং রপ্তানিকারকরা স্থায়ীভাবে ক্লায়েন্ট হারাতে বাধ্য হবে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এসসি রালহান এক বিবৃতিতে বলেন, এই আকস্মিক ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

সুইস পণ্যের ওপর ৩৯ শতাংশ মার্কিন শুল্ক এড়াতে দেশটির প্রেসিডেন্ট কারিন মারিয়া কেলারসহ কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে তাড়াহুড়ো করে সফর শেষ করেছেন। তারা দেশে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করতে চান। কারণ ওষুধের ওপর এখনও আমদানি কর আরোপ করা হচ্ছে। ট্রাম্প কম্পিউটার চিপের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতির ওপরও খারাপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

১৯৭৭ সালের আইন ব্যবহার করে ট্রাম্প অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে শুল্ক আরোপ করায় তিনি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এমনকি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তিরাও শুল্ক আরোপের সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক হাউস স্পিকার ও উইসকনসিন রিপাবলিকান পল রায়ানও রয়েছেন।

রায়ান সিএনবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট তার ইচ্ছেমতো শুল্ক বাড়াতে চাওয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক। আদালত তার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে জেনেও তিনি ঝুঁকি নিচ্ছেন।

অবশ্য ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘একটি উগ্র বাম আদালত যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে পারে। কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা দেখতে চায়।

তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘটনার পরও মার্কিন শেয়ার বাজার শক্তিশালী ছিল। এসএন্ডপি ৫০০ সূচক গত এপ্রিলের সর্বনিম্ন থাকলেও সেই অবস্থা থেকে এখন ২৫ শতাংশ বেশি ওপরে উঠে গেছে। বাজারের প্রত্যাবর্তন এবং ৪ জুলাই আইনে স্বাক্ষর করার পর কর ও ব্যয় পরিমাপে ট্রাম্পের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। হোয়াইট হাউস আশ্বাস দিয়েছে, আগামী মাসগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজার বিশেষ করে, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশিরভাগ সূচক বাড়লেও ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারের দাম কমছে।

জার্মানির আইএনজি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রজেস্কি সতর্ক করে বলেছেন, শুল্ক ঘোষণার কারণে আর্থিক বাজারগুলো অসাড় হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে শুল্কের প্রতিকূল প্রভাব ধীরে ধীরে আরও প্রকাশ পাবে।

তবে ট্রাম্প অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিয়েছেন। মার্কিন ভোটার এবং বাকি বিশ্ব এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরবর্তীতে কী ঘটতে চলেছে তা জানতে তারা অপেক্ষা করছেন। দ্য সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো মনে করেন, একজন ব্যক্তিই আছেন, যিনি নিজের তৈরি অনিশ্চয়তা সম্পর্কে অহংকারী হতে পারেন, তিনি হলেন ট্রাম্প। বাকি আমেরিকানদের ইতোমধ্যেই সেই অনিশ্চয়তার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে।