বাংলাদেশের সাথে তিনটি স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ করে দিচ্ছে ঢাকা। একটি বন্দরের কার্যক্রম সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে দু’টি স্থলবন্দরই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা।
ভারতের সীমান্ত লাগোয়া তিন-তিনটি স্থলবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে দু’টি বন্দরই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। এ ছাড়া আরও একটি বন্দরের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করছে ঢাকা। পরবর্তী সময়ে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই বন্দরগুলিকে ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিযুক্ত একটি কমিটি ১০ মাস আগে এই বন্দরগুলিকে ‘অকার্যকর’ এবং ‘অলাভজনক’ বলেছিল। তার ভিত্তিতে এত দিনে পদক্ষেপ করা হল। দাবি, সরকারের খরচ বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত।
রংপুরের নীলফামারিতে চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর এবং রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হবিবগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হচ্ছে। চিলাহাটি বন্দরটি কোচবিহারের হলদিবাড়ি লাগোয়া এবং দৌলতগঞ্জ নদিয়ার মাজদিয়া লাগোয়া। মিজ়োরাম সীমান্তের কাছে তেগামুখ স্থলবন্দর রয়েছে। ত্রিপুরার কাছে রয়েছে বাল্লা বন্দর।
২৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দফতরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বন্দরগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির তরফে আগেই বন্দরগুলি বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছিল। তাতে অনুমোদন দিয়েছেন ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘‘দেশের অধিকাংশ স্থলবন্দরই নিষ্ক্রিয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না-থাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে না। কিন্তু এগুলির জন্য সরকারের অতিরিক্ত খরচ হয়। এই সমস্ত জায়গায় সরকারি কর্মীদের পোস্টিং দিতে হয়। দেশের মানুষের করের টাকাও বাড়তি খরচ হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’ আরও চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
নিষ্ক্রিয় স্থলবন্দরের বিষয়ে পূর্বতন শেখ হাসিনার সরকারকে নাম না-করে খোঁচা দিয়েছেন শফিকুল। বলেছেন, ‘‘অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় স্থলবন্দরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেখানে প্রত্যাশিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম গড়ে ওঠেনি। ফলে এগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।’’
যে বন্দরগুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোই সেখানে নেই বলে দাবি ইউনূস সরকারের। একমাত্র হবিবগঞ্জের স্থলবন্দরটিতে পরিকাঠামো নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার নৌপরিবহণ মন্ত্রকের দাবি, ওই বন্দরের ভারতীয় অংশে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। সড়ক যাতায়াতের ব্যবস্থাও নেই। ফলে আপাতত তার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হচ্ছে।
স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক পণ্যের লেনদেন চলে। ভারতে রফতানির পাশাপাশি নেপাল বা ভুটানে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে থাকে। চলতি বছরের মে মাসে ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বলা হয়, বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক, ফল, সুতো, কাঠের আসবাবের মতো পণ্যগুলি স্থলবন্দর দিয়ে আর ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না। বাংলাদেশ তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় ভারতের উপর তার তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে।