নিউইয়র্ক শহরের মেয়র প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানিকে দুঃসাহসী ও এখনো পর্যন্ত ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ১৪ অক্টোবর দৈনিকটির প্রতিবেদনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত এই প্রার্থীর উত্থানের পেছনের গল্প তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোহরান মামদানি নীরবে-নিভৃতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন। যাতে তাদের ভোট তার বাক্সে পড়ে। যাতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পিছিয়ে পড়ে। এগুলোর কিছু কিছু সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না।
জোহরান মামদানি কীভাবে নিজ দলের জন্য আশার পাশাপাশি নিরাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন সে কথাও তুলে ধরা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিউইয়র্ক শহরের সাবেক কর্মকর্তা ও প্রখ্যাত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বৈঠক করে যাচ্ছেন। শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে দেখা করছেন। এমনকি, হতাশ স্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছেন তিনি। তারা সবাই নতুন রাজনৈতিক তারকার সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে কথা বলছেন।
এর মাধ্যমে দুই ধরনের সুবিধা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, জোহরান মামদানি একদিকে যেমন নিজের দুর্বলতাগুলো জানতে পারছেন, অন্যদিকে, সেগুলো দূর করার উপায় সম্পর্কেও পরামর্শ পাচ্ছেন। সবাই একমত হতে পারেন এমন বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরছেন। তিনি সমালোচকদের বক্তব্য শুনছেন। বিশেষ করে, ধনকুবের নিউইয়র্কবাসী ও ইসরায়েলপন্থি অ্যাক্টিভিস্টদের, যারা জোহরান মামদানির করনীতি ও ফিলিস্তিনের পক্ষে তার অবস্থানকে নিয়ে ভীত।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের রাজনৈতিক প্রতিবেদক অ্যাসটিড ডব্লিউ হের্নডন গত পাঁচ মাস ধরে জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা অনুসরণ করছেন এবং দুইবার এই প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেন। এ ছাড়াও, তিনি সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৪০ কর্মকর্তা, অর্থদাতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
একদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হের্নডন বলেন, জোহরান মামদানির সঙ্গে হেঁটে চলাটাও যেন ‘এক্সট্রিম স্পোর্টস’। নির্বাচনী প্রচারণার সদরদপ্তর থেকে সকালের নাস্তার দোকান—সব জায়গায় ভক্তদের সেলফি তোলার হিড়িক। এ যেন পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকার কৌতুক অভিনেতা ট্রেভর নোহার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় জোহরান মামদানির। যুক্তরাষ্ট্র ও উগান্ডার দ্বৈত নাগরিক জোহরানকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। তাকে নিয়ে পডকাস্ট করার আগ্রহ প্রকাশ করেন নোহা।
আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেই নির্বাচনে জোহরান মামদানির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা ও নিউইয়র্ক রাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে। নির্বাচনী দৌড় থেকে নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুয়োমোর প্রতি জনসমর্থন আগের তুলনায় বেড়েছে। রিপাবলিকান পার্টির মেয়র প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে নিয়ে গণমাধ্যমে তুলনামূলক কম আলোচনা হলেও, তিনি এখনো সক্রিয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাশা কার্টিস স্লিওয়া এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াবে। তাহলে তার ভোট কুয়োমোর বাক্সে পড়বে। সে ক্ষেত্রে কুয়োমোর জন্য জোহরানকে হারানো সহজ হবে। ট্রাম্প চান ‘কমিউনিস্ট’ জোহরান যেন কোনো অবস্থাতেই জিততে না পারেন। তিনি জিতলে তা ট্রাম্পের জন্য ‘অপমানজনক’ হবে মনে করছেন অনেক রিপাবলিকান বিশ্লেষক।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য নিয়ে জোহরান মামদানির মন্তব্য, ‘আমাদের শহর, মূল্যবোধ ও জনগণকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে তা মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর পথ হচ্ছে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা।’
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—চলতি বছর মোট ভোটারের সাত শতাংশ নতুন। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। জোহরান মামদানির আছে ৪০ লাখের বেশি ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার। এ ছাড়াও আছে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক। তাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সমাজমাধ্যমে তার উপস্থিতি সব সময় তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
জোহরান মামদানি মনে করেন, তার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এসেছে প্রয়োজন থেকে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এমনকিছু নয়, যা শুধু ধারণ করতে হয়। বরং এটি এমনকিছু যা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আপনি একজনকে বোঝানোর জন্য দ্বিতীয়বার সময় পাবেন না।’
অনেকের মতে, তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ তাকে এত জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাকে ক্ষমতার দোরগোড়ায় এনেছে। জোহরান মামদানিকে অনেকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি জেতার লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, নাকি প্রার্থী হতে হয় বলেই প্রার্থী হয়েছেন।’ এ ক্ষেত্রে তার জবাব, ‘দুটোই হতে পারে। আপনি জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন। আবার ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করতে পারেন।’
বৃহস্পতিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবদনে কুইননিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। গত ৩ থেকে ৭ অক্টোবর পরিচালিত সেই জরিপে জোহরান মামদানির পক্ষে মত দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোটার, অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৩ শতাংশ ও কার্টিস স্লিওয়ার পক্ষে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়াও, পাঁচ শতাংশ বলেছেন তারা এখনো ঠিক করেননি ও এক শতাংশ বলেছেন যেকোনো একজন প্রার্থকে তারা ভোট দেবেন।
এখন পর্যন্ত এটিই সর্বশেষ জরিপ বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।