২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঘুমের ঘর যত অন্ধকার, তত দীর্ঘ হয় জীবন

ঘুমের ঘর যত অন্ধকার, জীবন তত দীর্ঘ। গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক চমকপ্রদ তথ্য। আধুনিক জীবনযাত্রায় অনেকেই টিভি, ফোন কিংবা হালকা নাইট লাইট জ্বালিয়ে ঘুমান। কিন্তু এই অভ্যাসই হতে পারে নিঃশব্দে শরীরের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ধকার শুধু আরাম নয়, এটি একপ্রকার জৈবিক প্রয়োজন। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সারকাডিয়ান রিদম হাজার বছরের বিবর্তনে সূর্যের আলো–অন্ধকারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। মস্তিষ্কের পাইনাল গ্রন্থি কেবল অন্ধকারে মেলাটোনিন নামের হরমোন নিঃসরণ করে, যা শরীর মেরামত, বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও গভীর ঘুমের জন্য অপরিহার্য।

ফোনের স্ক্রিন, টিভির আলো বা রাস্তার বাতির ঝলক মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে, যেন এটি এখনো দিন চলছে। এতে মেলাটোনিন নিঃসরণ দেরি হয়, ঘুম ভেঙে যায় বা গভীর ঘুম হয় না। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে হৃদযন্ত্র ও বিপাকক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)–এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে সামান্য আলোতেও ঘুমালে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং সকালে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে। এর মানে, শরীর ঘুমের সময়ও পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে পারে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন এমন “আলো দূষণ” শরীরে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় যা সরাসরি আয়ু হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি, কৃত্রিম আলো টেলোমিয়ার বা ডিএনএর সুরক্ষাব্যুহ দ্রুত ক্ষয় করে, ফলে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়।

অন্যদিকে, সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঘুম শরীরকে প্রবেশ করায় সবচেয়ে পুনরুদ্ধারমূলক পর্যায়ে। এই সময় রক্তচাপ কমে, পেশি মেরামত হয় এবং মস্তিষ্ক গ্লিম্ফাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে দিনের বর্জ্য টক্সিন দূর করে। ফলাফল- সকালে মেজাজ ভালো থাকে, স্মৃতি তীক্ষ্ণ হয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

যাঁরা আলো জ্বেলে ঘুমান, তাঁদের মধ্যে দেখা যায় ঘন ঘন জেগে ওঠা, সকালে ক্লান্তি, মিষ্টিজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ ও খিটখিটে মেজাজ, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত। অপরদিকে, নিয়মিত অন্ধকারে ঘুমানো ব্যক্তিদের শরীরে দেখা যায় স্থিতিশীল শক্তি, মানসিক ভারসাম্য এবং ধীর বার্ধক্যের লক্ষণ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, রাতের আলো কমিয়ে সহজ কিছু পরিবর্তন আনলেই মিলতে পারে গভীর ও পুনরুদ্ধারমূলক ঘুম। যেমন পর্দা টেনে দেওয়া, ইলেকট্রনিক যন্ত্র বন্ধ রাখা বা স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করা। কয়েক দিনের মধ্যেই শরীর আবার নিজের প্রাকৃতিক ছন্দ ফিরে পেতে পারে।