সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান।রাত ১০ টা ৪ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক দিয়ে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে তারেক রহমানকে বহনকারী বাসটি।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাত ১০ টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে সাভার স্মৃতিসৌধের পথে রওনা হন তারেক রহমান। রওনা দেওয়ার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর তিনি স্মৃতিসৌধে পৌঁছান।
তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পথে পথে আজও জড়ো হয়েছেন বিএনপির শত শত সমর্থকরা। জিয়া উদ্যান থেকে শুরু করে সাভার স্মৃতিসৌধে যাওয়ার পথে পুরো সড়ক জুড়ে দেখা যায় নেতাকর্মীদের ভিড়।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে তিনি প্রথমে বাবার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দোয়া ও মোনাজাত শেষে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রওনা হন।
প্রায় ১৭ বছর প্রবাসে থাকার পর দেশে ফেরার একদিন পর তারেক রহমান শেরেবাংলা নগরে তার বাবা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তারেক রহমান শহীদ জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে তারেক রহমান কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ করেন। আবেগাপ্লুত অবস্থায় তাকে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং কবর প্রাঙ্গণে নিয়ে যান।
দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সড়কের দুই পাশে ভিড় জমে যাওয়ায় তার বহর চলাচল করতে অসুবিধায় পড়ে। ফলে কবরে পৌঁছাতে তার সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৫১ মিনিট। পুরো পথজুড়ে তিনি বাসের ভেতর থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার সময়ও তিনি একই বাস ব্যবহার করেন, যেখানে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ স্লোগান লেখা ছিল।
শহীদ জিয়ার কবর ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ঘিরে হাজারো বিএনপি নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটে। সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জিয়া উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় ভিড় জমান। অনেকের হাতে ছিল দলীয় পতাকা, ব্যানার ও পোস্টার।
শেরেবাংলা নগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শহীদ জিয়ার কবর ও আশপাশের সড়কে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয় এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। দুপুরের আগেই জিয়া উদ্যান সংলগ্ন সড়কগুলোতে ভিড় আরও বাড়তে থাকে।
প্রায় ১৯ বছর পর এই প্রথম তারেক রহমান তার পিতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। সর্বশেষ তিনি ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে, দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
আগামীকাল তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। নিবন্ধন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে ওসমান হাদির কবরে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এরপর তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), যা পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত, সেখানে গিয়ে জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ১৭ বছর পর তারেক রহমান দেশে ফেরেন। তাকে বহনকারী বিমানে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানও ছিলেন। দিনের শুরুতেই বিমানটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে দেশজুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আবেগ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। হাজার হাজার উচ্ছ্বসিত সমর্থকের অভ্যর্থনায় তার দেশে ফেরা এক ঐতিহাসিক ও বিজয়োল্লাসপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।