২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধ, কংগ্রেস ছাড়ছেন রিপাবলিকান টেলর গ্রিন

জর্জিয়া থেকে নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রেরকংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিন জানিয়েছেন, তিনি আগামী জানুয়ারিতে প্রতিনিধি পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ানোর কয়েকদিন পর মার্কিন রাজনীতির প্রভাবশালী এই রিপাবলিকান অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।

গ্রিন শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি ৬ জানুয়ারি ২০২৬ সালে কংগ্রেস ছাড়ছেন।

রিপাবলিকান এই নারী রাজনীতিবিদ কংগ্রেসে ট্রাম্পের অন্যতম কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু শিশু যৌন নিপীড়ক প্রয়াত জেফ্রি এপস্টাইন সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশের জন্য তার অবিরাম দাবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিক্ত বিরোধের সৃষ্টি করে। ট্রাম্প তখন থেকেই তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছেন।

ভিডিও বিবৃতিতে গ্রিন বলেন, “আমি ‘নিপীড়িত স্ত্রী’র মতো হতে রাজি নই, আশা করি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং ভালো হয়ে যাবে।”

মধ্যবর্তী নির্বাচনে গ্রিনকে হারাতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন দেওয়ার হুমকি দেওয়া ট্রাম্প, এবিসি নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে গ্রিনের পদত্যাগের ঘোষণাকে ‘দেশের জন্য দুর্দান্ত খবর’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ্রিন ঘোষণায় বলেন, “আমি চাই না আমার প্রিয় জেলাটি আমার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের বেদনাদায়ক ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রাইমারি (দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের ভোট) দেখুক, তাও সেই প্রেসিডেন্ট যার জন্য আমরা সবাই লড়েছি।” তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনে আমি (হয়তো) লড়াই করে জিতব, কিন্তু রিপাবলিকানরা সম্ভবত মধ্যবর্তী নির্বাচনে হারতে যাচ্ছে।”

সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প ও গ্রিন ছিলেন দীর্ঘদিনের মিত্র; জর্জিয়ার এ প্রতিনিধি ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডাকে সামনে এগিয়ে নিতে ব্যাপক পরিশ্রমও করেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিন এপস্টাইন সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশের দাবিতে সোচ্চার হলে দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে।

ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে দাবি করে আসছিলেন যে, এপস্টাইন ইস্যুটি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের দ্বারা তৈরি একটি বিভ্রান্তি, যা তার প্রশাসনের সাফল্য থেকে মনোযোগ সরানোর অপচেষ্টা।

গ্রিন তার পদত্যাগপত্রে ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, “১৪ বছর বয়সে ধর্ষিত, ধনী ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দ্বারা পাচার ও ভোগের শিকার আমেরিকান নারীদের পক্ষে দাঁড়ানোর ফলে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলা উচিত নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার জন্য আমি লড়াই করেছি, তার আমাকে হুমকি দেওয়া উচিত নয়।”

গ্রিন গত কয়েক মাসে অনেক টক-শোতে গিয়ে ট্রাম্প ও তার সহকর্মী রিপাবলিকানদের সমালোচনা করেন। তিনি ভোটারদের জন্য খরচ কমাতে প্রেসিডেন্টের যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে এবং তার শুল্ক নীতির সমালোচনা করেন। তবে সর্বোপরি, তিনি এপস্টাইন সম্পর্কিত নথি প্রকাশ না করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।

ট্রাম্প গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। গ্রিনকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘পাগলাটে’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ট্রাম্প আরো মন্তব্য করেন যে, গ্রিনকে পদচ্যুত করা উচিত এবং কংগ্রেসে তার জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন করা উচিত।

তবে গ্রিনের চেষ্টা বৃথা যায়নি, তার মতো অনেক রিপাবলিকানের মিলিত সহায়তায় মার্কিন কংগ্রেস বিচার মন্ত্রণালয়কে এপস্টাইন সংক্রান্ত সব নথি প্রকাশে বাধ্য করতে পেরেছে। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত বিল পাস হওয়ার পরদিনই ট্রাম্প তাতে স্বাক্ষর করে একে আইনে পরিণত করেছেন।

পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া ভিডিও বার্তায় গ্রিন তার অর্জনগুলোর তালিকা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্পের মন্তব্যগুলো ‘বেদনাদায়ক’।