৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিধি আসলে কতটা? চাইলেই কি এ সরকার সব বৈদেশিক চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ইত্যাদি স্বাক্ষর করতে পারে?

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টসহ (এনডিএ) আরো আরো কিছু চুক্তিরও সমালোচনা হচ্ছে।

সমালোচনা আছে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গমও উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি নিয়েও। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা জনগণের স্বার্থবিরোধী কিছু করছে না। এই ধরনের চুক্তি করার ম্যান্ডেট আছে বলেও দাবি সরকারসংশ্লিষ্টদের৷

রাখাইনে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘকে করিডোর দিচ্ছে – এই আলোচনায় এখন ভাটা পড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা হচ্ছে না। শুরুতে সরকারের দিক থেকেই বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। কিন্তু সমালোচনার মুখে সরকার বলেছে, জাতিসংঘের সাথে সরকারের এ ধরনের কোনো করিডোর বা প্যাসেজ নিয়ে আলোচনাই হয়নি। আরো জানানো হয়েছে, বিষয়টি সরকারের বিবেচনাতেও নেই।

কিন্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস এখন বাংলাদেশে অনস্বীকার্য বাস্তবতা। ১৮ জুলাই থেকে তারা বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। মানবাধিকার কমিশনের অফিস নিয়ে আলোচনার শুরুতেই এর বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দল৷ এ উদ্যোগের সমালোচনা করে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করে তারা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-সহ কিছু বামপন্থি দলও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এখন বিএনপি এবং এনসিপিও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “বাংলাদেশের চেয়ে ফিলিস্তিনের গাজার মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। কিন্তু সেখানে জাতিসংঘের তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত হয়নি। এতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মৌলিক ও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। পাশাপাশি দেশে যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতি, তাতে কী কী অনুমোদন করে, তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় সুবিধা পেতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি করেছে। মোট ২.২০ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি টন গমের দাম ৬০ ডলারেরও বেশি। ইইক্রেনসহ অন্য কিছু দেশের গমের দাম তার চেয়ে কম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি নতুন বোয়িং বিমান কেনার চুক্তিও করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এই ২৫টি বোয়িং-এর দাম (প্রতিটি সর্বনিম্ন চার হাজার কোটি টাকা করে) এক লাখ কোটি টাকা, যা কিনা বাংলাদেশের সবশেষ বাজেটের আট ভাগের এক ভাগ। এত দামের বোয়িং বিমান যাদের জন্য, সেই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নাকি এই ক্রয়ের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানেই না।

এর আগে প্রতি বছর পাঁচ লাখ টন এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া সয়াবিন, তুলা, ডাল আমদানিরও নতুন চুক্তি হচ্ছে। আর স্টারলিংক বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তাদের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে শুল্ক আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ করার বিষয়টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে গত ১৭ জুলাই বিষয়টি জানান। এর আগে এটি নিয়ে কোনো পর্যায়ে কিছু প্রকাশ করা হয়নি। ওই দিন সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার বিস্তারিত জানতে চাইলে এক পর্যায়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের কথা উল্লেখ করলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গত ২০ জুলাই ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে বলেছেন,”বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো পার্টনার (অন্য দেশ) কোনোদিন এনডিএ ডকুমেন্ট দেয়নি। এর বদলে নন-পেপার ইস্যু করা যেতো, যার অর্থ হলো এটা আমার অবস্থান, কিন্তু আমি নিজে সই করবো না। নন-পেপার হলে রেসপন্সিবিলিটি তৈরি হতো, কিন্তু এখন বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়ে গেছে। এখন যদি বাংলাদেশ কোনো লবিস্ট নিয়োগ করে, তার কাছেও এ তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।”

গত সোমবার২৮ জুলাই মার্কিন ইউএসটিআরের সাথে বৈঠকের যোগ দেয়ার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আর বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দিনসহ ৫ সদস্যের দল।২৯ ও ৩০ জুলাইয়ের এ আলোচনায় তারা যদি কোনো সুবিধা করতে না পারেন, তাহলে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

‘কাউকে কিছু না জানিয়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো’ : অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, “শুল্ক কমাতে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দাম বেশি পড়লেও গম, সয়াবিন, তুলা এগুলো আমদানি বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু ২৫টি বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত সরকার কোন বিবেবচনায় নিলো তা আমি বুঝতে পারছি না।এটা আমাদের আদৌ দরকার আছে কিনা তা-ও বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না।”

তিনি মনে করেন, “বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, ফলে, এই বোয়িং আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়াবে। এটা একটা অনির্বাচিত সরকার। এইসব মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের রাজনৈতিক দল ও স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলা উচিত ছিল। সরকার নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এই চাপ তো নির্বাচিত নতুন সরকারের ওপর পড়বে।”

“আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কাউকে কিছু না জানিয়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো। এখন কেউ কিছু জানতেও পারছে না যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের কী আলোচনা হচ্ছে। সবাইকে অন্ধকারে রেখে তো তারা এটা করতে পারে না,” বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, “এখন সংসদ নাই। এই ধরনের চুক্তির আগে সংসদে আলোচনা হয়। সরকার তাই রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে চাইলে কোনো চুক্তি করতে পারে। কিন্তু সেটা তো করেনি। আর দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু কোনো সরকারাই করতে পারে না।”

‘‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট ভেরি ডেঞ্জারজ। দেশের মানুষ জানতে পারবেনা, এটা কীভাবে হয়! এটা মেনে নেয়া যায় না। সরকার আরো অনেক চুক্তি করছে, যা পরবর্তী সরকারেও ওপর বর্তাবে। তাই সংসদ না থাকলেও এই সরকারকে যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেই করা উচিত।”

বিরোধিতা থাকলেও সরকার চট্টগ্রাম বন্দর পরিচলানায় বিদেশিদের কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনাল পরিচালনার জন্য তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হবে শিগগিরই। নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন যা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন কয়েকদিন আগে। তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ডেনমার্কের এপি-মুলার মায়েরস্ক, সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। টার্মিনালগুলো হলো: পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), বে টার্মিনালের দুটি টার্মিনাল এবং নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)।

‘সরকারের এইসব সিদ্ধান্তের কারণে আগামীতে ঋণের চাপ আরো বাড়বে’ : সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,” আসলে সামনে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে। ফলে অর্থনৈতিক চুক্তিসহ যো-কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের আলোচনা দরকার। কারণ, এই চুক্তিগুলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকারের ওপরই বর্তাবে। সেটা (আলোচনা) করা না হলে সংকট তৈরি হবে।”

“যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে সাথে ট্রেড গ্যাপ কমাতে ২৫টি বোয়িং আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে বোয়িং নাই। তাহলে কেন আনা হচ্ছে? এতে তো আমাতের আরো ঋণ করতে হবে। কিন্তু লাভ কী হবে? আরেকটি কথা হলো, যে নন- ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো এটা না জানিয়ে কেন করা হলো? এটা নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যাবে। সরকারের এইসব সিদ্ধান্তের কারণে আগামীতে ঋণের চাপ আরো বাড়বে। আসলে এই সব সিদ্ধান্ত নির্বাচিত রাজনৈতি সরকার নিলে ভালো হতো।”

‘আমরা কথা বলছি, প্রতিবাদ করছি’ : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ মিনিমাম সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন দেয়া। কিন্তু সেটা না করে তারা এমনসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , চুক্তি করছে, যা তারা করতে পারে না। বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনের অফিস, নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট, বিদেশিদের বন্দর দেয়া, বোয়িং কেনা-এগুলো তাদের কাজ নয়। এগুলো করতে হলে জাতীয় সংসদে আলোচনা হতে হয়। সেটার তো এখন সুযোগ নাই। তারপরও তারা রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করতে পারতো। তা-ও না করে এসব কাজ করছে। এর দায়-দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।”

তার কথা, “দেশের বিরুদ্ধে যায়, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো চুক্তি বিএনপি মেনে নেবে না। আমরা কথা বলছি, প্রতিবাদ করছি।”

‘নানা চুক্তির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে দেশ তুলে দেয়া হচ্ছে’ : রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঝেমধ্যে বৈঠক করে। সেইসব বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় কিনা, অথবা দলের প্রতিনিধিরা কথা তোলেন কিনা জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ” আমাদের খুব বেশি কথা বলতে দেয়া হয় না। সর্বশেষ বৈঠকে আমাকে দুই মিনিট কথা বলার সময় দেয়া হয়। আমি সাড়ে তিন মিনিট কথা বলি। সেখানে আমি বলেছি, বড় একটি সংকট তৈরি হচ্ছে নানা চুক্তির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে দেশ তুলে দেয়া হচ্ছে।”

তার কথা, “এই মানবাধিকারের অফিস, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেয়া এগুলো নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করছি। কর্মসূচি দিচ্ছি। সরকার যদি তারপরও না থামে, তাহলে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি,” বলেন তিনি।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, “সরকার রাজনৈতিক দল এবং স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা না করে, কথা না বলে এইসব চুক্তি ও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। একটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া ফরেন পলিসির এই জায়গাগুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা আমরা বিভিন্ন ফোরামে বলছি।”

তার কথা, “সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আমাদের যখন কথা হয়, তখন আমরা বিষয়গুলো বলি। সরকারের যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান মনে করেন, “সরকার তার ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা দেশের ক্ষতি ডেকে আনবে। সরকার এটা করতে পারে না। আমরা প্রতিবাদ করছি। বার বার বলছি তারপরও সরকার থামছে না।”

“আর সরকারের সঙ্গে আমাদের বৈঠকেও বিষয়গুলো জানানো হয় না, এজন্ডায় রাখা হয় না। আর আমাদের এত কম সময় দেয়া হয় যে সেখানে আমরাও বলতে পারি না। আমরা মাঠে প্রতিবাদ করছি।”

আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে এবং এর প্রতিক্রিয়া পরবর্তী সরকারের ওপর কী হতে পারে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, “এখন যে চুক্তিগুলো হচ্ছে, তা পরবর্তী সরকারের ওপর বর্তাবে। আন্তর্জাতিক যে-কোনো চুক্তি আসলে বিবেচনা করা হয়, রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র বনাম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। ফলে পরবর্তী সরকারের সেগুলো বাতিল করার তেমন সুযোগ থাকে না। ”

” যেসব চুক্তি হচ্ছে তার দায়-দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের ওপর বর্তাবে। তারা চাইলে সেটা বাতিল বা রিভিউ করতে পারে। তবে এটা সাধারণত হয় না। কারণ, এখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয় থাকে। তারা নির্বাচিত বা অনির্বাচিত সরকারে চুক্তি বিবেচনা করে না, তারা বিবেচনা করে রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি,” বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, “আগের সরকারের আমলের কোনো বৈদেশিক চুক্তি এই সরকারের আমলে বাতিল হতে দেখেছেন? ভারতের সঙ্গে গোলামী চুক্তি বলে রাজনীতি করা হয়, কিন্তু কোনো চুক্তি কি বাতিল করেছে?” ‘সরকার গঠনের সময় তারা শর্ত দেয়নি যে এই কাজ করা যাবে, এই কাজ করা যাবে না’

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ অহাম্মদ বলেন,” অন্তর্বর্তী সরকার এমন কিছুই করছে না যা বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। এই জায়গায় সরকারের কমিটমেন্ট অত্যন্ত পরিষ্কার।”

ম্যান্ডেটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সরকার গঠিত হওয়ার সময় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, কোনো মন্ত্রণালয় বন্ধ করা হয়েছে। ফলে সরকারের সব মন্ত্রণালয় সচল আছে। তাই প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের যা কাজ, তা করা হচ্ছে। আর সব রাজনৈতিক দল নিয়েই এই সরকার গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠনের সময় তারা কোনো শর্ত দেয়নি যে এই কাজ করা যাবে, এই কাজ করা যাবে না। সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সব কাজ করছে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে।”

“আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ট্যারিফ আলোচনা এখনো চলছে । ফলে আলোচনায় যদি কোনো শর্ত থাকে যে, এই বিষয় প্রকাশ করা যাবে না, তাহলে তো প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে তো আলোচনা হয় না,” নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট সম্পর্কে এই কথা বলেন তিনি। – সংবাদসুত্র জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে