নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিউ জার্সীর পেটার্সনে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আয়োজনে ‘দেখা সাক্ষাৎ’

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ০৫:০৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ০৫:০৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউ জার্সীর পেটার্সনে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আয়োজনে ‘দেখা সাক্ষাৎ’

বহুজাতির দেশ আমেরিকায় প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজস্বতা রয়েছে, এ নিজস্বতার সাথে সমস্যা ও সফলতার সংজ্ঞাও ভিন্ন ভিন্ন। নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির সাথে বন্ধন দৃঢ় রেখেই আমেরিকা হয়ে উঠেছে এক মিশ্র সংস্কৃতির শক্তিশালী দেশ।

প্রতিটি নাগরিকের অধিকার যেমন আছে, নাগরিক কর্তব্যও আমাদের পালন করতে হয়। বহুজাতিগোষ্ঠীর সাথে জনসমাজের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে আমেরিকার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হোক আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার নিউজার্সির প্যাটার্সন শহরে লেখক, সাংবাদিক ও জনসমাজের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেছেন। ইউএসএ প্রথম আলো ফাউন্ডেশন আয়োজিত ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ছিল ‘দেখা সাক্ষাৎ’। অনুষ্ঠানের আলোচিত বিষয় ছিল কীভাবে মানসিক স্বাস্থ‍্যের যত্নে সচেতনা বাড়ানো যায়। সারাদিন ধরে হালকা বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সিতে বসবাসরত অগ্রসর লোকজনদের নিয়ে নির্মল আড্ডা হয়েছিল। অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা, খানিকটা পরিচিতির পর সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে আনা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও নাগরিক দায়িত্ব, ভোটাধিকার প্রয়োগ, হাউজিংসহ নানাবিধ বিষয়গুলো উঠে আসে আলোচনায়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণের সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী।অনুষ্ঠান আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পেটার্সনের নির্বাচিত স্কুল কমিশনার মোহাম্মদ রশীদ। উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ সাংবাদিক, পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মাদ নাজমুল আহসান, পেটার্সন শহরের বারবার নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিক, স্কুল বোর্ড কমিশনার এডি গঞ্জালেজ, স্কুল বোর্ড কমিশনার নাদিয়া হোসাইন, প্রবীণ কমিউনিটি নেতা মীর চৌধুরী, সোনালী এক্সচেঞ্জের ব্যাবস্থাপক ফারুক সিদ্দিকী, মন্টিক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেলাল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, লেখিকা এবং শিক্ষিকা এইচ বি রিতা। কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিক পেটার্সন শহরের পক্ষ থেকে প্রথম আলো পরিবারকে সম্মাননা সনদ প্রদান করেন শহরের মেয়র এবং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে বিনয় ভালোবাসা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তিন প্রজন্মের লোকজন, ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন অভিবাসী প্রতিনিধিরা। এছাড়াও সেখানে ছিলেন শহরের স্কুল-কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী। তারা প্রত্যেকেই নাগরিক দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। এইচ বি রিতা বলেছেন, “জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝানো হয় সেই মানসিক স্থিতিশীলতা, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, এবং আচরণকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। ঠিক যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে, আমাদের বাঙালি কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার অভাব খুবই প্রকট। অনেকে মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা মানে দুর্বলতা প্রকাশ করা। আমাদের সমাজে মানসিক রোগকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। যার ফলে অনেকেই প্রয়োজনীয় সাহায্য নেন না এবং নিজেরা একাকিত্বে ভোগেন।” রিতা বলেন, এই ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে, কারণ এটি আমাদের জীবনযাত্রা, কর্মক্ষমতা এবং পারিবারিক সম্পর্ককে সরাসরি প্রভাবিত করে। আমাদের উচিত পরিবারের সদস্য, বন্ধু এবং কমিউনিটির মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য নিতে উৎসাহিত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামাজিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বাড়ালে আমরা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নই বাড়বে না, পাশাপাশি স্নায়ুবিক এবং জ্ঞানীয় সমস্যাগুলোকেও কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে, আমাদের ঘরের ভেতরে কিংবা বাইরে যারা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জীবনযাপন করছে, তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারব এবং সঠিক যত্ন নিতে পারব।

এমনকি কমিউনিটির মধ্যে কোনো শিশু বা ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পেলেও, আমরা বুঝতে শিখবো যে এগুলো কেবল আচরণগত সমস্যা নয়, বরং তা মানসিক বা জ্ঞানীয় চ্যালেঞ্জের ফলাফল হতে পারে। এর ফলে আমরা শুধু নিজেরাই সচেতন হবো না, বরং অন্যদের আবেগ, অনুভূতি এবং সমস্যাগুলোর প্রতিও সহনশীল ও সহানুভূতিশীল হতে পারব। কমিউনিটির প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য সচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্যের চারপাশে যে কুসংস্কার আছে, তা ভেঙে দিয়ে এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে যেখানে সবাই তাদের মানসিক সুস্থতার যত্ন নিতে সক্ষম বোধ করে। প্রবীণ সম্পাদক নাজমুল আহসান তার বক্তব্যে সন্তানের মনও গঠনে মায়ের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচনার অবতারণা করেন। অনুষ্ঠানমালায় শুধু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই ছিল না, দফায় দফায় রকমারী খাবার ছিলো বাড়তি আকর্ষণ। সবগুলো খাবারই ছিল উপাদেয় এবং ঘরে বানানো। বৃষ্টিস্নাত হেমন্তের সন্ধ্যায় গরম কিমা বার্গার, সিঙ্গারা, পাকোড়া, চা, বিরিয়ানী, সালাদ, দই এবং ফুলুরী পিঠা সবার তৃপ্তি এনেছিল। ঐতিহ্যের শহর প্যাটার্সনের দক্ষ একজন সংগঠক মোহাম্মদ রশীদ, তিনি প্যাটারসন বোর্ড অফ এডুকেশন কর্মরত আছেন। মোহাম্মদ রশিদের সহযোগিতা এবং উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানটি আনন্দঘন হয়ে উঠেছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে। উপস্থিত সবাইকে হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ’র পক্ষ থেকে গিফট কার্ড উপহার দেয়া হয়েছিল, পছন্দের কিছু কেনাকাটা করার।

হিউম্যান কনসার্ন ইউ এস এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিসটার জয়নাব। তিনি তাঁর শুভেচ্ছা বকবয়ে বলেন, প্রথম আলো ফাউন্ডেশনের এমন ভালো উদ্যোগের পাশে ভবিষ্যতেও তারা সহযগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। পরিশেষে জাকির হোসেইন এবং মোহাম্মদ রশিদের গানে, কবি এলি বড়ুয়ার কবিতায় অনুষ্ঠান উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার লেখক সাংবাদিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পত্রিকাটিরনির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক, শেলী জামান খান, রোকেয়া দীপা, কুলসুম আখতার সুমি, সায়ান সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জান্নাতুল টুম্পা, ডিজে সাঈদ, তামিনা রশিদ, প্রফেসর ড. হেলাল মহীউদ্দীন, সাব্রিনা ইয়াসমিন, এম এইচ পাহলভি প্রমুখ। – সোহানা নাজনীন, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা

শেয়ার করুন