১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ

মানব পাচার প্রতিরোধে অগ্রগতি: টিআইপি রিপোর্টে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে

মানব পাচার প্রতিরোধে অগ্রগতি: টিআইপি রিপোর্টে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানব পাচার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে (ট্রাফিকিং ইন পারসন্স রিপোর্ট বা টিআইপি) বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান করেছে। চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তন, বৈশ্বিক অভিবাসন চাপ ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার দমনে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি এই স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো মানব পাচার প্রতিরোধের সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক মান পুরোপুরি অর্জন করতে না পারলেও আগের তুলনায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্যই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে স্থান ধরে রেখেছে দেশটি।

ভুক্তভোগী শনাক্ত ও সুরক্ষা উদ্যোগ : সরকার ২০২৪ সালে ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে ১৪৪ জন যৌন পাচার, ২৮৫ জন জোরপূর্বক শ্রম এবং বাকি ১ হাজার ৩৩ জন বিভিন্নভাবে শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে।

প্রতিবেদনে সরকারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে। পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের ভুক্তভোগী শনাক্ত ও সেবা প্রদানে দক্ষ করে তুলতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণকেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইন প্রয়োগ : আন্তর্জাতিক মানব পাচার নেটওয়ার্ক ভাঙতে বাংলাদেশ ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছে। সিআইডি, পিবিআই ও সিটিটিসির মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার উদ্যোগও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় মানব পাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষ শক্তভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬২১ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়েছে পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতা কর্মসূচির জন্য। একইসঙ্গে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-২০২৫) বাস্তবায়নও অব্যাহত রয়েছে।

অভিবাসী সুরক্ষায় পদক্ষেপ : অভিবাসীদের নিরাপত্তায় দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করা হয়েছে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের সঙ্গে। নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল চালু হওয়ায় বিদেশগামী কর্মীরা অতিরিক্ত ফি থেকে সুরক্ষা পাচ্ছেন। বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য ১০৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাজ করছে, এর মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য বিশেষ ৩০ দিনের কোর্স রয়েছে।

প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য : টিআইপি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন। দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান প্রমাণ করে, বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা শক্তিশালী করা, অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং পাচারের শিকারদের ন্যায়বিচার দেওয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।