করোনা মহামারী পরবর্তী সরকারি পেচেক প্রটেকশান প্রোগ্রামের (পিপিপি) প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বাংলাদেশি নির্মাণ ঠিকাদার বাবা-ছেলে অভিযুক্ত হয়েছেন। তারা হলেন নিউইয়র্কে আঞ্চলিক সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটির বর্তমান উপদেষ্টা নূরুস সাফা ও তার ছেলে মাইদাল সাফা। ব্রুকলীণ ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নীর অফিস থেকে প্রাপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে , মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ গ্রহণ করে দুটি বাড়ি ও বিলাসবহুল বিএমডবিডব্লিউ গাড়ি কিনেছেন তারা এমন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, অভিযুক্ত নুরুস সাফা (৬৫) এবং মাইদা সাফা (৩৪)-কে গত ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ব্রুকলিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডেনা ডগলাসের সামনে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয়-ডিগ্রি গ্র্যান্ড লার্সেনি, একটি জাল যন্ত্রের দ্বিতীয়-ডিগ্রি ফৌজদারি দখল এবং প্রথম-ডিগ্রি মিথ্যা ব্যবসার রেকর্ডের অভিযোগ রয়েছে। তাদের জামিন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় এবং ৩০ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলেছেন, তদন্ত অনুসারে নুরুস সাফা হলেন রাহিল কন্ট্রাকটিং ইনকর্পোরেশনের মালিক। তার ছেলে মাইদুল সাফা কোম্পানির প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
করোনা মহামারীর পর প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ফেডারেল সরকার পিপিপি কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সুবিধা চালু করে। এই অর্থ পরবর্তীতে মওকুফও করা হয়। কিন্তু অনেকেই মিথ্যা তথ্য, বিশেষ করে ভূয়া অফিস ও কর্মচারি দেখিয়ে পিপিপি-র মাধ্যমে অর্থে বাড়ি ও গাড়ি ক্রয় করেছেন, যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ব্রুকলিন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেজ, ইউএস স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এসবিএ) জেনারেল কাউন্সেল থেরেসি মিরস এবং স্পেশাল এজেন্ট-ইনচার্জ জোনাথন মেলোন, উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার, ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিস গত ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন দুজন ঠিকাদারকে এই অপরাধে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম থেকে ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পিপিপি কর্মসূচির আওতায় এ অর্থ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশি বাবা-ছেলে প্রতারণামূলক ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন যা তহবিল প্রাপ্তির জন্য কোম্পানির রাজস্বকে বড় অংকে দেখানো হয়েছিল। এরপর পাওয়া সেই তহবিল ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা কর্মীদের এবং অন্যান্য বৈধ ব্যবসায়িক খরচ প্রদানের জন্য নির্দ্দিষ্ট ছিল।
জেনারেল কাউন্সেল মিয়ার্স বলেছেন, ‘এই বিষয়ে পদক্ষেপটি ফেডারেল এজেন্সি যেমন কিংস কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস, এসবিএ-এর অফিস অফ ইন্সপেক্টর জেনারেল, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মেরি ক্যাভেনগ্রোসের সাথে কাজ করা ছোট ব্যবসা প্রশাসনের উন্নত প্রচেষ্টার ফসল।
স্পেশাল এজেন্ট-ইন-চার্জ মেলোন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ মহামারী সম্পর্কিত বেকারত্ব বীমা কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত করছে। আমরা এই ধরনের অভিযোগ তদন্ত করতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’
করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসবিএ) পেমেন্ট প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) বাস্তবায়ন করেছে। কর্মীদের বেতন-ভাতা বজায় রাখার জন্য ঋণগুলি ছোট ব্যবসার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি পিপিপি লোন পাওয়ার জন্য, নিয়োগকর্তাকে প্রত্যায়িত করতে হবে যে কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের কর্মশক্তিকে নিযুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বেতন বা অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচের জন্য তহবিল ব্যবহার করা হবে।
নুরুস সাফা মোট দুটি পিপিপি ঋণ পেয়েছিলেন। ঋণ হাতে পাওয়ার পর তারা দ্রুত বিলাসবহুল আইটেমসহ ব্যক্তিগত ক্রয়ের জন্য অর্থ ব্যবহার করে। অভিযুক্তরা দুটি পাঁচ বেডরুমের বাড়ি কেনার জন্য মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭০ ডলার খরচ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি দুটি একটি নিউ জার্সির ভুরিসে এবং অন্যটি পাইন হিলে অবস্থিত। এছাড়া তিনি ছেলের জন্য ৭১ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ২০২১ সালের বিএমডব্লিউ এম-৫ কেনেন।
মামলাটি বর্তমানে ব্রকলিনের সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি সের্গেই মার্টস-এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় তাদের ১০ থেকে ২৫ বছরের সাজা হতে পারে।
এদিকে পিপিপি ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে বাবা-ছেলে অভিযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পিপিপি ঋণ জালিয়াতি তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা ও কর্মী দেখিয়ে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পিপিপি ঋণ নিয়ে অভিজাত বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।