বাংলাদেশে প্রতি ১০ পরিবারের মধ্যে অন্তত তিনটি পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে রাজশাহী বিভাগ। এ বিভাগে প্রতি দুটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে। অন্যদিকে, দেশের ৬২ শতাংশ পরিবার তাদের মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ শুধু খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে থাকে। এর মধ্যে ১০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার তাদের মাসিক মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করে থাকে।
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মোকাবিলা কৌশল শিরোনামে এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যৌথভাবে গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত বিবিএসের ‘খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩’ শিরোনামে জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে খানার আয় বিশ্লেষণ ও পরিবারের ক্ষুধা পরিমাপের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। তথ্য সংগ্রহ করা ২০২৩ সালের ১৫ জুন থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে। মাঠ পর্যায়ে এক হাজার ৪৮৮ প্রাথমিক নমুনা ইউনিটের (পিএসইউ) আওতায় ২৯ হাজার ৭৬০ খানা থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এ প্রতিবেদনে খাদ্য নিরাপত্তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। বিবিএসের সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক মেহনাজ তাবাসসুম গতকাল সমকালকে বলেন, বিবিএসের মূল প্রতিবেদনে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিসংখ্যান এবং সংজ্ঞা রয়েছে। বিবিএসের মূল জরিপে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তা বলতে সব মানুষের কাছে সব সময় পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য থাকাকে বোঝানো হয়, যা মানুষের সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যের পেছনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ পরিবার খাদ্যের পেছনে ৫০ শতাংশের কম ব্যয় করে থাকে। তবে সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পরিবার ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করে খাদ্য জোগাড় করতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মাত্র ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তা রয়েছে। ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারে কিছুটা খাদ্য নিরাপত্তা রয়েছে। অন্যদিকে, ২২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার মাঝারি পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার ব্যাপকভাবে খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় চারটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো– সামগ্রিকভাবে সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে লক্ষ্যভুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে গবেষণা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনার ঝুঁকি কমাতে প্রমাণভিত্তিক কৌশল উন্নয়ন।