দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্স বা বসবাসের জন্য সেরা শহরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে থাকে প্রতিবছর। প্রতিষ্ঠানটি মূলত হলো স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো— এই পাঁচটি মূল সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১৭৩টি শহরের তালিকা করে থাকে।
২০২৫ সালে বসবাসের জন্য বিশ্বের সেরা ১০ শহরের তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
১. কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক)
এবার লাইভেবিলিটি ইনডেক্সে বা বসবাসের জন্য সেরা শহরের সূচকে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে সবচেয়ে সুখী মানুষের শহরের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করা কোপেনহেগেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে সরিয়ে কোপেনহেগেন লাইভেবিলিটি সূচকে ১ নম্বরে উঠে এসেছে।
শহরটিতে সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। এখানে কেউ চাপে বা তাড়াহুড়াতে নেই। খোলাবাজার আর পার্কে শিশুদের ছুটাছুটি আর কোলাহল দেখে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
২. ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া)
টানা তিন বছর লাইভেবিলিটি সূচকে সবার ওপরে থাকা ভিয়েনা এবার এক ধাপ পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা স্বাস্থ্যসেবায় নিখুঁত স্কোর ধরে রেখেছে, যা এখনো অন্য সব শহরের চেয়ে এগিয়ে। পাশাপাশি শিক্ষা ও অবকাঠামোতে এটি পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। ফলাফল—এমন একটি শহর, যাকে নিয়ে বাসিন্দারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
৩. জুরিখ (সুইজারল্যান্ড)
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর জন্য প্রসদ্ধি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ। গ্লোবাল লাইভেবিলিটি র্যাঙ্কিংয়ে জুরিখ শিক্ষায় ১০০–তে ১০০ নম্বর পেয়েছে শহরটি। এ থেকে বুঝাই যায় শহরটির শিক্ষা শিক্ষাব্যবস্থা কতটা উন্নত ও বিশ্বমানের।
৪. মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া)
তালিকায় চার নম্বরে স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শহর মেলবোর্ন। শহরটি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সবচেয়ে ভালো স্কোর তুলেছে। পাশাপাশি সংস্কৃতি ও পরিবেশেও শহরটি অনেক ভালো স্কোর তুলেছে।
৫. জেনেভা (সুইজারল্যান্ড)
জনকল্যাণমূলক নীতি ও সুশৃঙ্খল অবকাঠামোর কারণে সুইজারল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে প্রথম সারির দেশ। দেশটির দুটি শহর বসবাসের জন্য সবচেয়ে ভালো শহরের তালিকায় প্রথম পাঁচে স্থান পেয়েছে। ৩ নম্বরে জুরিখের পর ৫ নম্বরে জেনেভা।
স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোয় জেনেভা নিখুঁত স্কোর করেছে। পাশাপাশি শহরটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সহজে চলাচলের উপযোগী।
৬. সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)
এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার আরও এক শহর সিডনি স্থান পেয়েছে। শহরটি লাইভেবিলিটি স্কোরে ৯৬ দশমিক ৬ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৬ নম্বরে উঠে এসেছে সিডনি। গত বছর শহরটি ছিল ৭ নম্বরে। সিডনি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। পাশাপাশি স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯৬ দশমিক ৪ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৪ দশমিক ৪ নম্বর পেয়েছে।
৭. ওসাকা (জাপান)
তবেস এই সূচকে শীর্ষ দশ শহরের মধ্যে একমাত্র শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে জাপানের ওসাকা। ৭ নম্বরে থাকা ওসাকা স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় নিখুঁত স্কোর অর্জন করেছে। যদিও শহরটি প্রায়ই আলোঝলমলে রাজধানী টোকিওর ছায়ায় ঢাকা পড়ে। তবে ওসাকায় রয়েছে নিজস্ব ছন্দে চলা এক জীবনধারা এবং সেটাই এখানকার বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
৮. অকল্যান্ড (নিউজিল্যান্ড)
সূচকে ৯৬ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৮ নম্বরে উঠে এসেছে অকল্যান্ড। অকল্যান্ড শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ৯৫ দশমিক ৮, স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯২ দশমিক ৯ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৭ দশমিক ৯ নম্বর পেয়েছে।
৯. অ্যাডিলেড (অস্ট্রেলিয়া)
শীর্ষ ১০–এ স্থান পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় শহর অ্যাডিলেড। এ বছর শহরটি ৯৫ দশমিক ৯ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৯ নম্বরে উঠে এসেছে, গত বছর ছিল ১১ নম্বরে। অ্যাডিলেড স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯৬ দশমিক ৪ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯১ দশমিক ৪ নম্বর পেয়েছে।
১০. ভ্যাঙ্কুভার (কানাডা)
উত্তর আমেরিকার একমাত্র শহর হিসেবে শীর্ষ দশে জায়গা পেয়েছে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার। কানাডার আরেক শহর ক্যালগেরির এ বছর বড় পতন হয়েছে। ২০২৪ সালে ক্যালগেরি পঞ্চম স্থানে ছিল। এ বছর নেমে গেছে ১৮তম স্থানে। মূলত স্বাস্থ্যসেবা সূচকে নম্বর কম পাওয়ায় ক্যালগেরির এ পতন।
তবে ৯৫ দশমিক ৮ নম্বর পেয়ে শীর্ষ ১০–এ স্থান করে নিয়েছে ভ্যাঙ্কুভার। কানাডার শহরটি শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ৯৫ দশমিক ৮, স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯২ দশমিক ৯ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৭ দশমিক ২ নম্বর পেয়েছে।