১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেষের পাতা

২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও চেম্বার এক্সপো শুরু

২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও চেম্বার এক্সপো শুরু

নিউইয়র্কের হৃদয় বলা হয় টাইমস স্কয়ারকে। সেই প্রাণকেন্দ্রের ম্যারিয়ট মার্কুইস হোটেলে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শুরু হচ্ছে চতুর্থ নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও চেম্বার এক্সপো ২০২৫। শুধু নামের জৌলুস নয়, এই আয়োজনের ভেতর লুকিয়ে আছে — বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সোপান।

গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স এবং বাংলাদেশ ইউএসএ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই আয়োজন করছে। এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য— ক্রিয়েটিং ইকোনোমিক অপরচুনিটিজ সেইপিং এ বেটার ফিউচার টুগাদের- “অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করি, গড়ি উন্নত ভবিষ্যৎ”। মূল স্লোগানেই ধরা পড়েছে নতুন প্রজন্মের ব্যবসা দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রতিবছরের মতো বাংলাদেশ এবারেও বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবে। পোশাকশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং পাট—এই তিন খাতকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে দেশের রপ্তানি সম্ভাবনার এক প্রতিচ্ছবি। যে দেশ একসময় শুধুই পোশাক শিল্পে সীমাবদ্ধ ছিল, সে দেশ এখন পাটজাত পণ্যে বিশ্বকে চমক দেখাচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিতেও নতুন বাজারে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছে।

উদ্বোধনী আসরে থাকছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের প্রধান কেলি লোফলার এবং বাণিজ্য দপ্তরের উপসচিব পল ডেবর। মূলধারার এই নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি প্রমাণ করছে যে আয়োজনটি কেবল প্রবাসীদের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমেরিকার অর্থনৈতিক অঙ্গনের নজরও এর দিকে রয়েছে।
প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দশ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দিচ্ছে। ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড ও পোল্যান্ড থেকে অংশ নিচ্ছেন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকেরা। ইতালি থেকে আসছেন ইতালি-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ও আগ্রাবাদ গ্রুপের প্রধান মোহাম্মদ ইরাদ আলী; টাটকা কোম্পানির স্বত্বাধিকারী সিআইপি এমদাদুর রহমান চৌধুরী; সিকে ফুড লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম; ভেনিস গ্লাস অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এম এম রহমান ও পরিচালক মাকসুদা বেগম; ম্যাকমার্ট গ্রুপ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ফায়সাল আলম।

যুক্তরাজ্য থেকে থাকছেন এনটিভি ইউরোপের নির্বাহী পরিচালক সাবরিনা হুসাইন এবং যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কেটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অলি খান এমবিই এফআরএসএ। স্কটল্যান্ড থেকে আসছেন সংসদ সদস্য ফয়সাল চৌধুরী এমবিই এমএসপি। পোল্যান্ড থেকে থাকছেন ব্যবসা উপদেষ্টা মনসুর মাহবুব। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ফায়সাল আলম, যিনি ইউরোপ সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন।
এ ধরনের আয়োজন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য শুধুই প্রদর্শনী নয়। এটি প্রবাসী তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা বিশ্ববাজারের প্রবণতা বুঝতে পারে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়তে পারে এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে পারে। এক্সপোতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই শতাধিক স্টলের সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পের ২টির মতো প্রতিষ্ঠান।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর নতুন শুল্কনীতি আরোপ করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সারা বিশ্বের বাণিজ্য পুনঃবিন্যাস করতে হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও চেম্বার এক্সপোকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বৃদ্ধির একটা সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার বাইরেও পাট, চামড়া, তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃষিজাত পণ্যে দেশটি নতুন দিগন্ত খুঁজছে। নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সেই পথচলার সেতু।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নতুন পরিচয় গড়ে তুলছেন। নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা তাদের গর্বের আয়োজন। এটি প্রমাণ করছে, বাংলাদেশিরা এখন আর কেবল শ্রমশক্তি নয়, বরং ব্যবসা ও বাণিজ্যের সৃজনশীল নেতৃত্বেও এগিয়ে আসছে। এক সময় প্রবাসীরা বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতেন গান, কবিতা আর সাংস্কৃতিক আসরে। আজ তারা দেশকে তুলে ধরছেন বৈশ্বিক অর্থনীতির মঞ্চে। নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা তাই কেবল একটি বাণিজ্য প্রদর্শনী নয়; এটি বাংলাদেশি স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও চেম্বার এক্সপো ২০২৫- এর আহ্বায়ক ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের এ এক্সপোতে যোগ দিয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন।