২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

এমবিএসের সম্মানে ট্রাম্পের নৈশভোজে হাজির মাস্ক, সম্পর্কের বরফ গলছে কি

এমবিএসের সম্মানে ট্রাম্পের নৈশভোজে হাজির মাস্ক, সম্পর্কের বরফ গলছে কি

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব ও টেসলা, স্পেসএক্স এবং স্টারলিংকের মতো উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে এক নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বিরোধের পর এটি তাদের দ্বিতীয় প্রকাশ্য সাক্ষাৎ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে ইলন মাস্কের উপস্থিতি টেসলার সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের মাঝে আপেক্ষিক মিলনের ইঙ্গিত হতে পারে।

মাস্ক গত বছরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন ও অর্থায়ন করেছিলেন এবং চলতি বছরের শুরুতে তাঁর প্রশাসনের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি সরকারি কার্যক্ষমতা বিভাগ (ডিওজিই) পরিচালনা করেছেন এবং ফেডারেল তহবিল ও চাকরিতে কাটছাঁটের তদারকি করেছিলেন।

কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। মাস্ক সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের ব্যাপক কর ও ব্যয়ের বিলকে অর্থনৈতিকভাবে অসংগত বলে আক্রমণ করেন এবং একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা জানান। ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দেন যে, মাস্কের কোম্পানিগুলোকে ফেডারেল সরকার থেকে যে বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি পায় তা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিরোধ এবং মাস্কের কট্টর-ডান রাজনৈতিক বক্তৃতা টেসলার ব্র্যান্ড ইমেজ, বিক্রি ও শেয়ার মূল্যের ক্ষতি করেছে। এর পর থেকে মাস্ক ও ট্রাম্প খুব কম প্রকাশ্যে একসঙ্গে দেখা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কট্টর ডানপন্থী রিপাবলিকান নেতা চার্লি কার্কের স্মরণসভায় মাস্ক শেষবার ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা গিয়েছিল।

এদিকে, ট্রাম্প সৌদি আরবের ডি–ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিন সালমান বিশ্বব্যাপী নিজের ভাবমূর্তি ঠিক করতে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চাচ্ছেন। ডিনারে অন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পর্তুগালের ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং এপল কমপিউটারের প্রধান নির্বাহী টিম কুক।

এদিকে, ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান গত ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার একাধিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এসব চুক্তি প্রতিরক্ষা থেকে বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্পর্ক পর্যন্ত বিস্তৃত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করছে। এ সময় ট্রাম্প সৌদি আরবকে ‘শীর্ষ মানের’ এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান সরবরাহেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস জানায়নি যে কতগুলো যুদ্ধবিমান বিক্রি হবে বা কোন ভেরিয়েন্ট সৌদি আরবকে দেওয়া হবে। তবে তারা স্বীকার করেছে যে এগুলো একটি ‘বড় প্রতিরক্ষা বিক্রয় প্যাকেজের’ অংশ।

হোয়াইট হাউসের ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করবে এবং নিশ্চিত করবে যে সৌদি আরব আমেরিকান পণ্যই কিনতে থাকবে।’ খবরে বলা হয়েছিল, সৌদি আরব দুই ডজন এফ-৩৫ চাইছে। চুক্তির মোট অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি এবং এতে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

ট্রাম্প ও বিন সালমান বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার একটি চুক্তিতেও চূড়ান্ত স্বাক্ষর করেছেন, যা দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক শক্তি অংশীদারত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সৌদি আরবের নাগরিক পারমাণবিক সহযোগিতার প্রাধান্যপ্রাপ্ত অংশীদার হিসেবে নিশ্চিত করে।’ চুক্তি আরও বলেছে, ‘সব সহযোগিতা শক্তিশালী স্থিতিস্থাপক নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে।’