নিউইয়র্ক     সোমবার, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে বৈধ কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক!

সীমা সুস্মিতা

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ১১:৪৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে বৈধ কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক!

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে একটি বড় অংশ বসবাসে বৈধ কাগজপত্রহীন বা “আনডকুউমেন্টেড” অবস্থায় রয়েছে। বিশেষত, যারা পর্যটক বা ছাত্র ভিসা নিয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন, তারা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এখানে থেকে গেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এসব ‘আনডকুমেন্টেড’ বাংলাদেশিদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বেশ কিছু বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছেন। এরমধ্যে শরণার্থী বা অস্থায়ী সুরক্ষা প্রাপ্ত বাংলাদেশিরা তাদের অবস্থার (ইমিগ্রেশন স্টাটাস) পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। অনেক বাংলাদেশি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে চালু হওয়া DACA (Deferred Action for Childhood Arrivals) প্রোগ্রামের আওতায় আছেন, যার মাধ্যমে তারা কিছু সময়ের জন্য কাজ এবং শিক্ষা লাভ করতে পারছেন। তবে এই DACA প্রোগ্রামটি আইনগতভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, এবং এর ভবিষ্যত নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত হোয়াইট হাউজ থেকে যেসব দেশের নাগরিকদের ইমিগ্রেশ্যান আইনভঙ্গের কারণে গ্রফতার কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার করা হয়েছে, সে তালিকায় কোন বাংলাদেশীর নাম নেই । ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন (২৪ লাখ) অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছেন। এই সংখ্যাটি গত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। আমেরিকার অভ্যন্তরে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) প্রতিনিয়ত অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার করছে। ২০২৩ সালে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট – ICE ৭০,০০০-এরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে, যারা বিভিন্ন ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশ্যান আইন ভঙ্গ করেছেন, যেমন: অভিবাসন ভিসার মেয়াদ ফুরানো, কাজের ভিসা ছাড়া অবস্থান ইত্যাদি। প্রতিবছর আনুমানিক ৫ লাখ অবৈধ প্রবেশের ঘটনা ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসী জনসংখ্যা প্রায় ১১.৭ মিলিয়ন (১.১৭ কোটি) এ পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় ৮০০,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের এই অনুমান ২০০৮ সালের প্রায় ১২ মিলিয়নের শীর্ষ স্তরের নিচে রয়েছে। ২০০৮ সালের পর, এই জনসংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছিল এবং ২০২০ সালে তা ১০ মিলিয়নে নেমে আসে।

এদিকে দায়িত্বভার গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসন অবিলম্বে দুই বছর বা তারও বেশি সময় ধরে বিহীনযুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন বলে প্রমাণ করতে পারে না এমন নথিভুক্তবিহীন অভিবাসীদের দ্রুত বিতাড়িত করার প্রক্রিয়াটি জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা এজেন্টদের বলা হয়েছে অভিবাসীদেরকে তাদের আইনি সুরক্ষার অনুরোধ করার অনুমতি না দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ। নতুন ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের অনুমতিপ্রাপ্ত আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন এবং প্রক্রিয়াকরণ চার মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে ফলে হাজার হাজার শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসার অপেক্ষায় থাকার পর এখন আটকা পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘গণ বিতাড়ণের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র -মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এই কাজের জন্য সরকারকে সেনা মোতায়েন এবং অতিরিক্ত সংস্থান বাড়াতে অনুমতি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সপ্তাহে অভিবাসন এবং সীমান্ত সংক্রান্ত একাধিক পদক্ষেপ এবং আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার উদ্দেশ্য ছিল অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।এই আদেশগুলির মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা নিয়ে কাজ করা এবং সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা অন্তর্ভুক্ত।

ফেডারেল রেজিস্টার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দ্রুত বের করে দেওয়ার নীতি কার্যকর হয়েছে।এই নীতি, যা আগে দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) এলাকার মধ্যে আটক অবৈধ অভিবাসীদের উপর সীমাবদ্ধ ছিল, এখন এটি যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে প্রয়োগ করা যাবে। নোটিশে আরো বলা হয়েছে,এই পরিবর্তনের প্রভাব হবে জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তা বৃদ্ধিতে – একই সাথে সরকারী খরচ কমানো – দ্রুত অভিবাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এটি যোগ করেছে যে এই পরিবর্তনটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে “যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের বৃহৎ পরিমাণ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে এবং “যাদের প্রবেশ, থাকা, বা সুরক্ষা বা রক্ষা পাওয়ার অধিকার নেই তাদের দ্রুত বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।”বিস্তৃত নীতিটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে। এখন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রে “অননুমোদিত” অভিবাসীদের আটক করার পর তাদেরকে অভিবাসন আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশ দেওয়া হতো, যেখানে তারা আশ্রয়ের জন্য তাদের মামলা উপস্থাপন করতে পারতেন।

সাধারণত, ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া শুরু হতে বিচারকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে হতো।কিন্তু এই সপ্তাহের শুরুর দিকে, ট্রাম্প একটি অভিবাসন আইন – 212(f) – উল্লেখ করেছেন, যা প্রেসিডেন্টকে “ক্ষতিকর” হিসেবে মনে করা বিদেশিদের প্রবেশ স্থগিত করার ক্ষমতা দেয়। CBS-এর অভ্যন্তরীণ নথি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাতে রিপোর্ট করা হয়েছে যে, এই নীতি কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সমুদ্রসীমায়ও প্রযোজ্য, যেমন ফ্লোরিডা। আলাদা এক আদেশে শরণার্থী ভ্রমণ এবং প্রক্রিয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ট্রাম্পের পূর্বের নির্বাহী আদেশের পর আসে, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচি USRAP(United States Refugee Admissions Program) স্থগিত করে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র “বিপুল সংখ্যক অভিবাসী, বিশেষ করে শরণার্থীদের তার সম্প্রদায়ে শোষণ করার ক্ষমতা রাখে না, যা আমেরিকানদের জন্য সংস্থান সংকট সৃষ্টি করবে।

উল্লেখ্য, “USRAP হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন এবং আশ্রয় দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।- সকল তথ্য ইমিগ্রেশন বিষয়ক বিভিন্ন পোর্টাল থেকে নেয়া হয়েছে।

 

শেয়ার করুন