১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে এক আগ্নেয়গিরিতে ৩০ দিনে ৮০০টিরও বেশি ভূমিকম্প, সিয়াটল শহর ধ্বংসের শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রে এক আগ্নেয়গিরিতে ৩০ দিনে ৮০০টিরও বেশি ভূমিকম্প, সিয়াটল শহর ধ্বংসের শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরি মাউন্ট রেইনিয়ারের নিচে গত ৩০ দিনে ৮০০টিরও বেশি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে ৫০০টির বেশি হয়েছে শুধু জুলাই মাসেই। এই ভূমিকম্পের ফলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ—এটি কি অগ্ন্যুৎপাতের আগাম বার্তা?

জুলাই মাসে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটে গেছে প্রায় ৪০০টি ভূমিকম্প। বিজ্ঞানীদের মতে, এমন ঘটনা একটি ‘ইনটেন্স সিসমিক সোয়ার্ম’ বা অত্যন্ত ঘন ভূকম্পনীয় দুর্যোগ।

গভীর উদ্বেগের কারণ রেইনিয়ারের অবস্থান ও ইতিহাস : এই বিশাল আগ্নেয়গিরিটি ওয়াশিংটনের সিয়াটল-টাকোমা মেট্রো এলাকার ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বাস করে ৩.৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বড় অগ্ন্যুৎপাত হলে এখানকার জনজীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে— মুহূর্তেই সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে আগ্নেয়গিরির ছাই ও মারাত্মক লাভা।

রেইনিয়ার গত হাজার বছরের মধ্যে বড় কোনো অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়নি, কিন্তু ভূমিকম্পের এই ব্যাপকতা আগ্নেয়গিরির অস্থিরতার ইঙ্গিত হতে পারে। সাধারণত এমন ভূকম্পন ঘটে, যখন আগ্নেয়গিরির নিচে থাকা ম্যাগমা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা কী বলছে?
যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, এ মুহূর্তে ম্যাগমা নয় বরং আগ্নেয়গিরির নিচে গরম তরল চলাচলের কারণেই ভূমিকম্পগুলো ঘটছে। এখনো সতর্কতা মাত্রা বজায় রয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ছোট ভূমিকম্পগুলো এতটাই দুর্বল যে এগুলো ভূপৃষ্ঠে অনুভূত হয় না এবং এতে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

তারা আরও বলছে, ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে কোনো অস্বাভাবিক মাটি স্ফীতি বা অস্বাভাবিক শব্দ পাওয়া যায়নি, যা ম্যাগমা চলাচলের লক্ষণ হতে পারত।

তবু আশঙ্কা কাটছে না বিজ্ঞানীদের মনে। ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্ট-এর অ্যাম্বাসেডর ও ভূতত্ত্ববিদ জেস ফিনিক্স সিএনএনকে বলেছেন, ‘মাউন্ট রেইনিয়ার রাতে আমাকে ঘুমাতে দেয় না। এটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য এক বিশাল হুমকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকোমা ও দক্ষিণ সিয়াটল শহর আসলে ১০০ ফুট পুরু প্রাচীন লাহারের উপর গড়ে উঠেছে, যা রেইনিয়ারের পুরোনো অগ্ন্যুৎপাত থেকেই তৈরি।’

লাভার ভয়: আগ্নেয়গিরির নীরব ঘাতক : রেইনিয়ারের অগ্ন্যুৎপাত হলে ভয় থাকবে মূলত লাভা প্রবাহের। লাভা মূলত বিস্ফোরণের ফলে গলে যাওয়া বরফ ও পানির সঙ্গে আগ্নেয় পাথর ও মাটি, যা মুহূর্তেই গ্রাম-শহর ধ্বংস করে দিতে পারে।

লাভা শুধু অগ্ন্যুৎপাতেই নয়, ভারি বৃষ্টিপাত বা আগের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে পাহাড় দুর্বল হয়ে গেলেও সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী লাভা বিস্ফোরণ ছিল ১৯৮৫ সালের আর্মেরো ট্র্যাজেডি। সে বছর কলম্বিয়ার আর্মেরো শহরে নেভাডো ডেল রুইজ আগ্নেয়গিরিতে লাভার বিস্ফোরণ ঘটে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।

ওয়াশিংটনের কাছেই ১৯৮০ সালে মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স-এর অগ্ন্যুৎপাতও একটি ভয়াবহ লাভার বিস্ফোরণ হয়েছিল। এতে ২০০টির বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস, ১৮৫ মাইল সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৫৭ জন মারা যান।