সেপ্টেম্বর থেকে আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি অঙ্গরাজ্যে ও ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়া। এর ফলে স্কুলে মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপকারী অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে। ২০২৩ সালে প্রথম এই নিয়ম চালু করেছিল ফ্লোরিডা।
নতুন নীতিমালার আওতায় ১৮টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় পুরো স্কুলেই সারাদিন মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। তবে জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় এই নিষেধাজ্ঞা কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় শুরু থেকে ছুটির ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত প্রযোজ্য। আরও সাতটি অঙ্গরাজ্যে কেবল ক্লাস চলাকালে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে ক্লাসের ফাঁকে বা দুপুরের খাবারের সময় তা ব্যবহার করা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলের ডস হাই স্কুলে শেষবর্ষের ক্লাস শুরু করেছেন জামেল বিশপ। তার ক্লাসে পাঠদানের সময় এখন মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। যে কারণে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশে বড় পরিবর্তন চোখে পড়েছে তার।
জামেল বলেন, “আগের বছরের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা তেমন মনোযোগ দিত না, একই প্রশ্ন বারবার করে সময় নষ্ট করতো। তবে এখন যেসব শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের আরও বেশি সময় দিতে পারছেন শিক্ষকরা।”
মোবাইল ফোনের ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষা থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দেয় এ বিষয়ে একমত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই এই উদ্যোগ সমর্থন করেছে।
গত সপ্তাহে আটলান্টায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর আয়োজিত এক আলোচনায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি স্কট হিলটন বলেন, “ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্লোরিডায় যদি কোনো বিল পাস হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি বেশ জনপ্রিয় উদ্যোগ।”
অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে স্কুল পরিচালনার ঐতিহ্য রয়েছে—এমন কিছু অঙ্গরাজ্যে কেবল একটি মোবাইল ফোন নীতিমালা বাধ্যতামূলক করেছে। অন্যরাও ইঙ্গিতটি বুঝে নিয়ে ফোন ব্যবহারে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।
অভিভাবকদের আপত্তি : এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত জর্জিয়ার ১২৫টি স্কুলে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও ডিজিটালমাধ্যম ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আপত্তিই সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
শিক্ষার্থী অড্রিয়ান্নার মা অড্রেনা জনসন জানান, তার সন্তানরা স্কুলে সহিংসতা থেকে নিরাপদ আছে কি না এই নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন।
অড্রেনা বলেন, “একবার শিক্ষার্থী নন, এমন একজন স্কুল প্রাঙ্গণে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিল। ক্লাস চলাকালীন মেয়ের পাঠানো মেসেজের মাধ্যমেই বিষয়টি জেনেছিলাম। সন্তানের কাছে ফোন থাকাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাহলে কখন কী হচ্ছে, আমি সঙ্গে সঙ্গেই জানতে পারি।”
ন্যাশনাল প্যারেন্টস ইউনিয়নের পরিচালক জেসন অ্যালেন বলেন, “অনেক বাবা-মা অড্রেনার সঙ্গে একমত। সন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আরও কার্যকর পদক্ষেপ চান।” অ্যালেন বলেন, “আমরা কেবল মোবাইল ফোন নীতির পরিবর্তন করেছি। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের চাহিদা পূরণ করছি না। এমনকি শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি না।”