১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেষের পাতা

জমজমাট আয়োজনে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জমজমাট আয়োজনে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জমজমাট আয়োজনে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হয়েছে। গত ২০-২১ সেপ্টেম্বর শনি ও রোববার নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানরের গ্র্যান্ড বলরুমে দু’দিন ব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ী সহ সর্বস্তরের মানুষের শুভেচ্ছায় আবারও অভিষিক্ত হলো মিডিয়া দুটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নানা আয়োজনের মধ্যে ছিলো সেমিনার, শুভেচ্ছা বিনিময়, অ্যাওয়ার্ড বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানী সহ মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে কী নোট স্পীকার ছিলেন সিটি কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। অনুষ্ঠানে ফ্লোরিডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনির হোসেন, ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট ৩৬ থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মেরী জোবায়দা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশ ও প্রবাসের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দু’দিনের অনুষ্ঠান চলাকালে হোম কেয়ার সার্ভিসেস, খাবার ও শাড়ী-কাপড়ের একাধিক স্টল ছিলো। এসব স্টলে ব্যাপক দর্শক-ক্রেতার সমাগম ঘটে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দু’দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর টাইম টেলিভিশনের থিম সং পরিবেশিত হওয়ার পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের। এরপর ‘হাও দ্যা কমিউনিটি বিজনেস অ্যাম্পাওয়ারিং টু দ্যা কমিউনিটি প্রোসপেক্টস এন্ড এএমপি চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট সৈয়দ আল আমীন রাসেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে কী নোট স্পীকার ছিলেন আহাদ আলী সিপিএ। আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ প্রবাসী নাসির খান পল, বেস্ট কেয়ার হোম সার্ভিসেস এর সিইও ব্যার্নার শেল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী হেলাল আহমেদ, কল্লোল আহমেদ প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যদিয়ে সেমিনার শেষ হয়।

পরবর্তীতে বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ভয়েস অব চেঞ্জ : ইমিগ্র্যান্ট এংগেজমেন্ট ইন আমেরিকান ডেমোক্র্যাসী’ শীর্ষক আরো একটি সেমিনার। এতে কী নোট স্পীকার ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক মেরী জোবায়দা। আলোচনায় অংশ নেন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের সাবেক লেফটেন্যান্ট শামসুল হক, ড. নকিবুর রহমান প্রমুখ। পরবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডা. সবুর, আরমান চৌধুরী সিপিএ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আলহাজ সোলায়মান ভ‚ইয়া, আগামী নির্বাচনে জ্যামাইকা থেকে অ্যাসেম্বলী সদস্য প্রার্থী মাহতাব খান প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কালা মিয়া, শিমুল খান, করিম হাওলাদার, ত্রিনিয়া হাসান ও শাহ মাহবুব। এদিনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন টাইম টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার তামান্না মৌ ও উপস্থাপিকা সোনিয়া শারমিন। নৈশ ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

সমাপনী অনুষ্ঠান: ২১ সেপ্টেম্বর রোববার সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্যের পর তিনি বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন পরিবারে কর্মরতদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় তিনি বলেন, টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর হয়ে অতীতের মতো আগামীতেও এগিয়ে যাবে।

এরপর বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মাহবুবুর রহমান-কে আজীবন সম্মাননা, সাংবাদিক হাবিবুর রহমানকে বাংলা পত্রিকা’র বেস্ট টিম মেম্বার এবং সৈয়দ ইলিয়াস খসরুকে টাইম টেলিভিশনের বেস্ট টিম মেম্বারের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন- জেএফবি গ্রæপের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, আরমান চৌধুরী সিপিএ, আহাদ আলী সিপিএ, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ (সভাপতি সুহেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ উদ্দিন), গ্রীন মেকানিক্যাল ইয়ংকার্স-এর প্রেসিডেন্ট তোফায়েল চৌধুরী, ড. ইমরুল কবীর, ডা. বর্ণালী হাসান, ডিজিটাল ট্রাভেলস এস্টোরিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম, ইত্যাদি গার্ডেন এন্ড গ্রীল-এর কর্ণধার এম শাকিল। তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এরপর ভার্চ্যুয়ালী শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএস কংগ্রেসের মাইনোরিটি লীডার, নিউইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য হাকিম জাফরীস।

অ্যাওয়ার্ড প্রদানের পর মঞ্চে আসেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী ষ্টেট অ্যাসেম্বীলম্যান জোহরান মামদানী। বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীরা মামদানীকে স্বাগত জানান। এসময় জনাব আবু তাহের অনুষ্ঠানের কী নোট স্পীকার, বাংলাদেশী ও মুসলিম কমিউনটির গর্ব নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফকে তার বক্তব্য দিতে মঞ্চে আবাান করেন। শাহানা হানিফ তার বক্তব্যে কমিউনিটির কল্যাণে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার ভ‚মিকার ভ‚য়সী প্রশংসা করেন এবং তার সাফল্যে মিডিয়া দুটির সমর্থন ও প্রচারের কথা স্মরণ করেন। পাশাপাশি তিনি কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে মূলধারার রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।

শাহানা হানিফ বলেন, গ্রাসরুট আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমি উঠে এসেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমি টিকে আছি বাংলাদেশী কমিউনিটির অনুপ্রেরণায়। বাংলা পত্রিকা, টাইম টিভি সহ বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম সবসময়ই পাশে থেকেছে। প্রসঙ্গত তিনি আরও বলেন, জোহরান মামদানী যদি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হন তবে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে উদারনীতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন সহজ হবে। তাই আসন্ন নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটিকে মামদানীর প্রতি সমর্থন ধরে রাখার আহŸান জানান। মেয়র পদপ্রার্থী মামদানী সহ আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শক-শ্রোতা মনযোগ সহকারে শাহানা হানিফের বক্তব্য শুনেন এবং বিপুল করতালীর মাধ্যমে তাকে সমর্থন জানান।

এরপর জনাব আবু তাহের মঞ্চে আহবান জানান জোহরান মামদানীকে। বিপুল করতালীর মধ্যদিয়ে তিনি মঞ্চে এসে কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় আবু তাহের ও মিডিয়া দুটির ভ‚য়ষী প্রশংসা করে বলেন, টাইম টেলিভিশন তার কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে শুধু কমিউনিটি নয়, আমেরিকান রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মামদানী বলেন, আমার নির্বাচনে আন্টি-আংকেল, ব্রাদার-সিস্টারগণ ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করেছেন। আগামীতেও সবাই আমাকে জয়ী করলে, আমরা সবাই মিলেই জয়ী হবো।

মামদানী বলেন, আমাদের সকলের যুদ্ধ এক, সব লড়াই একই সূত্রে গাথা। একজন মুসলমান এবং একজন অভিবাসী হিসেবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। বলেন, প্রথম মুসলমান মেয়র হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির নেতৃত্বে পৌঁছানো আমাদের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। তিনি আরো বলেন, শুধু ধর্মবিশ্বাস নয়, প্যালেস্টাইনের বিপন্ন মানুষের কথা বলার কারণেও আজ অনেককে বিতাড়নের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত একসাথে কাজ করতে হবে। নির্বাচনে জয়লাভ করে আমরা বলতে পারব-এ জয় আমাদের সবার।

ডেমোক্র্যাট দলীয় নিজের প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী কমিউনিটির অবদান স্মরণ করে মামদানী বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, আমার বিজয়ে বাংলাদেশী আন্টি ও আঙ্কেলদের সমর্থন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি তিনি টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকাকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কর্ণধার আবু তাহেরকে অভিনন্দন জানান।

এদিন অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভ‚ইয়া, ট্রাষ্টি সদস্য আহসান হাবীব, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবিএম ওসমান গণি, বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসী গ্রæপ (বাগ)-এর সভাপতি জয়নাল আবেদীন, মানবাধিকার কর্মী কাজী ফৌজিয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রাহমী খান, কালা মিয়া ও রেশমী মির্জা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশন করে শিশু শিল্পী লিয়ানা মানহা। এদিনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন টাইম টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার সাদিয়া খন্দকার ও দিমা নেফারতিতি। নৈশ ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। খবর ইউএনএ’র।