১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আর্ন্তজাতিক

স্ত্রী ব্রিজিত নারী, মার্কিন আদালতে ‘বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ দেবেন মাখোঁ

স্ত্রী ব্রিজিত নারী, মার্কিন আদালতে ‘বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ দেবেন মাখোঁ

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁ যে একজন নারী, তা প্রমাণ করতে মার্কিন আদালতে ছবিসহ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছেন এই দম্পতি। তাদের আইনজীবী জানান, ডানপন্থি ইনফ্লুয়েন্সার ক্যান্ডেস ওয়েন্সর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন মাখোঁ দম্পতি। ওয়েন্স প্রচার করেছিলেন, ব্রিজিত মাখোঁ আসলে পুরুষ হিসেবে জন্মেছিলেন। এই মামলাতেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন নথি উপস্থাপন করবেন। জবাবে ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

বিবিসির ‘ফেম আন্ডার ফায়ার’ পডকাস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাখোঁ দম্পতির আইনজীবী টম ক্লেয়ার বলেন, এ ধরনের দাবি মিসেস মাখোঁকে ‘অত্যন্ত মর্মাহত’ করেছে এবং এটি ফরাসি প্রেসিডেন্টের জন্য ‘মনোযোগ নষ্টের কারণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আদালতে ‘বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে, যা হবে বিজ্ঞানভিত্তিক’। এই মুহূর্তে এর ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত না জানালেও তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে এবং নির্দিষ্টভাবে’ অভিযোগগুলো যে মিথ্যা, তা পুরোপুরি প্রমাণ করতে প্রস্তুত মাখোঁ দম্পতি। ক্লেয়ারে, প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে ব্রিজিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ব্রিজিতের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা এবং সন্তানদের লালন-পালনের ছবি মাখোঁ দম্পতি সরবরাহ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লেয়ার বলেন, সেসব ছবি আছে। আদালতের নিয়ম ও মানদণ্ড মেনেই তা উপস্থাপন করা হবে। ওয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি ওয়্যার’-এর একজন সাবেক ভাষ্যকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কয়েক লাখ অনুসারী রয়েছে। তিনি বারবার প্রচার করেছেন যে ব্রিজিত বাখোঁ একজন পুরুষ।

২০২৪ সালের মার্চে ওয়েন্স দাবি করেন, এই অভিযোগের ওপর তিনি নিজের ‘পুরো পেশাগত সুনাম বাজি রাখতে’ প্রস্তুত। বেশ কয়েক বছর আগে ইন্টারনেটের কিছু অপ্রচলিত মাধ্যমে, বিশেষ করে ২০২১ সালে ফরাসি ব্লগার আমানদিন রয় ও নাতাশা রে-র একটি ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে এই অভিযোগের সূত্রপাত। ম্যাখোঁ দম্পতি প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালে ফ্রান্সে রয় ও রে-র বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলায় জয়ী হন। কিন্তু ২০২৫ সালে মত প্রকাশের স্বাধীনতার যুক্তিতে সেই রায় আপিলে বাতিল হয়ে যায়, অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে নয়। মাখোঁ দম্পতি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করছেন।

জুলাইয়ে মাখোঁ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির মামলায় কোনো সুপরিচিত ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে বাদীকে ‘প্রকৃত বিদ্বেষ’ প্রমাণ করতে হয়। অর্থাৎ প্রমাণ করতে হয় যে বিবাদী জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন অথবা সত্যের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। আগস্টে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘প্যারিস ম্যাচ’কে ইমানুয়েল মাখোঁ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানান। ‘এটা আমার সম্মান রক্ষার প্রশ্ন! কারণ এটি একটি আষাঢ়ে গল্প। এই ব্যক্তি খুব ভালোমতো জানতেন যে তার কাছে থাকা তথ্য মিথ্যা। তিনি একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের স্বার্থে এবং উগ্র-ডানপন্থি নেতাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের জেরে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই এ কাজ করেছেন।’ মাখোঁ দম্পতির মামলার প্রতিক্রিয়ায় ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার জন্য আবেদন করেছেন।

বিবিসি এ বিষয়ে ক্যান্ডেস ওয়েন্সের আইনি দলের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে। ওয়েন্স এর আগে বলেছিলেন, তিনি যা বলছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করেন এবং বাকস্বাধীনতা ও সমালোচনার অধিকারের চেয়ে বেশি আমেরিকান আর কিছু হতে পারে না।