যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি বিদেশ থেকে আউটসোর্সিং সেবা নেয়, তাদের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতের বিশাল আইটি খাত দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এ কারণে গ্রাহকরা চুক্তি বিলম্বিত বা নতুনভাবে আলোচনার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও আইনজীবীরা।
তাদের মতে, যদিও এই কর প্রস্তাবটি এখনই আইন হিসেবে পাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, তবুও এই বিলের কারণে ভবিষ্যতে বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বিদেশি (বিশেষ করে ভারতের মতো) আউটসোর্সিং আইটি সেবা কিনার পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে পারে। তবুও যদি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে এই কর দিতে হয়, তাহলে যারা বিদেশি আইটি সেবার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল তারা অবশ্যই প্রতিরোধ করবে, যা ব্যাপক লবিং ও আইনি লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করবে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষক ও আইনজীবীরা।
ভারতের ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি খাত গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সফটওয়্যার সেবা রপ্তানির মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, আমেরিকান এক্সপ্রেস, সিসকো, সিটিগ্রুপ, ফেডেক্স এবং হোম ডিপো। এখন এটি ভারতের জিডিপির ৭ শতাংশের বেশি জুড়ে রয়েছে। তবে গ্রাহক দেশগুলোতে এ খাত সমালোচিত হয়েছে। কারণ গ্রাহক দেশগুলো মনে করছে, ভারতের কম খরচের কর্মীরা তাদের দেশের চাকরি নিয়ে নিচ্ছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর বার্নি মোরেনো ‘হায়ার অ্যাক্ট বা নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রস্তাব’ নামে একটি বিল উপস্থাপন করেছেন। এই অ্যাক্টে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিদেশি কর্মী নিয়োগের বদলে আমেরিকান কর্মীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিদেশি আউটসোর্সিং সেবার ওপর কর আরোপ করা হবে এবং এই কর থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মশক্তি উন্নয়ন করা। বিলটি কোম্পানিগুলোকে আউটসোর্সিং খাতে ব্যয়কে কর-ছাড়যোগ্য হিসেবে দেখানোর সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করবে।
এই প্রস্তাব ভারতের আইটি খাতের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়ে এসেছে। খাতটি বর্তমানে প্রধান মার্কিন বাজারে দুর্বল রাজস্ব প্রবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ও শুল্ক অনিশ্চয়তার কারণে গ্রাহকেরা অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যয় স্থগিত করেছেন। আইন বিশেষজ্ঞ ও শিল্প পর্যবেক্ষকদের মতে, কোম্পানিগুলো প্রস্তাবিত বিলটির বিরুদ্ধে জোরালো লবিং করবে এবং এটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবে।
অলকর্ন ইমিগ্রেশন ল’র সিইও সোফি অলকর্ন বলেছেন, “এ ধরনের একটি বিল সম্ভবত মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, যারা আউটসোর্সিংয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিলটি যদি কখনও আইন হিসেবে পাস হয়, তারা সম্ভবত এর বিভিন্ন দিক চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করবে। ”তবে বিলটির শর্ত বাস্তবায়নের বাস্তব সমস্যার কারণে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এইচএফএস রিসার্চের সিইও ফিল ফারশ্ট বলেছেন, “আরও সম্ভাবনা হলো একটি হালকা সংস্করণ, যেখানে সীমিত ধারা থাকবে বা কার্যকর হওয়ার সময় বিলম্বিত করা হবে।” বিলটি মার্কিন কোম্পানির গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টারগুলোকেও (জিসিসি) প্রভাবিত করতে পারে, যেগুলো কম খরচের অফশোর ব্যাক-অফিস থেকে উন্নীত হয়ে এখন উচ্চমূল্যের উদ্ভাবনী কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা অপারেশন, আর্থিক খাত, গবেষণা ও উন্নয়নকে সহায়তা করে।
এভারেস্ট গ্রুপ পার্টনার ইউগল জোশি বলেছেন, “বিদ্যমান কাজ থেকে সরে আসা কঠিন হবে, তবে নতুন সেটআপ ও সম্প্রসারণ প্রভাবিত হতে পারে। ”সিএএম-এর পার্টনার ভারত রেড্ডি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে উপযুক্ত মানবসম্পদের অভাব একটি চলমান সমস্যা, যা নিকট ভবিষ্যতে কেবল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব।”সূত্র: রয়টার্স