১৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভারতের হাইব্রিড যুদ্ধ, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো টার্গেট

বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী কয়েকটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাইবার, গোয়েন্দা ও প্রোপাগান্ডাসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার বা সমন্বিত যুদ্ধ শুরু করেছে ভারত। অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় কাবু করতে এবং প্রতিবেশী দেশে প্রভাব বিস্তারের জন্য গোপন অভিযান এমনকি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি বাংলাদেশজুড়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতায় জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামের ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারীরা তৈরি পোশাক রপ্তানিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের পোশাকের বাজারকে ধ্বংস করতে ভারতের আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) বাংলাদেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরে আগুন লাগিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, ঘটনা নিয়ে কাজ চলছে এবং ‘অন্য আরও কার্যক্রমও চালু আছে’, তবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

বাংলাদেশে এই গ্রেপ্তার অভিযান এমন একসময় চলল, যখন ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চীন ও মালদ্বীপে গুপ্তচর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্পেশাল সার্ভিসের সমন্বয়কারী বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গুপ্তচরবৃত্তি ও হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সামরিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর নজরদারি চালানো, নাশকতার বিস্ফোরক প্রস্তুত করা এবং সরাসরি হামলা চালানোর কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন; তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানজুড়ে বিস্ফোরক পরিবহনের জন্য একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। ভারতীয় নাগরিকরা ঢাকার কার্গো টার্মিনালে বিস্ফোরক ভর্তি প্যাকেজ রেখে এসেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আসছে, সেই পরিবেশ নষ্ট ও অস্থিতিশীল করতেই এই হাইব্রিড যুদ্ধ চালাচ্ছে ভারত।

গত ১৫ বছর ধরে ভারতের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ পরিচালককে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি দেশও অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে ভারত এই ধরনের হামলার পরিকল্পনা চালাচ্ছে।

অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে তিনজনকে আগুন লাগানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই মাসে বাংলাদেশের আদালত সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ভারতের হাতে দেওয়ার সন্দেহে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনেও ভারতের পক্ষ থেকে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কানাডা বারবার ভারতকে শিখ সমাজের ওপর গোপন হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগও দিয়েছে। ভারতের অনুপ্রবেশের ফলে বাংলাদেশের স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে অসংখ্য লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধের শুরু হয়েছে মাত্র। আমি মনে করি, আমরা আরও বেশি ঘটনা দেখতে পাব। আমরা এর ধরন দেখতে পাচ্ছি। এবং এটি ভালো দেখাচ্ছে না।’ – সংবাদসুত্র দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ