বয়স ৩০ বছর পার হলেই নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই বয়স থেকেই সচেতনভাবে নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত। এরই অংশ হিসেবে সকালে খেতে পারেন ঢেঁড়স ভেজানো পানি। একটি শক্তিশালী টনিকের মতোই কাজ করে এই পানি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। এটি সাধারণত তরকারিতে, ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়।
এ ছাড়া ঢেঁড়সের পানিতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। ঢেঁড়সের পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে এর স্বাদ শুধু বাড়ে না, একই সঙ্গে পুষ্টিগুণও বাড়ে। খালি পেটে এই পানীয় পান করলে শরীরের পক্ষে উপকারী। কী কী উপকারে আসতে পারে এই পানীয়, চলুন জেনে নিই।
ঢেঁড়স ভেজানো পানির গুণাগুণ:
১. ঢেঁড়স ভেজানো পানিতে আছে দ্রবণীয় ফাইবার। যা হজমে সাহায্য করে। পেট ফাপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পারে। প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এই ফাইবার।শরীরের প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া রয়েছে এই সবজিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রদাহ, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, পেটের সমস্যা দূর করতে পারে। মধুর সঙ্গে মেশালে তার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটি দূর করতে পারে।
২. খালি পেটে ঢেঁড়স ভেজানো পানিতে মধু মেশালে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। শরীর চিনি বা মিষ্টিজাতীয় পদার্থ শোষণে বাধা দেয়। ফলে হঠাৎ করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে না।
৩. ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনোলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এই সবজিতে। যা হার্টের স্বাস্থ্য়ের জন্য উপকারী। এটি প্রদাহ কমাতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে পারে। এই ফাইবার অতিরিক্ত কোলেস্টেরল শরীর থেকে বের করে দিতে পারে।
৪. ওজন কমাতে পারে ঢেঁড়সের পানি। এতে মধু মেশালে কার্যকারিতা বাড়তে পারে। এতে ফাইবার থাকায় পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। খিদে পাওয়ার প্রবণতাও কমায়। মধু মেশালে খারাপ ক্য়ালরি খাওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস হয়।
৫. হজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে ঢেঁড়স ভেজানো পানি। পেট ফেপে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম কমাতে পারে এই পানি। ঢেঁড়স মিউকিলেজ সমৃদ্ধ। এটি একটি জেলের মতো পদার্থ যা পরিপাকতন্ত্রকে স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একটি গবেষণা অনুসারে, ঢেঁড়সের মিউকিলেজ অন্ত্রে প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।আর্থারাইটিসের আশঙ্কা কমায় এবং হার্টের সমস্যার আশঙ্কা দূর করে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ঢেঁড়স ভেজানো পানি। ঢেঁড়স ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের দারুণ উৎস। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে হাইলাইট করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঢেঁড়সের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৭. কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায়। ঢেঁড়স পানি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মত দিয়েছে বেশ কিছু গবেষণা। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢেঁড়সের মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
৮. ঢেঁড়স ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন কে এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, এগুলোর সবই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বোন রিপোর্টে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন কে হাড়ের খনিজকরণ এবং শক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে হাড়-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমে।
৯.কিডনির ক্ষতি আটকাতে পারে ঢেঁড়স। বিশেষ করে যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, তাদের জন্য উপকারী এই সবজি। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে পারে।