১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবেন কী করে

ক্রিয়েটিনিন শরীরের এমন এক বর্জ্য, যা মাংসপেশি ব্যবহারের ফলে তৈরি হয়। প্রচুর প্রোটিন খেলেও এ পদার্থটি উৎপন্ন হয়। রক্তের মাধ্যমে এ ক্রিয়েটিনিন কিডনিতে পৌঁছায় এবং মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিডনি যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তখন ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর তা দেখেই বোঝা যায় কিডনিতে রোগ হয়েছে কি না। ভেজাল খাদ্য, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন ছাড়া আরও কিছু কারণে কিডনি রোগী বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ডায়েটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলেও শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। বিশেষ করে মূত্রত্যাগের নানা সমস্যা (বারবার হওয়া, ব্যথা হওয়া), পেশিতে টান, ক্লান্তি লাগা, গা গুলানো ও বমি আসা। এ ছাড়া চোখের চারপাশে ফোলা ভাবও হয়। পায়ের পাতা এবং গোড়ালিতে ফোলা ভাব দেখা দেয়।

ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা : প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম/পার ডেসিলিটার। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১.১ মিলিগ্রাম/পার ডেসিলিটার। টিনএজারদের ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১ মিলিগ্রাম/পার ডেসিলিটার, শিশুদের ক্ষেত্রে ০.৩ থেকে ০.৭ মিলিগ্রাম/পার ডেসিলিটার। মাঝেমধ্যে কিছু রোগের কারণে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে। তখন ওই রোগের চিকিৎসা করালেও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঝুঁকিতে কারা : চিকিৎসকরা যাদের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তাদের মধ্যে আছে—ডায়াবেটিস আক্রান্ত, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং যাদের পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস আছে। অটোইমিউন ডিজঅর্ডারে আক্রান্তরাও এ সমস্যায় পড়তে পারেন।

এখন পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কোনো ওষুধ বের না হলেও যথাযথ পথ্য নিয়ন্ত্রণ করে কিডনিকে বিশ্রাম দিতে পারলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করে একজন ডায়েটেশিয়ান রোগীর ডায়েট তৈরি করেন। তার পরামর্শ মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি রোগীদের জন্য প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ৩০-৩৫ ক্যালরি নিতে হয়।

এর বেশিরভাগই কার্বোহাইড্রেট থেকে বরাদ্দ করা হয়। প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করা কিডনি রোগীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা, ইউরিন মাইক্রো অ্যালবুমিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা, রোগীর ওজন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন রোগীভেদে ডায়েটে দেওয়া হয়। ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস, মাছ, দুধ বা দই থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। অনেক রোগীরই একটি ভুল ধারণা থাকে যে, ৩০ গ্রাম প্রোটিন মানে ৩০ গ্রাম মাছ বা মাংস। আসলে ৩০ গ্রাম প্রোটিন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টায় রোগীর প্রোটিনের পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে কতটুকু ওজনের মাছ বা মুরগির মাংসের টুকরা হবে, তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ মিলি ইকুইভিন্টে পর্যন্ত পটাশিয়াম প্রতিদিন রোগীকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কতটুকু ফল ও সবজি খাবে তা ডায়েটিশিয়ান নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে। আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা ও পেঁপে—এ চারটি ফলই সাধারণত দেওয়া হয়। তবে পটাশিয়ামের মাত্রাভেদে তা পরিবর্তন করা যেতে পারে।

কিডনি রোগীর সোডিয়ামও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা এবং গ্রহণ করা ওষুধের ভিত্তিতে সাধারণত প্রতিদিন ২ থেকে ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। কিডনি রোগীদের অনেক শারীরিক দুর্বলতা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। বিশেষ করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপলিমেন্ট বা ইনজেকশন নিতে হতে পারে। তবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।