‘বলো, কী তোমার ক্ষতি, জীবনের অথই নদী, পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি’ – ভুপেন হাজারিকার বিখ্যাত গানের এই কথায় দ্বিমত করার মতো কিছু নেই৷ কেননা, মানুষের জীবনের সার্থকতার সারকথাটিই প্রশ্ন আকারে এখানে উত্থাপিত৷
তবে যাদের কাছে নিজেদের স্বার্থই শেষ কথা, পরোপকার বা মানবকল্যাণ তাদের জন্য অর্থহীন হওয়াই দস্তুর৷ ‘অর্থই অনর্থের মূল’ কথাটির উদ্ভবও সম্ভবত তাদের কারণেই৷ দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন ক্ষমতার মসনদে আসীন ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মধ্যে কেবল দেশের জয়জয়কারের দুর্মর আকাঙ্ক্ষার ‘রণ-হুংকার’; তাই ‘দুর্বলদের’ দিকে হাত বাড়াতে তিনি নারাজ৷ শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কত শত কায়দায় শক্তিমত্তায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়, সেদিকেই তার নজর, যা তার ভাষায় ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’৷ গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই তাই সই করেন একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশে৷ এর জেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউএসএআইডির (ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট) পক্ষ থেকে পরিচালিত ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য দাতব্য কর্মসূচি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে৷
বলাই বাহুল্য, গরিব-দুঃখীদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার এই ‘দর্শন’ ট্রাম্পের বহুল উচ্চারিত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ তার ঘোষিত সরকারি ব্যয় হ্রাস, ফেডারেল সরকার পুনর্গঠন ও পররাষ্ট্রনীতির খোলনলচে বদলে নতুন করে গড়ে তোলার অংশ এটি৷
যদিও বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার কর্মসূচিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাজেটের মাত্র এক শতাংশ৷ তবু এটি ব্যাপক মাত্রায় কাটছাঁটে ট্রাম্প প্রশাসনের মরিয়া চেষ্টা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ‘কট্টর বামপন্থি উন্মাদেরা’ ইউএসএআইডি চালান৷ ‘ব্যাপক জালিয়াতি’ করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছিল৷ তার জবানিতে, ‘‘আমরা তাদের (কট্টর বামপন্থি উন্মাদদের) বের করে দিচ্ছি৷ এরপর আমরা সংস্থাটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব৷”
‘বাবু যত বলে, পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ৷’ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক আরেক কাঠি সরেস৷ তার চোখে ইউএসএআইডি ‘অপরাধী সংস্থা’৷ তার এতটা বেজার হওয়ার কারণ অবশ্য ভিন্ন৷ তার প্রতিনিধিদের নাকি ইউএসএআইডির সংরক্ষিত গোপন নথি দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি৷ এতেই বেজায় চটেন মাস্ক৷ পত্রপাঠ সংস্থার দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়৷ এ ঘটনার পর ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ বলে দাগিয়ে দিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মাস্ক লেখেন, ‘এটি (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে৷’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নিরাপত্তাসংক্রান্ত ছাড়পত্র না থাকায় ডিওজিইর কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে দেননি ইউএসএআইডির নিরাপত্তা, যদিও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত এলাকায় ডিওজিইর কর্মকর্তাদের প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে৷
ইউএসএআইডিকে অনেকাংশে সংকুচিত করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এই ঘটনা৷ অবশ্য আরেক কদম এগিয়ে এরই মধ্যে মাস্ক জানিয়ে দিয়েছেন, ইউএসএআইডি বন্ধের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সংস্থাটির ওয়েবসাইটও এখন বন্ধ৷ ইউএসএআইডির স্বাধীনতা খর্ব করতে একে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে৷ বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করা ইউএসএআইডির ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি মাস্ককে নজিরবিহীন ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারি ব্যয়ে কাঁচি চালানো, আমলাতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর উদ্দেশ্যেই ডিওজিই নামের বিভাগটি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গঠন করা হয়েছে৷ সরকারি কোনো বিভাগ নয় এটি৷ তবে এর খবরদারি আগামী দিনগুলোতে যে ‘মাত্রা’ ছাড়াবে, ইউএসএআইডির ঘটনায় তা কারো বুঝতে বাকি নেই৷
২.
ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কর্মসূচিতে ব্যাপক স্থগিতাদেশ মানবিক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে মারাত্মক সংকটে ফেলেছে৷ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ছোট সাহায্য সংস্থাগুলো, তহবিল সংকটে যাদের টিকে থাকার সামর্থ্য কম৷ ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ছড়িয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক, কারণ ছোট-বড় সব ধরনের সাহায্য সংস্থাই বলছে, তারা তাদের কার্যক্রম আজ না হোক কাল বন্ধ বা সংকুচিত করতে বাধ্য হতে পারে৷ এতে উপকারভোগীরা যেমন বঞ্চিত হবেন, কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় বেকার হবেন বহু মানুষ৷ শরণার্থীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান জেরেমি কোনিন্ডাইক ওয়াশিংটন পোস্টকে খোলামেলাভাবেই তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘যদি আমরা আরও কয়েক মাস এই ধরনের পরিস্থিতি দেখি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সহায়তা খাত ভেঙে পড়বে৷”
ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬১ সালে, সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি৷ সংস্থাটির বয়স প্রায় ৬৪ বছর৷ বর্তমানে এর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার৷ যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৬৮ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ইউএসএআইডির জন্য বরাদ্দ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার৷ এত দিন মনে করা হতো, বৈদেশিক সহায়তা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য লাভজনক এবং অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করে৷ কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের অনেকেরই মত হলো, বেশিরভাগ বৈদেশিক সহায়তা দেশীয় খাতে ব্যয় করা বা সঞ্চয় করা উচিত৷
এর বিপরীত ভাষ্যও কম যুক্তিযুক্ত নয়৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটসহ পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ইউএসএআইডি বন্ধের পরিকল্পনা অবৈধ এবং এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমিয়ে দেবে৷ আর এই শূন্যস্থান পূরণ করতে সচেষ্ট হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন৷ সিনেটের বিরোধী দলীয় নেতা চাক শুমারের মতে, ইউএসএআইডিকে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে বাদ দেওয়ার পদক্ষেপ হবে অবৈধ ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি৷ মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেনের ভাষায়, ‘‘এটি (সিদ্ধান্ত) শুধু আমাদের শত্রুদের জন্য উপহারই নয়… এটি পুরোপুরি অবৈধ৷”
কারো কারো ভাষ্যমতে, ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের পেছনে মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে৷ কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস মারফির বক্তব্য, ‘‘চীনের সঙ্গে শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করেন মাস্ক৷ আর আজকের এই পদক্ষেপের (সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত) পর চীন উল্লাস করছে৷” ইরানসহ যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, ইউএসএআইডি অতীতে তাদেরও নানা উন্নয়নকাজে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে৷ এখন যদি এর কার্যক্রম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে এ ধরনের সুবিধাগুলো নষ্ট হবে৷ লাইবেরিয়ার সাবেক মন্ত্রী গাইড মুরের বক্তব্য হলো, ‘‘এই হঠাৎ সহায়তা বন্ধ করা শুধু মানুষের জীবন ধ্বংস করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থানকেও দুর্বল করবে৷” তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকা ক্ষুধার্ত শিশুদের খাওয়ানো, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বা কৃষকদের সহায়তা বন্ধ করে শুধু নিজের স্বার্থকেই ক্ষতি করছে না, বরং চীনকে আফ্রিকায় আরও প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে৷”
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি শক্তিশালী করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ‘কোয়াড’ তার পক্ষে অন্যতম উদাহরণ৷ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত নিয়ে এ কৌশলগত জোট গঠিত৷ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ) নামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নতুন আরেকটি অর্থনৈতিক জোটও রয়েছে৷ ২০২৪ সালে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রশাসন ১৫ মিলিয়ন মার্কিন প্রশাসন ডলারের বেশি নতুন সহায়তা ঘোষণা করেছিল৷
৩.
বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ৷ যদিও আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে৷ সহায়তার আওতায় থাকা প্রকল্পগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা এ সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা হবে৷ এ কারণে কেউ কেউ আশাবাদ জিইয়ে রাখছেন পুনরায় সাহায্য-সহায়তার প্রকল্পগুলোর সচল হওয়ার৷ তাদের একজন ইন্টারঅ্যাকশনের প্রধান টম হার্ট৷ তার কথায়, তিনি নিশ্চিত, ৯০ দিনের পর্যালোচনার শেষে প্রশাসন বুঝতে পারবে যে বেশিরভাগ সাহায্য কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর৷ তবে তিনি সতর্ক করে এও বলেছেন, ‘‘৯০ দিন পরে যদি সাহায্য সংস্থাগুলোই না টিকে থাকে, তাহলে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না৷”
তবে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক গুমিসাই বোনজো আশাবাদী হতে পারছেন না৷ এইডস নির্ণয়, চিকিৎসা ও ভাইরাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্য অর্জন করেছে জিম্বাবুয়ে, যা মূলত সম্ভব হয়েছে PEPFAR (দ্য ইউএস প্রেসিডেন্ট’স ইমারজেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ বা মার্কিন প্রেসিডেন্টের জরুরি এইডস সহায়তা পরিকল্পনা) কর্মসূচির কারণে৷ বোনজো বলেন, ‘‘আমি ২৩ বছর ধরে এইচআইভি চিকিৎসা নিচ্ছি, যা পেপফার সহায়তার কারণে সাশ্রয়ী মূল্যে সম্ভব হয়েছে৷ হঠাৎ করে যদি আমাদের থামতে হয়, এটি অনেক মানুষের জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো হবে৷”
৪.
মার্কিন সহায়তা স্থগিতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে৷ এরই মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে৷ কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মীদের হোম অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে৷ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের চাকরিচ্যুতির চিঠি পাঠিয়েছে৷ একই রকম বিশৃঙ্খল ও দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য দেশেও৷ মার্কিন সরকারের বৈদেশিক সহায়তাসংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেওয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়নের কাছাকাছি৷ এর আগের বছরগুলোতে আড়াই শ থেকে তিন শ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সবশেষ ২০২৪ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন ডলার৷ ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, সহায়তার অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা৷ এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার বরাদ্দ ছিল এতে৷ অবশ্য বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা কার্যক্রম স্থগিতাদেশের বাইরে বলা হচ্ছে৷ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, সাত বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে৷ সরকার আশা করছে, এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে৷
৫.
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এখন থেকে ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেব দায়িত্ব পালন করবেন৷ তিনি জানিয়েছেন, সংস্থাটির অনেক কার্যক্রম চালু থাকবে৷ তবে সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে৷ যদিও এই পরিবর্তন বাস্তবায়নে প্রশাসন কী পরিকল্পনা করছে, তা স্পষ্ট নয়৷ বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থা, অলাভজনক সংস্থা ও দাতা গোষ্ঠীগুলোকে সহয়তা দিয়ে থাকে ইউএসএআইডি৷ সংস্থাটির ওয়েবসাইট বন্ধ থাকায় সেসব তথ্যে প্রবেশ করা যাচ্ছে না৷ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্ভিক্ষের তথ্য এবং দশকের পর দশক ধরে দেওয়া সহায়তার তথ্যউপাত্তও উধাও হয়ে গেছে৷
তবে লক্ষ্যণীয় হলো, ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার বেশির ভাগ অংশ স্থগিতের আওতার বাইরে রয়েছে৷ একইভাবে ইসরায়েলকে দেওয়া সব ধরনের সাহায্য অব্যাহত থাকবে৷ মিসরও আছে এ তালিকায়৷ ট্রাম্প ক্ষমতারোহনের পরপরই গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এখন ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার দখল নেওয়ার কথা বলছেন৷ পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ব্যাপারেও সরব হয়েছেন তিনি৷ গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ব্যাপারেও তিনি সমান আগ্রহী৷ মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন৷ দেশ দুটিও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়৷ এ অবস্থায় এক কদম পিছিয়ে এক মাসের জন্য শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত করেছেন ট্রাম্প৷ চীনের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন৷ চীনও একই পথে হাঁটেন৷ ফলে এ ক্ষেত্রেও সুর নরম করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ চীনের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে৷ অন্যদিকে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ‘নিষ্ঠুরতম’ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন ট্রাম্প; প্রয়োজনে তাদের গোয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানোর কথা বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি৷
সুতরাং উপসংহার দাঁড়ায় এরকম: অন্যেরা মরছে মরুক, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের তথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কী! আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যারাই কম-বেশি ‘হুমকি’ বা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের ওপর ‘খড়্গহস্ত’ হও৷ এভাবেই কি আমেরিকাকে আবারও ‘গ্রেট’ করতে চান ট্রাম্প? সম্পর্ককে দূরে ঠেলে, ন্যায্যতাকে অস্বীকার করে, মানবতাকে মান্যতা না দিয়ে, অন্যের জন্য দরজা করে কিছু না কিছু নিশ্চয়ই হাসিল করা সম্ভব; কিন্তু তা টেকসই কিছু হবে না৷ চলতে হয় সবাইকে নিয়ে৷ নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া বোকামি অবশ্যই, কিন্তু অন্যের স্বার্থের সুরক্ষা দেওয়াও কর্তব্য৷ সভ্যতার অগ্রযাত্রা এখান থেকেই৷ ইতিহাসের শিক্ষা কিছু মানুষ কখনোই নেন না, কিন্তু সুযোগ পেলেই অন্যদের নিতে বলেন৷ ট্রাম্প সম্ভবত এই দলভুক্ত৷ -হাসান ইমাম,বাংলাদেশি সাংবাদিক৷ জার্মান বেতার ডয়চে ভেলের সৌজন্যে