সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ আমলে নিরাপত্তা উপদেষ্টার মাধ্যমে চারটি শক্তিশালী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীগুলো সরাসরি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র বদলে দেয়। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সংস্কৃতির একটানা পরিবর্তন হয়েছে। কখনো ধীরে ধীরে, কখনো ঝড়ের বেগে এই পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর চরিত্রও রূপান্তরিত হয়েছে। এক সরকারের আমলে যে প্রথা চালু হয়েছে, পরবর্তী সরকার তা আরো বাড়িয়েছে বা বিকৃত করেছে। এর ফলাফল হলো আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি জটিল বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, গোষ্ঠীভিত্তিক, কখনো কখনো ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত, এবং রাষ্ট্রক্ষমতার গভীরে প্রবিষ্ট। তবে এই রূপান্তর কোনো একক মুহূর্তের ফসল নয়; এটি পাঁচ দশক ধরে গড়ে ওঠা এক ধারাবাহিক অভিযাত্রা।রসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সংস্কৃতির ক্রম : রূপান্তর; পর্ব-১১ (অন্তিম) শিরোনামে তিনি এই পোস্ট দেন। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার শাসনামলে অনেক প্রবণতা, যেগুলোর বীজ আগে থেকেই প্রোথিত ছিল, তা কলেবর বৃদ্ধি করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। ১৯৯৬–২০০১ সময়কালের ভুল পুনরাবৃত্তি এড়াতে শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তিনি আওয়ামী লীগকে দেশের একমাত্র ক্ষমতাসীন শক্তি বানানোর উদ্যোগ নেন। নিম্নের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়:
১। যুদ্ধাপরাধের বিচার। ৭১’র চার দশক পর জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দেয়া হয়। ফলে দলটি কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। বিচারের সময় বিএনপির নীরবতা জামাতকে আহত করে এবং তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
২। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা এনেছিল, সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করেন। মনে করিয়ে দেন ২০০৬ সালে বিএনপির প্রেসিডেন্ট ও বিচারপতির বয়স-সম্পর্কিত গ্যাম্বিটের কথা।
৩। সংবিধানে সংশোধনী। সংবিধানে একটি নতুন ধারা সংযোজন করে সংবিধান লঙ্ঘন করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করেন— এটি ছিল সেনাবাহিনীর প্রতি জিয়া, এরশাদ, নাসিম বা মঈন ধাঁচের হস্তক্ষেপ না করার জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা।
৪। নেতৃত্ব পুনর্গঠন। যেসব অফিসার বেশি মেধাবী বা স্বাধীনচেতা, তাদের ‘বিএনপি বা জামায়াতপন্থী’বলে চিহ্নিত করে সরিয়ে দেন। তাদের জায়গায় অতীতের সম্পর্ক, আত্মীয়তার যোগসূত্র বা প্রমাণিত আনুগত্যের ভিত্তিতে আরও অনুগত ও অযোগ্য অফিসারদের বসান। ২০০৯ সাল থেকেই ক্লিন হার্ট এবং জরুরি শাসনে সিদ্ধ একদল নিরেট অনুগত অফিসার শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ‘ডিপ স্টেট’ নির্মাণ-
এক সময় মেজর ইস্কান্দার এবং ডিউক যেভাবে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করতেন, সেটিকেই এখন প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়। শেখ হাসিনা মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকী (শেখ রেহানার দেবর)–কে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দেন। তিনি দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধানের মাঝে ঢুকে পড়েন এবং পিএসও এএফডি এর মাধ্যমে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদোন্নতি ও কেনাকাটার ফাইল তার কাছে অনুমোদনের জন্য যেতে বাধ্য করেন। সেগুলোর উপর তিনি মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত দিতে থাকেন কিন্তু ভবিষ্যতের তদন্ত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কোনো লিখিত সাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। তিনি শত শত কোটি টাকার সামরিক কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু নথিপত্রে তার কোন চিহ্ন থাকে না। অফিসাররা দ্রুত বুঝে যান প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্র কোথায়। ফলে, নিজেদের চীফকে পাশ কাটিয়ে উপদেষ্টার কাছে তদবির শুরু করেন । রাজনীতিবিদরাও সামরিক-সম্পৃক্ত সুবিধার জন্য নিরাপত্তা উপদেষ্টার চারপাশে ভিড় জমাতে থাকে্ন। এতে সেনা সদর দফতরগুলোতে তদবিরের চাপ বাড়ে।
তারেক আহমেদ সিদ্দিকী ধীরে ধীরে DGFI, NSI, AFD, BGB, Ansar, NTMC, DGDP এবং RAB-এর ওপর নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করেন। যেখানে বাধা পান, সেখান থেকে পূর্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেন এবং নিজস্ব অনুগত অফিসার বসান। তার নির্দেশনায় ডিজিএফআই, এনএসআই এবং র্যাব— গুম, খুন, অপহরণ, জমি দখল, ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঁদাবাজি, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়। ‘আয়না ঘর’ নামে একটি গোপন নির্যাতন সেল চালু হয়, যেখানে বন্দিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বর্বর নির্যাতন চালানোর সংস্কৃতি গড়ে উঠে। র্যাবের সহায়তায় তিনি ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার প্লান্ট দ্বন্দ্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সুবিধা আদায় করেন এবং গাবতলী এলাকায় জমি দখল করেন। এর পাশাপাশি RAW এজেন্টরা তার ছত্রছায়ায় প্রায় প্রতিদিন ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে যাতায়াত শুরু করে। তারা সম্ভাব্য জঙ্গি বা বিপদজনক লক্ষ্যবস্তুদের তালিকা ডিজিএফআইকে সরবরাহ করে এবং দ্রুত অপারেশন চালানোর জন্য চাপ দেয়। ফলে এর আড়ালে প্রচুর নিরীহ নাগরিক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গুম বা হত্যা হয়।
এছাড়াও, নিরাপত্তা উপদেষ্টা NTMC (জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র), যেটা আগে ডিজিএফআই এর অধীনে ছিল, সেটাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরিয়ে আনেন, কিন্তু কার্যত নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রাখেন। সেনাবাহিনী প্রকিউরমেন্ট চেইনে PSO AFD এবং DG DGDP-কে নিজের সহযোগী বানিয়ে বড় বড় চুক্তি সম্পন্ন করান।
চারটি পৃথক নেক্সাসের উত্থান-
নিরাপত্তা উপদেষ্টার মাধ্যমে চারটি শক্তিশালী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, যেগুলো সরাসরি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র বদলে দেয়।
১। অপরাধ নেক্সাস। নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং RAW যৌথভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করত। এরপর র্যাব ও পুলিশ সেই টার্গেটদের গুম অথবা বিচারবহির্ভূত হত্যা (এনকাউন্টার) করত।
২। প্রকিউরমেন্ট নেক্সাস। নিরাপত্তা উপদেষ্টা, কিছু বাহিনী প্রধান, PSO AFD এবং DG DGDP মিলে ঠিক করতেন কোন কোম্পানি বা ব্যক্তিকে সামরিক সরঞ্জাম কেনাকাটার বিশাল চুক্তি দেয়া হবে। এখানেই মোটা অঙ্কের লেনদেন হতো, যার সুবিধাভোগী ছিল নির্দিষ্ট গোষ্ঠী।
৩। ডি-ফ্যাক্টো কমান্ড নেক্সাস (Deep State): নিরাপত্তা উপদেষ্টা, MSPM, DG SSF, DG DGFI, এবং DG NSI মিলে তৈরি হয় একটি ছায়া প্রশাসন যারা প্রকৃত নীতিনির্ধারণ, পোস্টিং, প্রমোশন এবং মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। বাহিনী প্রধানদের ক্ষমতা কার্যত সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
৪। মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্স। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স’-এর আদলে বাংলাদেশে তৈরি হয় একটি সামরিক প্রকৌশল গোষ্ঠী। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সিনিয়র অফিসার, সেনা কল্যাণ সংস্থা (SKS), বিএমটিএফ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ঠিকাদারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি অশুভ আঁতাত। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রধান (E-in-C) তিন বাহিনীর যাবতীয় নির্মাণ প্রকল্প থেকে কমিশন নিতেন এবং এর একটি বিশাল অংশ নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে দিতেন অথবা নিরাপত্তা উপদেষ্টা মনোনীত ঠিকাদারকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দিতেন। BMTF-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (MD) নিরাপত্তা উপদেষ্টার পছন্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেন যেমন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (EVM) বা গাড়ির ডিজিটাল রিফ্লেকটিভ নম্বর প্লেট প্রস্তুতকরন । ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের অফিসাররা ডেপুটেশনে গিয়ে সিভিল মেগা-প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতে থাকেন—যেমন মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট, ই-পাসপোর্ট, স্মার্ট আইডি কার্ড, পদ্মা সেতু, হাতিরঝিল প্রকল্প, উড়ালসেতু, জাতীয় মহাসড়ক এবং ভবিষ্যতের টিউব রেলওয়ে প্রকল্প। শুধু প্রকল্পই নয়, ইঞ্জিনিয়ার অফিসাররা সচিবালয়ে ঘনঘন যাতায়াত শুরু করেন ঠিকাদারদের প্রকল্প এগিয়ে নিতে, যেখানে বড় অঙ্কের ঘুষ এবং কমিশন ছিল তাদের প্রধান প্রেরণা।
অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কমিউনিটির ভাঙন : এরমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের মধ্যেও প্রো-বিএনপি এবং প্রো-আওয়ামী লীগ ঘরানার লেজুড় দল তৈরি হয়ে চরম বিভাজন তৈরি করে। নির্বাচনের আগে আগে কিছু গ্রুপ একত্রে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়; কিছু বিএনপিতে। উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বা আর্থিক সুবিধা লাভ। RAOWA (রিটায়ার্ড আর্মড অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন), এক সময়ের নিরপেক্ষ কল্যাণ সংগঠন, দ্রুতই আওয়ামী লীগপন্থী হয়ে ওঠে। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর রাওয়াতে যে বিস্ফোরণ হয় তাতে আওয়ামী লীগ শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে জেনারেল আজিজ RAOWA’র নির্বাচিত সভাপতিকে সরিয়ে নিজের পছন্দের লোক বসিয়ে দেন। এরপর RAOWA’র মঞ্চ ব্যবহার করে সরকারের পক্ষে বক্তব্য প্রচার শুরু হয়। একসময়ের গর্বের ‘RAOWA রিভিউ,’ যা আগে সিরিয়াস সামরিক আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ছিল, এখন ইউটিউবার, সাংবাদিক আর ব্লগারদের ভরা এক পক্ষপাতদুষ্ট সভায় পরিণত হয়। RAOWA-র অভ্যন্তরে জুনিয়ররা সিনিয়রদের প্রকাশ্যে অসম্মান করতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষাক্ত গ্রুপ ইমেইল, গুজব এবং চরিত্রহনন রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ইউটিউব-ভিত্তিক বিভ্রান্তিকর ভিডিও তৈরির একটা ‘কটেজ ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে ওঠে। কেউ কেউ পুরনো ক্ষোভ মেটাতে, আবার কেউ কেউ আখের গোছাতে সেনা প্রতিষ্ঠান বা সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকেন। ফলে, অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কমিউনিটি বিভক্ত এবং উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আগামী দিনের সম্ভাবনা : ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংস্কৃতির একটানা পরিবর্তন হয়েছে—কখনো ধীরে ধীরে, কখনো ঝড়ের বেগে। প্রতিটি রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর চরিত্রও রূপান্তরিত হয়েছে। এক সরকারের আমলে যে প্রথা চালু হয়েছে, পরবর্তী সরকার তা আরও বাড়িয়েছে বা বিকৃত করেছে। এর ফলাফল হলো আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি জটিল বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি — রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, গোষ্ঠীভিত্তিক, কখনো কখনো ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত, এবং রাষ্ট্রক্ষমতার গভীরে প্রবিষ্ট। তবে এই রূপান্তর কোনো একক মুহূর্তের ফসল নয়; এটি পাঁচ দশক ধরে গড়ে ওঠা এক ধারাবাহিক অভিযাত্রা।
এ বিশ্লেষণ আমার ২০১৫ সালের অবসর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এরপর কতটা পরিবর্তন এসেছে, তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের দুটি ঘটনা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে : প্রথম, একটি পিকআপভ্যান ভর্তি সৈন্য দল শাসকদলের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত বিরোধী কর্মীদের আর্তি উপেক্ষা করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। দ্বিতীয়, বিভিন্ন ইউনিট এবং ব্যক্তিরা ভোট জালিয়াতিতে সরকারকে সহায়তার পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, আইপ্যাড, ল্যাপটপের মতো উপহার গ্রহন করে । এই দুটি ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়, নৈতিক অবক্ষয় আরও গভীর হয়েছে। মনে হয়, আজকের সেনা নেতৃত্ব, ব্যক্তিগত সুবিধা আর আরাম-আয়েশের জন্য পেশাদারিত্ব বিসর্জন দিয়েছেন; অধিকাংশ অফিসার ব্যক্তিগত উন্নতির পেছনে ছুটছে; কর্তব্যবোধের চেয়ে আত্মস্বার্থের টান প্রবল হয়ে উঠেছে; আর সাধারণ সৈনিকরা কেবল নিয়ম মেনে চলার ভান করছে, অন্তরে জমে আছে বঞ্চনার ক্ষোভ।
তবুও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ‘লাস্ট আওয়ার রেভোলিউশন’—যেখানে বেশিরভাগ জুনিয়র অফিসার নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করেছিল—আশার এক নতুন রেখা দেখায়। এ দৃশ্যপটের মধ্যে যখন Baby Boomers এবং Generation X ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার সনমুখিন, তখন Millennials (Gen Y) এবং Gen Z এর সামনে এক নতুন সেনাবাহিনী গঠনের পথ উন্মুক্ত। সম্ভাবনা আছে, তারা হয়তো সেনাবাহিনীকে আবারও সত্যিকারের পেশাদারিত্ব এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার পথে ফিরিয়ে আনতে পারবে। – সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷