বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গত দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে চীন। এর একটি অংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশটি থেকে নেয়া ঋণের টাকায়। ঋণ ও ঠিকাদারি মিলিয়ে সে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। তবে বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পগুলো চালুর পর দেখা যাচ্ছে এর আয় দিয়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই উঠছে না। সুদসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বেরিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার সূত্র ও ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (এইআই) তথ্য অনুযায়ী, চীন ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর অধিকাংশই পেয়েছে গত ১৫ বছরে, অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলে। ঠিকাদারি এসব কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আবার পরিবহন খাতের, যার অর্থমূল্য ৮ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রেল সংযোগেরই কাজ। বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন হয় ১৯৭৫ সালে। আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ ও বাজেট সহায়তা হিসেবে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৮১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। শেখ হাসিনার আমলে চীনা ঋণে নেয়া অতিমূল্যায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ থেকেই তেমন সুফল পায়নি বাংলাদেশ। বরং ব্যয়ের বোঝা বেড়েছে। সম্প্রতি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সফরে তিনি ঋণের সুদহার কমানো এবং সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
বিশ্লেষকদের দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া উচ্চব্যয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান না হলেও বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশ ছিল চীন। ছোট-বড় নানা প্রকল্পের জন্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। দেশটির অর্থায়নে হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, নির্মাণ হয়েছে চট্টগ্রাম টানেলের বৃহৎ প্রকল্প। এমনকি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতুও নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি। বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও অতিমূল্যায়িত ওই প্রকল্পগুলোর সুবিধা নেয়ার সুযোগ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে বাংলাদেশ। যদিও ওই প্রকল্পগুলোসহ বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি কাজ প্রাপ্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে চীন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘চীন যে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট দিয়েছে তা নিয়ে দুর্নীতি করতে পেরেছে সাবেক শাসকগোষ্ঠীর কর্তাব্যক্তিরা। সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের দুর্বলতা হলো যারা ঋণ নেয় তাদের দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণটা দাতাদের হাতে থাকে না। সেটারই সুবিধা নিয়েছে সাবেক সরকার। এদিকটি বিবেচনায় চীন সুবিধা পেয়েছে। কেননা এক্ষেত্রে তেমন কোনো শর্ত থাকে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাবেক সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে অনেক বেশি লুটপাট করেছে।’ চীনের ঋণে বাস্তবায়ন করা হয়েছে কর্ণফুলী টানেল। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ। চুক্তি অনুযায়ী তা পরিশোধে ১৫ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ। এ হিসাবে সুদ ব্যতীত বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে গড়ে ৪০৫ কোটি টাকা। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির হিসাব বলছে, চালুর পর এক বছরে (অক্টোবর ২০২৩ থেকে অক্টোবর ২০২৪) টানেল থেকে আয় হয়েছে কেবল ৩৭ কোটি টাকার মতো। বিপরীতে টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বছরে ব্যয় হচ্ছে ১৩৬ কোটি টাকার বেশি। সে হিসাবে লাভের বদলে প্রকল্পটিতে গুনতে হচ্ছে বিপুল অংকের লোকসান। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের আরেক প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। এটিও চীনের ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। ইআরডির তথ্য বলছে, ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পাচ্ছে ১৪ বছর। এ হিসাবে বার্ষিক গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। ঋণের সুদহার ২ শতাংশ। সার্ভিস চার্জ আরো দশমিক ২৫ শতাংশ। পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ দিয়ে আংশিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তিন আন্তঃনগর ট্রেন থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, গ্রেস পিরিয়ড শেষ করে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে এ প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। আয় দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এ ঋণ পরিশোধেও ভর্তুকি দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব প্রকল্প নেয়ার সময় জাতীয় প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়কেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যথাযথভাবে প্রকল্প মূল্যায়ন করা হয়নি। বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটের উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নেয়া এসব প্রকল্প এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রগুলো পারস্পরিক সুবিধার জন্য হলেও বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সুশাসনের ঘাটতিতে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারেনি। আর নিজস্ব দক্ষতা ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চীন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে।আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ কী ধরনের প্রকল্প নিয়েছে সেগুলো বিবেচ্য বিষয়। এরপর বিবেচ্য হলো সেগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্যায়নের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে কিনা। প্রকল্পগুলো নেয়ার পর্যায়ে এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নকালে দুর্নীতি রোধ করা গেছে কিনা। এগুলোর কিছুই করা হয়নি। ফলে বড় ধরনের দুর্নীতির কারণে গ্রহণ করা প্রকল্প ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টিকে আপেক্ষিকভাবে দেখার বিষয় আছে। চীনসহ যেকোনো দাতার সঙ্গে আমরা যদি জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে দরকষাকষি করতে পারি, তাহলে অবশ্যই ঋণ বা অনুদানগুলো অনেকটাই আমাদের পক্ষে আনা সম্ভব। প্রকল্প স্বল্পমেয়াদি সুবিধা দিচ্ছে, না দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা দিচ্ছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে কিনা—এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। এ মুহূর্তে আমরা যদি চীন থেকে নতুন প্রকল্প নিতে চাই বা পুরনো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় বিবেচ্য বিষয়গুলোকে মাথায় রাখলে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাকে আরো প্রডাকটিভ এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক বা নিজেদের সুবিধা আদায় করে নেয়া সম্ভব হবে। এটা অবশ্যই সম্ভব কারণ চীন বা যেকোনো দাতা যখন সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে নির্ধারিত নীতিগুলো দেশভেদে ভিন্ন হয়। যারা শাসকগোষ্ঠী থাকে, তারা কী চায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তারা কি নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে না জাতীয় স্বার্থকে? এ ভাবনাগুলোর প্রতিফলন থাকলেই চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিকল্প নেই বর্তমানে। চীন বাদে অন্য উৎসগুলো ঋণদান সক্ষমতা অনেক কম। আমাদের নিজেদের দুর্বলতা, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, প্রতিশ্রুতির ঘাটতি এবং দুর্নীতির কারণে চীন আমাদের পেয়ে বসেছে।
কূটনীতিবিদরা বলছেন, চীনের সঙ্গে অনেক প্রকল্প এখনো চলমান। এগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য দেশটির সহযোগিতা চলমান থাকা দরকার। এটা পারস্পরিক প্রয়োজনের নিরিখেই দরকার। তবে বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলাদেশ যে লাভবান হতে পারেনি তার প্রথম কারণ হলো, প্রয়োজনটা বাংলাদেশের বেশি। উদাহরণস্বরূপ তারা বলছেন, বাংলাদেশের সেতু প্রয়োজন, এ সেতু থেকে সেবা পাওয়া যাবে ৫০ বছর। এটাকে তাৎক্ষণিক অর্থমূল্য দিয়ে তুলনা করা যাবে না, এটাকে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করার জন্য যে জায়গাগুলো প্রয়োজন, সেখানে চীনের সক্ষমতা যে জায়গায় সেগুলো দেশটির থেকে নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বিষয় আছে। চীনের দিক থেকে অর্থ ও প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোয় চীনারা সুবিধা পায়। আর বাংলাদেশের সুবিধা দীর্ঘমেয়াদি। পদ্মা ব্রিজ নিজেদের অর্থে হলেও কাজ করেছেন চীনা প্রকৌশলীরা। এখানে যদি বলা হয় যে চীনারা অনেক টাকা নিয়ে গেল, এ ধরনের একটা হিসাব আছে, কিন্তু আগামী ৫০ বছর ওই সেতুর বহুগুণীতক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য সহযোগিতা চাই, তাদের সক্ষমতা আছে বলেই চাই। এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই পারস্পরিক সুবিধা। চীনের সুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায়, আর আমাদেরটা দেখা যায় দীর্ঘমেয়াদে। কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্কই তৈরি হয় না বা টিকে থাকে না যদি পারস্পরিক সুবিধা না থাকে। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তিটাই হলো দেশটি আমাদের যা প্রয়োজন সেটা দিতে পারে। সে কারণেই আমরা নিই। আমাদের যা প্রয়োজন তা যদি ভারত দিতে পারে সেটা ভারতের থেকে নিই।’
এম হুমায়ুন কবির আরো বলেন, ‘আমাদের সুশাসনের সমস্যা রয়েছে। আমরা যে প্রকল্পগুলো নিই, সেগুলো মূল্যায়নের ক্ষেত্রে, ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে, দরকষাকষির ক্ষেত্রে সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। যা না থাকলে কখনই উভয়পক্ষ থেকেই উপাদেয় জিনিসটা পাওয়া যাবে না। যে প্রকল্প প্রয়োজন নেই সেটা নেয়া হলো, সেখানে চীন অর্থায়ন করল। চট্টগ্রামে টানেল প্রকল্প, এটা হয়তো আমরা রাজনৈতিক বিবেচনায় বা যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই নিয়েছি, এক্ষেত্রে চীনকে দোষ দেয়া যাবে না। আমি বলেছি আমার প্রয়োজন, চীন অর্থ দিয়েছে কারণ তারা ব্যবসা করতে চায়। তাদের মুনাফা দরকার। তারা দেখেছে এখানে বিনিয়োগ করলে আমার টাকা আসবে। আবার বাংলাদেশ সরকার যেহেতু গ্যারান্টর, কাজেই চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে তারা বিনিয়োগ করেছে। এখন আমরা ভুগছি। এখানে আমাদের সুশাসন, মূল্যায়ন, দরকষাকষির সক্ষমতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা—সবগুলো বিষয়ই সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা যে আছে তা নিশ্চিতভাবেই আছে, সেটা দৃশ্যমানও। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি প্রয়োজন। ২০ জানুয়ারি রাতে চীন সফরে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে ২৪ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরেছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে চীন আরো লাভবান হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত ভিসা কম দেয়ায় চিকিৎসায় বাংলাদেশীদের জন্য চীন বিকল্প দেশ হতে পারে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ভারতের বিকল্প হতে পারে চীনের কুনমিং। সেখানে চিকিৎসা ও যাতায়াতের খরচ তুলনামূলক কম। এ ক্ষেত্রে চীনকে ভিসা ফি কমানোর কথা বলা হয়েছে। যেহেতু ভারত ভিসা বন্ধ রেখেছে, সে ক্ষেত্রে কুনমিং বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশে একটি বড় হাসপাতাল করে দিতে রাজি হয়েছে চীন। সেটির স্থান নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা চলছে। আমরা বলেছি, আমাদের হাতে পূর্বাচলে সুন্দর জায়গা রয়েছে। সেখানে আমরা জায়গা দেয়ার কথা তাদের বলেছি।’ চীন সফরের ব্যাপারে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সবকিছু, সম্পূর্ণ রিলেশনের ব্যাপারেই কথা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বলুন, প্রকল্পসংক্রান্ত বলুন, সব বিষয়ে কথা হয়েছে। বর্তমান সরকারের অবস্থান নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে। এরপর সাংহাইয়ে ওদের চেম্বার্স অব কমার্সের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির একটি কারখানায় আমাদের নিয়ে গিয়েছিল।’
ঋণের সুদহার কমানো এবং সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এতটুকু বলতে পারি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে আমি বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখেছি তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। যেটা মনে করা হয় চীনের ঋণের সুদহার বেশি, অন্যদের কম। কিন্তু আমরা প্রমাণ অতটা করতে পারিনি। কারণ ৩ শতাংশের বেশি না তাদের ঋণের সুদহার।’ তিনি বলেন, ‘অনেকের, এমনকি আন্তর্জাতিক ডোনার এজেন্সি যেগুলো আছে, তাদেরও দেখা যায় যে প্রকৃত ঋণের সুদহার চীনের চেয়ে বেশি। চার, সাড়ে চার, পাঁচ পর্যন্তও হয়ে যায়। তারপরও তারা (চীন) আশ্বাস দিয়েছে, তারা এটা দেখবে। যদি সম্ভব হয় কমানোর, তারা কিছুটা কমানোর চেষ্টা করবে।’- বণিকবার্তা