১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লোভনীয় সব ফলই সর্বদা খাওয়া চলে না ডায়াবেটিকদের, বদলে কোন ফল খাবেন?

উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের ফল খাওয়া বারণ? বদলে কোন ফল নিশ্চিন্তে নিয়মিত খেতে পারেন ডায়াবেটিকেরা?

পাকা আম থেকে মিষ্টি সবেদা। দেখে খেতে ইচ্ছা করলেও, সব সময় খেতে পারেন না ডায়াবেটিকেরা। এই ফলগুলি যে খাওয়া যায় না, তা নয়। কিন্তু খেতে গেলে ক্যালোরির হিসাব কষা দরকার, বলেন পুষ্টিবিদেরা।

সাধারণত, ডায়াবেটিকদের এমন খাবার খেতে বলা হয়, যেগুলির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। অর্থাৎ যে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না। কিন্তু আম থেকে আঙুর, আনারসের মতো ফলের পুষ্টিগুণ থাকলেও, সেগুলিতে শর্করার মাত্রাও যথেষ্ট। গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও নেহাত কম নয়। এই ফলগুলি নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়, বিশেষত ভরপেট খাওয়া পরে। সুমিষ্ট রসালো ফল বাদ গেলে, ডায়াবেটিকেরা আর কোন ফল খাবেন নিয়মিত?

পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘ডায়াবেটিকেরাও আম খেতে পারেন। স্ন্যাক হিসেবে আম আমরা খেতেই বলি। তবে তারও মাত্রা থাকা দরকার।’’ অন্য পুষ্টিবিদেরাও বলেন, যে কোনও রসালো ফল ডায়াবেটিকেরা খেলেও, খাওয়া দরকার মেপেজুপে। সাধারণত কোনও খাবারের সঙ্গে ভাত-রুটি খাওয়ার পরেই রসালো ফল খেতে বারণ করা হয়। এতে ক্যালোরির মাত্রা বেড়ে যায়। তবে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, দু’টি খাবার খাওয়ার মাঝের সময়টিতে তা খাওয়া যেতে পারে। কারণ, ক্যালোরির হিসাব এ ক্ষেত্রে জরুরি এবং খেতেও হয় পরিমিত।

প্রশ্ন আসে, তা হলে রসালো ফলের বদলে ডায়াবেটিকেরা আর কোন ফল খাবেন?

আমের বদলে বেরি: ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর আমে গ্লুকোজ় এবং ফ্রুক্টোজ় রয়েছে। যা আসলে শর্করা। একটি মাঝারি আকারের আমে ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা মেলে। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫১-৬০ অর্থাৎ মধ্যম থেকে উচ্চ মাত্রার। ফাইবার থাকলেও, গোটা বড় আম ডায়াবেটিকরা খেয়ে ফেললে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। কয়েক টুকরো খাওয়ায় আপত্তি না থাকলেও, একটি মাঝারি আম খেলে অন্য খাবার খাওয়া কমাতে হবে, বলছেন পুষ্টিবিদেরা। বদলে যে কোনও বেরি জাতীয় ফল নির্দ্বিধায় পাতে রাখা যায়। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আমলকি— এমন ধরনের ফল খেতে পারেন ডায়াবেটিকেরা। এই ফলগুলির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অথচ পুষ্টিগুণ যথেষ্ট।

পাকা কলার বদলে পেয়ারা: পাকা কলাতেও ডায়াবেটিকদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যদি নিয়ম জেনে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। তবে কলার বদলে পেয়ারা ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য ভাল। ফাইবার সম্পন্ন ফলটি ভিটামিন সি এবং নানা রকম খনিজে পূর্ণ। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় মাত্র ৫ গ্রাম শর্করা মেলে। তা ছাড়া, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও বেশ কম।

সবেদার বদলে আপেল: রসালো মিষ্টি সবেদা খেতে ভাল হলেও, একটি ফলেই শর্করার মাত্রা থাকে অনেক। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৫-৭০। বিশেষত রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকলে, এই ফল এড়িয়ে চলা দরকার। ভাত-রুটি খাওয়ার পরে তা খাওয়া অনুচিত। বদলে নির্দ্বিধায় খেতে পারেন আপেল। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যেমন কম, তেমনই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ডায়াবিটিসের চিকিৎসকেরা বলেন, ডায়াবেটিকদের খাবারে ফাইবার থাকা খুব জরুরি। কারণ, সেটি ছাঁকনির কাজ করে। চট করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।

আঙুরের বদলে বেদানা: রসালো ফল আঙুরও ইচ্ছা মতো খেতে পারেন না ডায়াবেটিকেরা। ১০০ গ্রাম আঙুরে ১৬-২০ গ্রাম পর্যন্ত শর্করা মেলে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬০-এর কাছাকাছি। বদলে বেদানা খাওয়া যেতে পারে। এতে শর্করার মাত্রা কম, গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। এতে মেলে পলিফে্নল্‌স-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহের কারণেও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

আনারসের বদলে পেঁপে: আনারসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৬-৯৪। ফলে আনারস কয়েক টুকরো খেলেই রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত হারে বাড়তে পারে। বদলে খাওয়া যেতে পারে পাকা পেঁপে। ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ফাইবারে পূর্ণ ফলটি খেতে পারেন ডায়াবেটিকেরা।