নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে তাদের মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ইতোমধ্যে বজায় থাকা ২৫% শতাংশ শুিল্কের উপর আরো ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হলো। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সাথে বিশ্বের যেসকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানী পণ্যের উপর যে পরিমাল শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রও সেসব দেশের পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে আমদানীর সময় সমপরিমাল শুল্ক আরোপ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কিছু পণ্য আমদানির ওপরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্রিকস অর্থনৈতিক জোটের সদস্যরা যদি ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করে তবে তাদের ওপর ১০০ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান নিয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটি নয়া যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠী মনে করে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে ‘উন্মুক্ত দ্বার নীতি’ ও বাণিজ্যিক শুল্ক হ্রাস নীতি চূড়ান্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে বিগত কয়েক দশকের নীতিতে পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের দেশ যখন শুল্ক আরোপ করেছিল তখন ধনী ছিল।’ তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ের কথা উল্লেখ করছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিল। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অন্যভাবে বলা যায়, আমেরিকানরা প্রতিবছর রপ্তানির চেয়ে ৫০ হাজার কোটি ডলার বেশি আমদানি করে। বছরের পর বছর ধরে চলমান এই পরিস্থিতি মার্কিন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে সহনীয় নয়, যেকোনো উপায়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? এই পরিবর্তন আনার হাতিয়ার হলো আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা। তাদের যুক্তি হলো, আমদানীকৃত পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিও হ্রাস পাবে। এখন বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেওয়া কিংবা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার ফলে, যুক্তরাষ্ট্র একটি রপ্তানিকারক দেশ থেকে একটি প্রধান আমদানিকারক দেশে পরিনত হয়েছে। তারা আশাবাদী, এ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের শ্রমিকদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যাবে।

তবে চীন, অথবা ইইউ সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপরও একই রকম শুল্ক আরোপের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে ট্রাম্প যে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছেন তা শুধু আমদানীকৃত পণ্যের দামই যে বাড়বে তা নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উভয় দিক থেকেই আমেরিকানদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। জনগণের ওপর এই চাপ সৃষ্টির কথা ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন।

কিন্তু ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বাণিজ্যযুদ্ধে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কিংবা আরো তীব্র করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এ বিষয়গুলোর কোনোটিই ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে মনে হচ্ছে না। তাদের দৃষ্টিতে, বিশেষ করে কানাডা, মেক্সিকো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এতটাই শক্তিশালী ও বিশাল যে বাণিজ্যযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শেষ পর্যন্ত ওই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে নেবে। বেইজিংয়ের ওপরও রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা চাপ তীব্র হবে। – সংবাদ সুত্র ওয়াশিংটন টাইমস

শেয়ার করুন