৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম রেকর্ড বেড়েছে, কারণ কী

যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দামে রেকর্ড হয়েছে। সাধারণত বারবিকিউ মৌসুম উপলক্ষে বছরের এ সময় দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তবে চলতি বছর রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দামে এমন ঊর্ধ্বগতি থেকে ক্রেতারা খুব শিগগির রেহাই পাচ্ছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এক পাউন্ড (প্রায় আধা কেজি) গরুর মাংসের কিমার গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৬ ডলার ১২ সেন্টে। বছরের ব্যবধানে এ দাম প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে সব ধরনের রান্না না করা মাংসের বড় টুকরার (বিফ স্টেক) গড় দাম বেড়ে হয়েছে পাউন্ডপ্রতি ১১ ডলার ৪৯ সেন্ট। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ।

তবে এ মূল্যবৃদ্ধি নতুন নয়। ২০ বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কারণ, মাংসের চাহিদা বেশি থাকলেও গরুর সরবরাহ কমতির দিকে।

এমনকি কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। দেশটির কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৬৭ লাখ। এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ কম ও ১৯৫১ সালের পর সর্বনিম্ন।

খরা, গরুর মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে গবাদিপশুর সংখ্যা কমে গেছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মেক্সিকোতে একটি পরজীবীর বিস্তার ও ব্যাপক শুল্ক আরোপের আশঙ্কা। আর এসব কারণে গরুর মাংসের সরবরাহ আরও কমতে ও দাম আরও বাড়তে পারে।

গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস : টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় আকৃতির গরু উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়লেও ২০২০ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ খরার কারণে পশু খাবারের দাম বেড়েছে। এর পর থেকে পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে খরা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই স্বল্প লাভে পরিচালিত খামারগুলো চাপে পড়ে যায়। ফলে অনেক খামারি তাঁদের প্রজননক্ষম গরু জবাই করে দেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে গরুর মাংসের জোগান বাড়লেও গরুর সংখ্যা কমে যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দাম আকাশচুম্বী। এখন একেকটি গরু বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার ডলারে। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, একেকটি গরু ১০০ পাউন্ড (প্রায় ৪৫ কেজি) ২৩০ ডলারের বেশি দাম ধরে বিক্রি হচ্ছে।

এমন বেশি দাম অনেক খামারিকে এখনই গরু বিক্রি করে বেশি মুনাফা তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রজননের উদ্দেশ্যে তাঁরা গরুগুলো না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন। টেক্সাস এঅ্যান্ডএমের ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, ভবিষ্যতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেকেই এখন গরু বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন।

রোগের ব্যাপকতা : মেক্সিকোর গবাদিপশুর পালে একটি মাংসাশী পরজীবীর আবির্ভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংস সরবরাহ আরও চাপে পড়েছে। এ ঝুঁকির কারণে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

অথচ যুক্তরাষ্ট্রে জবাই হওয়া ৪ শতাংশ গরুই আসে মেক্সিকো থেকে। ওই পরজীবী টেক্সাসে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

শুল্কের আশঙ্কা : যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ৪০০ কোটি পাউন্ড গরুর মাংস আমদানি করে। এর বড় অংশ আসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে। এগুলোর ওপর এখনো ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

তবে ব্রাজিল থেকে আসা মাংসের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদে এ শুল্ক কার্যকর হলে মাংস প্রক্রিয়াজাতকারীদের খরচ বাড়বে।

দাম কমার সম্ভাবনা কম : এখন যুক্তরাষ্ট্রে বারবিকিউ মৌসুম চলছে। এ সময় গরুর মাংসের চাহিদা বরাবরের মতোই তুঙ্গে। কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির কৃষি অর্থনীতিবিদ গ্লিন টনসোর বলেছেন, এ চাহিদাই মূলত গরুর মাংসের দামকে ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সাহায্য করছে।

তবে দাম বাড়লেও ক্রেতাদের মধ্যে এখনো মুরগি বা শূকরের মাংসের মতো বিকল্প পণ্য কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। স্টেক হোক বা কিমা—ভোক্তারা এখনো গরুর মাংসই বেশি কিনছেন। টনসর বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় গরুর মাংসের দামও চড়া থাকবে।

অর্থনীতিবিদ বার্ন্ট নেলসন বলছেন, সম্প্রতি খরা কিছুটা কমেছে। ফলে চারণভূমির অবস্থা উন্নত হয়েছে। একই সঙ্গে শস্যের দাম কমছে। এ অনুকূল পরিস্থিতিতে খামারিরা হয়তো এখন গরু বিক্রি না করে প্রজননের দিকে মনোযোগ দেবেন। কিন্তু একটি নতুন গরু উৎপাদন করে বাজারে তুলতে অন্তত দুই বছর সময় লাগে। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে অনেক দেরি হবে।

মৌসুম শেষে সাধারণত গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর দাম কমতে পারে খুব সামান্যই। – সংবাদসুত্র এপি