গত ১৩ আগষ্ট সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলে ‘আমাদের ব্যাংক, আমাদের কমিউনিটি এবং আমাদের গর্ব’ স্লোগানে যুক্তরাষ্ট্রে সমবায়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ একটি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর প্রাক-অনুমতি পাবার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’ (বিএফসিইউ)।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, যা পরিচালনা করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খ্যাতিমান ইমাম জনাব জাফর বেগ। এরপর যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়, যা উপস্থিত সকল অতিথিদের মধ্যে এক বিশেষ আবেগ ও ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়।
এরপর অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা এবং ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’-এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মুহাম্মদ কাদের, সিআইপি বলেন, “আজকের এই মুহূর্তটি কেবল আমার জন্য নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও এক গর্বের দিন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বাস করলেও আমাদের নিজস্ব কোনো পূর্ণাঙ্গ ফেডারেল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। অনেক কমিউনিটি বহু আগেই নিজেদের জন্য ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। অবশেষে আজ আমরা সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই National Credit Union Administration (NCUA) থেকে নাম ক্লিয়ারেন্স এবং প্রি-অ্যাপ্রুভাল পেয়েছি। এটি কোনো সাধারণ অনুমোদন নয়, এটি একটি আইনানুগ, স্বীকৃত এবং ভবিষ্যতের জন্য সুসংহত আর্থিক ভিত্তি। এখন আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে প্রায় ৩০০ জন ফাউন্ডিং মেম্বার সংগ্রহ করা এবং সেইসাথে মূলধন সংগ্রহ সম্পন্ন করে পরবর্তী ধাপে যাওয়া। আমি সবাইকে এই ঐতিহাসিক যাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।”

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি জনাব আতাউর রহমান সেলিম, সহ-সভাপতি জনাব কামরুজ্জামান এবং আরও অনেক বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম প্রবাসীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন যে, তারা যেন নিয়ম অনুসরণ করে দাতা-সদস্য তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে এই ব্যাংকে সম্পৃক্ত হন।
সোনালী ব্যাংকের সহযোগী ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ’র সিইও মো. কবির বলেন, বছরে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০ মিলিয়নেরও অধিক ডলার বাংলাদেশে পাঠাচ্ছি অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে। বিএফসিইউ কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে শুরু করলে এর মাধ্যমে পাঠানো সম্ভব হবে অর্থাৎ প্রবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরাও অবদান রাখতে সক্ষম হবো।

উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাঙলাদেশীদের মধ্যেএমন একটি প্রত্যাশা বিরাজ করছিল ৫ দশকেরও অধিক সময় যাবত। মূল উদ্যোক্তা এবং ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’-এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মুহাম্মদ কাদের, সিআইপি আরো জানান, আমেরিকায় অনেক ছোট কম্যুনিটি হওয়া সত্বেও নেপালীরাও ব্যাংক স্থাপন করেছেন কয়েক বছর আগে। তিনি জানান, অনুমোদনের শর্ত হিসেবে ৬ মাসের মধ্যে তিন শতাধিক দাতা-সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। তারা এক হাজার ডলার করে প্রদানের অঙ্গিকারপত্র দেবেন। এই অর্থ ব্যাংকটির মূলধনে পরিণত হবে। কাদের সিআইপি আরো উল্লেখ করেন, আমরা যদি ৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করতে পারি তাহলে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ফেডারেল সরকার থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার পাবো। যার সুদের হার হচ্ছে দশমিক ৫ মাত্র। অর্থাৎ বিএফসিইউ’র মূলধনের জন্যে এককভাবে কারো ধার-দেনার প্রয়োজন নেই। এর মালিকানায় থাকবেন দাতা-সদস্যরা। এবং সেই সদস্যরাই ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন এবং ব্যক্তিগত/ব্যবসায়ী সকল কার্যাদি সম্পন্নে সক্ষম হবেন অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকের সমুদয় সুবিধা পাবেন। জনাব কাদের ক্যাটাগরিকেলি বলেন, বিএফসিইউ থেকে বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা ক্রয়ের ঋণের সুদ হবে প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম। তিনি আরো জানান, দাতা-সদস্যগণের অঙ্গিকার পত্র সাবমিটের পরই কুইন্সে বিএফসিইউ’র সদর দফতর স্থাপিত হবে এবং সামনের এক বছরের মধ্যে কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কসে ৫টি শাখা খোলা হবে। এরমধ্যদিয়ে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর কর্মসংস্থানের পথও সুগম হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি স্টেট প্রশাসন থেকে পাওয়া গেছে।

জনাব মুহাম্মদ কাদের আরো বলেন, “আমি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় বাস করছি এবং দেখেছি কীভাবে আমাদের অনেকেই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবার প্রধানরা ন্যায্যভাবে হালাল লোন, অটো লোন, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বাস্তবতা থেকেই আমার মধ্যে এই উদ্যোগের জন্ম। আমি চেয়েছি এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, যা হবে আমাদের মানুষের দ্বারা, আমাদের মানুষের জন্য এবং আমাদের মানুষের মালিকানায়।”
তিনি আরো জানান, ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’ একটি সদস্য-ভিত্তিক সমবায় ব্যাংক, যেখানে প্রতিটি সদস্যের সমান অধিকার থাকবে এবং মুনাফা সদস্যদের মাঝে বণ্টন হবে। এখানে ঋণপ্রাপ্তি হবে সহজ, স্বচ্ছ ও হালাল প্রক্রিয়ায়। সদস্যরা ৩% থেকে ৬% সুদে গাড়ি, ব্যবসা বা হোম লোন নিতে পারবেন, যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক ও লাভজনক।
উদ্যোক্তা জানান, নিউ ইয়র্কের জামাইকা হিলসাইড অ্যাভিনিউতে হবে বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি এলাকায় শাখা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের আর্থিক সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের কমিউনিটি প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠায়। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে এই অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন আমাদের সেই সক্ষমতা দেবে—আমাদের সঞ্চয় রক্ষা করতে, সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ভিত্তি গড়ে তুলতে।”
জনাব কাদের তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমি আজকের দিনটিকে একটি নতুন যাত্রার সূচনা হিসেবে দেখছি। আমরা যদি সবাই একত্রিত হই, আমাদের সম্মিলিত মেধা, শ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে এই ব্যাংকটিকে বাস্তবায়িত করি—তাহলে আমরা কেবল আর্থিকভাবে শক্তিশালী হব না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারব এক গর্বিত উত্তরাধিকার। এটি হবে আমাদের ব্যাংক, আমাদের কমিউনিটি এবং আমাদের গর্ব।”
অনুষ্ঠানে ঘোষিত পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে রয়েছেন: শাহ শহীদুল হক, সিফা আমিন, মিনারা মাহমুদিন , মাহাফুজ আনিসুর রহমান, সালাউদ্দিন আহমেদ এছাড়াও প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন:জে মোল্লা সানি, আনায়েত মুনশি, আব্দুল মান্নান, রিমি ভুইয়া, বদরুল হক আজাদ, মো. সোলাইমান, জাহাঙ্গীর আলম জয় এবং আরও অনেকে, যারা নীরবে-নিভৃতে এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

এ সময় বিএফসিইউ’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণকেও পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এরা হলেন শাহ শহীদুল হক, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কামরুল, সিফা আমিন, মিনারা মাহমুদিন, মাহাফুজ আনিসুর রহমান, সালাউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন: জে মোল্লা সানি, এনায়েত মুনশি, আব্দুল মান্নান, রিমি ভুইয়া, বদরুল হক আজাদ, মো. সোলাইমান, জাহাঙ্গীর আলম জয় প্রমুখ। তারা সকলেই ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’ তথা বিএফসিইউ’র সিইও মোহাম্মদ কাদের সিআইপি আরো বলেন, “আজকের এই মুহূর্তটি কেবল আমার জন্য নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও এক গর্বের দিন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বাস করলেও আমাদের নিজস্ব কোনো পূর্ণাঙ্গ ফেডারেল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। অনেক কমিউনিটি বহু আগেই নিজেদের জন্য ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। অবশেষে আজ আমরা সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল ক্রেডিট ইউনিয়ন এডমিনিস্ট্রেশন তথা এনসিইউএ থেকে নাম ক্লিয়ারেন্স এবং প্রি-অ্যাপ্রুভাল পেয়েছি। এটি কোনো সাধারণ অনুমোদন নয়, এটি একটি আইনানুগ, স্বীকৃত এবং ভবিষ্যতের জন্য সুসংহত আর্থিক ভিত্তি। এখন আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে ৩০০ জন ফাউন্ডিং মেম্বার সংগ্রহ করা এবং সেইসাথে মূলধন সংগ্রহ সম্পন্ন করে পরবর্তী ধাপে যাওয়া। আমি সবাইকে এই ঐতিহাসিক যাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।” কাদের সিআইপি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “আমি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় বাস করছি এবং দেখেছি কীভাবে আমাদের অনেকেই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবার প্রধানরা ন্যায্যভাবে হালাল লোন, অটো লোন, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বাস্তবতা থেকেই আমার মধ্যে এই উদ্যোগের জন্ম। আমি চেয়েছি এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, যা হবে আমাদের মানুষের দ্বারা, আমাদের মানুষের জন্য এবং আমাদের মানুষের মালিকানায়।”